নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ মার্চ, ২০১৬ ০০:২৩

যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর সহচর থেকে হঠাৎ ‘মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক’ রাগীব আলী

এরশাদ সরকারের আমলে একবার সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিলো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে। এসময় সাঈদীকে সিলেটে প্রতিরোধেরও ডাক দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা-জনতাসহ প্রগতিশীল শক্তির নেতৃত্বে সর্বস্তরের সিলেটবাসীর এই প্রতিরোধ কর্মসূচি মোকাবেলা করার সাহস পায়নি জামায়াত-শিবির। তখন সাঈদীর পাশে দাঁড়ান শিল্পপতি রাগীব আলী।

অবাঞ্ছিত সাঈদীকে বিমানে সিলেট নিয়ে আসা, নিজ এলাকা কামালবাজারে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা এবং নিজ মালিকানাধীন মালনীছড়ায় আতিথেয়তার ব্যবস্থা করেন রাগীব আলী। রাগীব আলীর পৃষ্টপোষকতায় সিলেটে আসেন যুদ্ধাপরাধী সাঈদী।

কেবল সাঈদীর পৃষ্ঠপোষকতা নয়, বিভিন্ন সময়ই জামায়াত-শিবিরসহ মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আবির্ভূত হন এই ধনকুবের। অথচ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু হলে হঠাৎ 'প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক' বনে যান রাগীব আলী। সেসময় তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারাও সংবর্ধনা দেন রাগীব আলীকে।

অভিযোগ রয়েছে, রাগীব আলীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে এই সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন সিলেট মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন নেতারা। রাগীব আলীকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সংবর্ধনা আর নিজ মালিকানাধীন স্থানীয় পত্রিকার প্রচারণায় হঠাৎ 'প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক' বনে যাওয়া রাগীব আলীর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।


রাগীব আলীর স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানসংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায় ইন্টারনেটভিত্তিক মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়াতেও। এর বাংলা সংস্করণে উল্লেখ রয়েছে, ‘রাগীব আলী সম্পর্কে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে থেকে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করা, যুদ্ধাপরাধীদের সহায়তা করা ও হিন্দুদের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল প্রভৃতি।’

অনুসন্ধানে দেখা যায়, জামায়াতের সংগঠন আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাগীব আলী।

সেই রাগীব আলীর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক দাবি করা নিয়ে বিস্মিত মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বলেন, রাগীব আলী আপাদমস্তক একজন স্বাধীনতাবিরোধী। মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন দেশবিরোধী ও রাজাকার-আলবদরদের সহযোগী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সিলেট ও বিলেতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তিনিই পরিচয় করিয়ে দেন।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, পৃষ্ঠপোষক দূরের কথা, রাগীব আলী জামায়াত-শিবির ছাড়াও জঙ্গিদের অর্থ যোগানদাতা। সঠিক তদন্ত হলে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।

জানা যায়, দেশে মানবতাবিরোধীদের বিচার নিয়ে তোড়জোড় শুরু হলে নামের আগে ‘প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক’ বিশেষণ ব্যবহার শুরু করেন রাগীব আলী। এসময় দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা ও পুনর্বাসনেও কিছু কাজ করেন এই ধনকুবের।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করলেও রাগীব আলী জীবনভর স্বাধীনতাবিরোধী ও জামায়াত-শিবিরকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বলেই অভিযোগ রয়েছে। জামায়াত অনুসারী ও মৌলবাদী শিল্পী-সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় দেখা গেছে রাগীব আলীকে।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত