ক্রীড়া প্রতিবেদক

০৩ নভেম্বর, ২০১৮ ১৯:৩৭

প্রথম দিনে সমানে সমান লড়াই

চতুর্থ উইকেট জুটিটা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। পিটার মুরকে নিয়ে ৭২ রানের জুটি গড়েছিলেন শন উইলিয়ামস। উপায় না দেখে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বল হাতে নিলেন। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য। ৮৮ রানে উইলিয়ামসকে স্লিপে মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে স্বস্তি এনে দিলেন দলকে। তবে প্রথম দিনে বাংলাদেশের এটাই ছিল শেষ সাফল্য। প্রথম দিনে ৯১ ওভার বল করেও জিম্বাবুয়ের ৫টির বেশি উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটিং লাইনআপের অর্ধেকটা হারিয়ে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ২৩৬। ১২২ বল খেলে মুর অপরাজিত আছেন ৩৭ রানে।

মধ্যাহ্ন বিরতির আগ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের ইনিংস দাঁড়িয়েছিল হ্যামিল্টন মাসাকাদজার ব্যাটে। দলের ৮৫ রানে অধিনায়কের অবদানই ছিল ৫২। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাটিং করছিলেন। বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু বিরতির পর অধিনায়ককে দুশ্চিন্তার হাত থেকে রেহাই দিয়েছেন আবু জায়েদ। মাসাকাদজাকে তিনি এলবির ফাঁদে ফেলেন দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারেই। মাসাকাদজা ফিরেছেন ওই ৫২ রানেই।

জিম্বাবুয়ের অধিনায়ককে ফেরানোর পরেও দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ ছিল। শন উইলিয়ামস আর সিকান্দার রাজা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে এ দুজন তুলে ফেলেছিলেন ৪৪ রান। ঠিক তখনই আঘাত হানেন অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম। তাঁর বলে ব্যাট আর প্যাডের ফাঁক দিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন সিকান্দার। আউট হওয়ার আগে তাঁর সংগ্রহ ১৯।

টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মোটামুটি ভালোই হয়েছিল জিম্বাবুয়ের। ওপেনিংয়ে মাসাকাদজার সঙ্গে ব্রায়ান চারি ৩৫ রান তুলে ফেলেছিলেন। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের বলে একটা বাজে শট খেলেই আউট হন চারি। এরপর তাইজুল ফেরান ব্রেন্ডন টেলরকে। নাজমুল হোসেন শর্ট লেগে দাঁড়িয়ে টেলরের যে নিচু ক্যাচটি নেন, সেটি এক কথায় দুর্দান্ত।

শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন বাংলাদেশ কিংবা জিম্বাবুয়ে, কাউকেই এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই। ২৩৬ রান তুলে দিন শেষ করেছে সফরকারীরা। তবে বাংলাদেশও তো ফেলে দিয়েছে ৫ উইকেট।

উইকেট সময়ের সঙ্গেই ভাঙবে। টসটা ছিল তাই মহাগুরুত্বপূর্ণ। সিরিজে প্রথমবারের মতো টস ভাগ্য গিয়েছে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার পক্ষে। ব্যাটিং নিতে কোন ভুল করেননি তিনি। দিনের পুরো খেলার ছবিও বলছে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক নিয়েছিলেন সঠিক সিদ্ধান্তই। মাঝে মাঝে কিছু বল লাফিয়েছে, ঘুরেছেও বটে। তবে প্রথম দিন খুব বিষাক্ত হয়নি ব্যাটসম্যানদের খেলা। বরং আরেকটু নিবেদন থাকলে অন্তত দুই উইকেট কম হারাতে পারত জিম্ববুয়ে।

হেমন্তে দিনের ব্যপ্তী ছোট হয়ে আসে। এই সিরিজে খেলা আরম্ব হওয়ার সময় প্রথমে সাড়ে নটা থাকলেও পরে সেটা বদলে করা হয় সকাল ১০টা। দিনের শেষ দিকে তাই জ্বালাতে হলো ফ্লাডলাইট। শেষের আধঘন্টা কৃত্তিম আলোতেই ব্যাট করতে হয়েছে সফরকারীদের। তবে এই সময়ে খুব বেশি বিপদে পড়েনি তারা।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে উইকেট টার্নিং হবে, এটা জানা কথাই। এই উইকেটে এক পেসার নিয়েও নামতে পারে বাংলাদেশ, এমন ইঙ্গিতও আগের দিন দিয়ে রেখেছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সেটাই হলো। আবু জায়েদ রাহি এবং আরও তিন স্পিনার নিয়ে নেমে পড়ল বাংলাদেশ। টেস্টের দ্বিতীয় ওভারেই তাই বল করতে এলেন তাইজুল ইসলাম।

পুরো ৯০ ওভারের মধ্যে পেসাররা বোলিং করেছেন  ২২ ওভার। এরমধ্যে রাহি ১৮ ওভার , অভিষিক্ত পেস অলরাউন্ডার আরিফুল হক কেবল চার ওভার।  বাকি সবই স্পিনারদের দখলে। স্পিনারদের মধ্যে সেরা তাইজুলই। সবচেয়ে বেশি ২৭ ওভার হাত ঘুরিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি।

ভালো শুরু পাওয়ার খানিক পর ওই তাইজুলেই কুপোকাত জিম্বাবুয়ে। ব্রায়ান চারি দারুণ দুই বাউন্ডারিতে দিচ্ছিলেন ভাল কিছুর ইঙ্গিত। প্রথমে তার উইকেট গেল কুৎসিত এক শটে।  হুট করে টি-টোয়েন্টি মেজাজের স্লগ সুইপ করতে গেলে হয়েছেন বোল্ড।

ওয়ানডের ছন্দটা ধরে রাখতে পারেননি ব্র্যান্ডন টেইলর। তাইজুলকে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৬ রান করে। টিকে ছিলেন অধিনায়ক মাসাকাদজা। অনেকদিন পর টেস্টে ফেরা এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান দিচ্ছিলেন আস্থা। লাঞ্চের পর পরই লোকাল বয় আবু জায়েদ রাহির ভেতরে ঢুকা বলে ফিফটি পেরিয়েই থামেন তিনি।

উইলিয়ামসের সঙ্গে ৪৪ রানের জুটির পর নাজমুল ইসলাম অপু সোজা বলে বোল্ড হন সিকান্দার রাজা। উইলিয়ামস যেভাবে খেলছিলেন সেঞ্চুরিটা মনে হচ্ছিল পেয়েই যাচ্ছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ভীষণ সফল উইলিয়ামস। কিন্তু এর আগে কখনো ‘প্রিয় প্রতিপক্ষ’ এর বিপক্ষে টেস্টে নামা হয়নি তার। প্রথমবার নেমেই ওয়ানডের ছন্দ দেখালেন তিনি।

১৭৩ বলে ৯ চারে ৮৮ রান করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আচমকা লাফানো বলে ফেরেন উইলিয়ামস। শেষ বিকেলে আর কোন বিপর্যয়ে পড়েনি জিম্বাবুয়ে। রেজিস চাকাভাকে নিয়ে স্বস্তিতেই দিন পার করেছেন পিটার মুর।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত