জুড়ী প্রতিনিধি

১০ এপ্রিল, ২০২১ ১৯:৩০

বিতর্কিতদের দিয়ে জুড়ী উপজেলা আ. লীগের কমিটি গঠনের অভিযোগ

সম্প্রতি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি নিয়ে তৃণমূলে চলছে নানা আলোচনা, সমালোচনা। কমিটিতে বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সন্তান ও অনুপ্রবেশকারী অনেককে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এনিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় নেতারা।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রথম  কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।সেখানে সভাপতি  পদে একক প্রার্থী থাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুল হোসেনকে সভাপতি এবং কাউন্সিল ছাড়াই ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে মাসুক আহমদকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এতে সাধারণ সম্পাদক পদের অন্যান্য প্রার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর প্রায় দেড় বছর পর লকডাউনের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশিত হয়েছে। এ কমিটি নিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে নানা সমালোচনা করছেন।

তাদের অভিযোগ, ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন ৪ জন। এর মধ্যে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন এরকম আছেন ১ জন রয়েছেন। জামায়াতের আছেন একজন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুল হোসেনের স্ত্রী শাহানা চৌধুরীকে করা হয়েছে শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক, ভাতিজা সাবেক যুবদল নেতা জাহেদ হোসেন তাজিনকে সদস্য করা হয়েছে। উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদের স্ত্রী শিরিন আক্তারকে করা হয়েছে সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং স্ত্রীর বড় ভাই শাহীন আহমদকে করা হয়েছে সদস্য। তিনি ছাত্রজীবনে সরাসরি শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জেলা যুবলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার পরও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে রিংকু রন্জন দাস কে।

মাত্র দেড় বছর আগে ঘোষিত হওয়া (পূর্ণাঙ্গ কমিটি) উপজেলা যুবলীগের সহ সভাপতি আব্দুস সাত্তার কে করা হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অপর সহ সভাপতি শরদেন্দু দাস শেখুকে দেওয়া হয়েছে দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব,উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মামুনুর রশীদ সাজু, সদস্য জমসেদ আহমদ এবং সাধারণ সম্পাদক শেখরুল ইসলামকেও করা হয়েছে সদস্য।

একই ব্যক্তি যুব সংগঠন এবং অভিভাবক সংগঠনে থাকার বৈধতা নেই আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের গঠনতন্ত্রে। সিনিয়র নেতা মহান মুক্তিযুদ্ধে পঙ্গুত্ব বরনকারী আব্দুস শহীদ চৌধুরী খুশিকে করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম কাজল বলেন, কোন মাপকাঠিতে পদ-পদবি প্রদান করা হয়েছে, তা বোধগম্য হয়নি। রাজনৈতিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, বয়স ও মেধায় পিছিয়ে থাকা অনেককে অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। আবার তুলনামূলক যোগ্য ও অভিজ্ঞ অনেককে কম গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রদান করা হয়েছে। এটা সুস্থ রাজনীতিচর্চার লক্ষণ নয়।

পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সাবেক সভাপতি গোপিকা অধিকারী বলেন, ১৯৬৩ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম। সাবেক এমপি মরহুম তৈমুছ আলীর সাথে আওয়ামী লীগের দুর্দিনে সব সময় মাঠে ছিলাম অথচ জীবনের শেষ সময় আমাকে সদস্যও করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নেতা বলেন, একটা সিন্ডিকেট তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে কমিটি করেছে। কমিটিতে ত্যাগী, পরীক্ষিত অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে। যুবলীগের পদধারী নেতাদের আওয়ামী লীগে না এনে তৃণমূল থেকে নেতা বানানো যেত।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাউন্সিলের সময় ভোট না দিয়ে গ্রুপিং কমিটি করা হয়েছিল, সেই সময় ভোট দিলে আমি ১২ আনা ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক হতাম। সেই গ্রুপিং বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমাকে ২ নং সাংগঠনিক করা হয়েছে অথচ আমার কর্মীদেরকে যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সহ অনেক কে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেওয়া হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, সাবেক এমপি মরহুম তৈমুছ আলীর পুত্র, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুবের হাসান জেবলু বলেন, কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত ছিলো উপজেলার ঘোষিত সভাপতি ও সম্পাদক ৬ ইউনিয়নের সভাপতি এবং সম্পাদককে নিয়ে বসে কমিটি করবেন। তা না করে কমিটি করা হয়েছে। তৃণমূলের ক্ষোভ আশা করি নেতৃবৃন্দ বুঝবেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুল হোসেনের মোবাইলে অনেক বার কল করলে ও সাড়া পাওয়া যায় নি।

সাধারন সম্পাদক মাসুক আহমদ এ প্রতিবেদককে বলেন, জেলা কমিটি এবং স্থানীয় মন্ত্রী মহোদয় যে তালিকা করেছেন তা দিয়েই কমিটি হয়েছে। এর বাহিরে আমি কিছু মন্তব্য করতে পারবো না।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মিসবাহুর রহমান জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি, সম্পাদক যে কমিটি জমা দিছেন আমরা সেটা অনুমোদন করেছি। জেলায় বসে তো দেখতে পারি না জুড়ীতে কে কি করে? বরং কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত