তাহিরপুর প্রতিনিধি

০৬ এপ্রিল, ২০২১ ২১:৩১

‘ছেলেটা কইছে মা আমি ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাইছি, আমি মনের সুখে কান্দিছি’

ডাক্তার হয়ে মা বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চায় তাহিরপুরের প্রণয়

প্রণয় বর্মণ এবারের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৪৩৬ নম্বরে স্থান পেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের খলাকাটি গ্রামের পাথর শ্রমিক মনি বর্মণ ও মৎস্যজীবী নারায়ণ চন্দ্র বর্মণের ছেলে প্রণয় বর্মণ। অভাব আর অনটনের সংসারে ছেলে প্রণয় বর্মণের এই সাফল্যে খুশি পরিবারের সবাই। তবে ছেলের মেডিকেলে পড়ার খরচ নিয়ে চিন্তিত মনি বর্মণ ও নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ।

জানা যায়, প্রণয় বর্মণের মা ও বাবার ঘাম ঝরানো শ্রমে জীবিকা চলে ৪ জনের সংসারের। চলে ছেলের পড়াশুনার খরচও। বড় মেয়েটির বিয়ে দিয়েছেন। প্রণয় ও তার এক ভাই সংসার চলে এখন কোন রকমে। জোড়াতালি দিয়ে চলেছিল তাদের লেখাপড়াও। তবে প্রণয়ের এই স্বপ্ন জয়ের পথে বাধা এখন অর্থের। তবে হাল ছাড়তে রাজি নয় প্রণয়।

প্রণয় জানায়, তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫পাওয়ার পর বাবা-মা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার দেনা করে তাকে সিলেট সরকারি কলেজে ভর্তি করান। ওখানে পড়াশুনার সময় সে টিউশনি করতে চেয়েছে, কিন্তু তার বাবা-মা তাকে টিউশনি করতে দেননি। অনেক পরিশ্রম করে মাসে মাসে কিছু টাকা পাঠিয়েছেন। খুবই কম খরচ করে সিলেট শহরের মেজরটিলার একটি ম্যাচে থেকেছে সে। নিজের অবস্থার কথা জানানোয়, প্রাইভেট পড়ার সময় কলেজের কোন শিক্ষকই তার কাছ থেকে কোন টাকা নেননি।

এখন কীভাবে পড়াশুনার খরচ চালাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রণয় বললো, কোনভাবে ভর্তি হতে পারলে টিউশনি করেই খরচ চালাবো আমি। আমি বাবা-মা’র স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।

শিক্ষার্থী প্রণয় বর্মণ জানান,রাত ১০ টায় মাকে (মনি বর্মণকে) মেডিকেলে ভর্তির খবর জানালে বিছানা থেকে ওঠে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছেলের সাফল্যের কথা জানিয়েছেন।

এদিকে,নিজের ছেলের এমবিবিএস ভর্তি হবার সুযোগ পাবার আনন্দের কথা জানাতে গিয়ে পাথর শ্রমিক মনি বর্মণ বলেন, ভোর ৭টায় ক্রাশর মেশিনও যাই এর জন্য রাতে সকাল সকাল ঘুমাই যাই। কালকে রাইত ১০টায় যখন আমার ছেলেটায় কইছে মা আমি ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাইছি,আমি মনের সুখে কান্দিছি,আমার ছেলেও কান্দে,তার বাপে বুঝায় কাইন্দো না-উপরওয়ালায় চাইবা আমরার দিকে। সকাল ৭টায় আমি কামও গেছি,তার বাপ খুশিতে আজকে মাছ ধরাত গেছইন না। আমার ছেলের জন্য আপনারা আশীর্বাদ করবেন।

ভোর বেলা ওঠে রান্না-বান্না করে পাথর টানার কাজে গিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭ টায় মনি বর্মণ বাড়ি ফিরে চাল কিনে আনে এরপর দুই ছেলে ও তাদের বাবার জন্য রান্না-বান্না করে। এভাবে প্রতিদিনই সংগ্রাম করছেন জানিয়ে বললেন, ক্রাসার মেশিনে কাজ করার সময় মাথায় নাকে পাথরের আঘাত পেয়েছি। ক্রাসার মেশিনের মালিক এবং অন্যান্যরা ওষুধের টাকা দিয়েছেন। আমার ছেলেকে ডাক্তার দেখানোর জন্যই উপরওয়ালা আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন। আমি কষ্ট সহ্য করবো তার সাফল্য দেখার জন্যই।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত