আব্দুল আলিম শাহ

০৯ মে, ২০১৬ ০১:১৪

হাতির মতো পা!

গরীবের ঘোড়া রোগ বলে একটা কথা চালু আছে বাংলা ভাষায়। রিজিয়া বেগমও গরীব। তবে তাঁর রোগের নাম এলিফানটাইন্স। বাংলায় যাকে বলা হয় হাতির মতো পা।

হাতির পা-ও অবশ্য এতোটা মোটা হয় না, ফুলে যতোটা মোটা হয়েছে রিজিয়ার বেগমের পা। প্রথম দেখায় দেখায় ভয় জাগে, এরপরে বিস্ময়। এই বিরল রোগের কারণে রিজিয়ার হাঁটাচলা একেবারে বন্ধ। প্রায় ১৮ বছর ধরে গৃহবন্দি।

রিজিয়াদের বাড়ি সিলেটের ওসমানী নগর থানার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের এওলাই গ্রামে। বয়স প্রায় ৪০। দুই সন্তানের জননী। স্বামী আব্দুল মালিক চিশতি দিনমজুর।

রিজিয়া বেগম জানান, প্রায় ১৮ বছর আগে হঠাৎ করে তাঁর পা ফুলতে শুরু করে। দিনদিন তা অস্বাভাবিক রূপ ধারণ করে।

দরিদ্র আব্দুল মালিক প্রথমদিকে স্ত্রীকে ঝাড়ফুঁক করান, কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। তাতে কাজ হয় না। পা আরো ফুলতে থাকে। এরপর নিয়ে আসেন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেন। তাতেও উন্নতির বদলে অবনতিই হতে থাকেন রিজিয়ার। ফের স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে যান হাবিবুর।

ধারকর্জ করে বছর পাঁচেক আগে রিজিয়াকে নিয়ে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে যান আব্দুল মালিক। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব বলেও জানান। তবে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ২২ লাখ টাকা। দরিদ্র দিনমজুরের এতো টাকা জোগাড় করার সাধ্য কই! সে সাধ্য তাঁর হয় না, ফলে চিকিৎসা হয় না রিজিয়ারও। রিজিয়ার পা আরো ফুলতে থাকে। সংসারে আরো বেশি বোঝা হয়ে ওঠেন তিনি।

আব্দুল মালিক চিশতি বলেন, 'তার (রিজিয়ার) এক পায়ের ওজনই প্রায় দুই মণ হবে। তাকে নড়াচড়া করাতেও তিন জন মানুষ লাগে। বাথরুমে নিয়ে যেতে হলেও তিনজন প্রয়োজন। আমি গরীব মানুষ। সারাদিন স্ত্রীর সেবায় থাকলে খাবো কি? তাছাড়া এতোদিন ধরে একটা মানুষকে কি এভাবে টানাহ্যাঁচড়া করা যায়?'

তিনি বলেন, ২২ লাখ টাকার জন্য তার চিকিৎসা করাতে পারছি না। এই টাকা পেলে হয়তো সে সুস্থ হয়ে যেতো।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমানেরও এমন মত। তিনি বলেন, এই রোগ বিরল হলেও দেশেই এর চিকিৎসা সম্ভব। তবে চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল।

রিজিয়া বেগম অবশ্য আর সুস্থ হওয়ার স্বপ্ন দেখেন না। ২২ লাখ টাকা কে দেবে তাকে! ঘরের বারান্দায় বসে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেন, 'এখন মরলেই বাঁচি। নিজেরও শান্তি নাই। পরিবারের সবাইও আছে অশান্তিতে।'

একটু পরেই ছোট্ট নাতি হামাগুড়ি দিতে দিতে এগিয়ে আসে রিজিয়ার পাশে। পা নড়ে না, তবু পিট বাঁকিয়ে নাতিকে কাছে টেনে আনেন। নাতির পিটে হাত বুলাতে বুলাতে হেসে ওঠে রিজিয়ার ঠোঁট। তখন চোখে তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন ফিরে আসে। ফিরে সুস্থ হওয়ার সাধ।

রিজিয়া সুস্থ হবেন তো?

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত