নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ জুলাই, ২০১৬ ০৪:১৬

এমন কান্না বুঝি গ্রেট রোনালদোকেই মানায়!

ফাইনালে কাঁদতে চেয়েছিলেন রোনালদো। কেঁদেছেন! একবার নয়, অভিব্যক্তি প্রকাশের অনুষঙ্গ হিসেবে দুই-দুইবার। এক ম্যাচে দুই অর্থের দুই কান্নার এমন ইতিহাস কতবার কে কেঁদেছে তার সবটা হয়ত উল্লেখ নাই, কিন্তু রোনালদোর এ কান্না লিখিত হবে ইতিহাসরূপে!

ম্যাচের যখন মাত্র চব্বিশ মিনিট, তখন প্রথম কেঁদেছিলেন রোনালদো। এ কান্নায় অপ্রাপ্তির আশঙ্কাজনিত হাহাকার ছিল, আর ম্যাচ শেষের অন্য কান্নায় ছিল ইউরোপ সেরা খেতাব নিজের দেশকে উপহার দেওয়ার কান্না।

প্রথমার্ধের চব্বিশ মিনিটে ভয়ঙ্কর এ ট্যাকলে আহত হয়ে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার যে কান্না ছিল ১০৯ মিনিটে এডেরের গোলে এগিয়ে যাওয়ার কান্নার মধ্যে ছিল কয়েক লক্ষ মাইলের ব্যবধান। বিশ্বের সবচাইতে সুখী ফুটবলারের এমন কান্না করতে চায় তাবৎ ফুটবলাররাই। রোনালদো পেরেছেন, দেশকে শিরোপা জিতিয়ে দিতে পেরেছেন। সমসাময়িক কজন ফুটবলারই পারে নিজের দেশকে এভাবে চ্যাম্পিয়ন করতে।

সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় শুরু হওয়া ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিক ফ্রান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রোনালদোর পর্তুগাল। এটা পর্তুগালের প্রথম ইউরো জয়, একই সাথে দেশকে জেতানো রোনালদোর প্রথম শিরোপা। এর আগে ২০০৪ সালেও একটা সুযোগ এসেছিল রোনালদোর সামনে, কিন্তু সেবার পারেন নি। গ্রিসের কাছে হেরে গিয়েছিল পর্তুগাল।

ক্লাব ফুটবলে অনেক শিরোপা জিতেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এ ফুটবলার। আক্ষেপ থেকে যেত যদি না নিজের দেশকে কোন শিরোপা না জেতান। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সে আক্ষেপ এখন আর নেই, কারণ নিজের দেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে পেরেছেন।

হ্যাঁ, ফাইনালের ১০০ মিনিটের বেশি সময় হয়ত ছিলেন না মাঠে, কিন্তু তিনিই যে দলের প্রাণভোমরা। মাঠের বাইরে থেকেও যেন থেকেছেন মাঠে, সর্বক্ষণ।

ফাইনালের আগে স্বপ্ন পূরণের বিষয়টি উল্লেখ করে রোনালদো বলেছিলেন, “ক্লাব আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমি সবকিছু জিতেছি, পর্তুগালের হয়ে কিছু জেতাটা হবে দারুণ এক অর্জন।”

“আমি বিশ্বাস করি যে এটা সম্ভব, আমার সতীর্থরাও তাই করে এবং পুরো দেশই এটা বিশ্বাস করে। আমাদের ভাবনাটা ইতিবাচক থাকতে হবে কারণ, আমি বিশ্বাস করি, রোববারই প্রথমবারের মতো পর্তুগাল বড় কোনো শিরোপা জিতবে।”

পেলে, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, জিনেদিন জিদান, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, মিশেল প্লাতিনি…কিংবদন্তি এই ফুটবলারদের সবাই আন্তর্জাতিক ফুটবলে সফল। এদের সবাই দেশের হয়ে শিরোপা জয়ের উৎসবে মেতেছিলেন। এরা সবাই তাদের প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন। আর এ সময়ের অন্যতম সেরা রোনালদো ফুটবল গ্রেটদের কাতারে নাম লেখাবেন না তা কি হয়? নিজের দেশ শিরোপা জিতিয়ে রোনালদো প্রমাণ করে দিলেন কেন তিনি এ গ্রহের অন্যতম সেরা ও সফল এক ফুটবলার।

ফেভারিটদের মধ্যে থেকেই এবারের টুর্নামেন্ট শুরু করে স্বাগতিক ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বে নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে না পারলেও নকআউট পর্বে অসাধারণ খেলে ফাইনালে উঠে দিদিয়ে দেশমের দল। বিশেষ করে কোয়ার্টার-ফাইনালে আইসল্যান্ডকে ৫-২ গোলে উড়িয়ে দিতে অসাধারণ ফুটবল খেলে তারা। এর পর সেমি-ফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে ২-০ গোলে হারায় তারা। দুটি গোলই করেন ৬ গোল নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পথে বেশ এগিয়ে থাকা অঁতোয়ান গ্রিজমান।

অন্যদিকে গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই ড্র করে সেরা চারটি তৃতীয় স্থানের দলের একটি হয়ে নক-আউট রাউন্ডে উঠে পর্তুগাল। শেষ ষোলোতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল পায়নি। অতিরিক্ত সময়ে রিকার্দো কারেসমার গোলে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে তারা। এর পর পোল্যান্ডকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেন রোনালদোরা।

সেমি-ফাইনালে ওয়েলসের বিপক্ষে আলো ছড়িয়ে ২-০ ব্যবধানে ম্যাচ জেতে রোনালদোর পর্তুগাল। নিজে যেমন গোল করেছিলেন, তেমনিভাবে গোল করিয়েছিলেন নানিকেও। ফাইনালে পুরো সময় না খেললেও চ্যাম্পিয়ন রোনালদোর পর্তুগাল চ্যাম্পিয়ন হয় স্বাগতিক ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কেঁদেছেন, কাঁদিয়েছেন; এমন কান্না বুঝি কেবল গ্রেট এ ফুটবলারকেই মানায়!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত