নিজস্ব প্রতিবেদক :

১৫ মে, ২০১৬ ১২:২১

রাগীব আলীর দখল সাম্রাজ্যে হানা, তারাপুর চা বাগান উদ্ধার

রাগীব আলীর দখল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সিলেটের তারাপুর চা বাগান। রোববার সকালে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। বাগানটি উদ্ধার করে দেবোত্তোর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

তবে রোববারের অভিযানে কেবল চা বাগান ও চা বাগান সংশ্লিষ্ট স্থপনা উদ্ধার করা হয়। বাগান ধ্বংস করে গড়ে উঠা অন্যান্য স্থাপনা অপসারণের জন্য ছয় মাসের সময় বেঁধে দিয়েছে প্রশাসন।


এই চা বাগান দখল করে রাগীব আলী নিজের নামে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনসহ ৩৩৭ টি প্লট তৈরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এসব প্লটে গড়ে উঠেছে বহুতল আবাসন ও বিপণী বিতান।

আরও পড়ুন- যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর সহচর থেকে হঠাৎ ‘মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক’ রাগীব আলী


অভিযান পরিচালনাকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মোশারফ হোসেন জানান, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে সেবায়েতকে বাগানের দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই দেবোত্তোর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত সিলেটটুডে টেয়ােন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৪২২.৯৬ একর ভূমির বাগানের মধ্যে আজ আমাকে ৩২৩ একর ভূমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আমার প্রথম কাজ হবে দেবোত্তোর সম্পত্তি এই বাগানের মধ্যে দেবতার প্রতীমা প্রতিষ্ঠা করা। দখলদাররা বাগানকে দেবতার প্রতিমা সরিয়ে ফেলেছিলো।


বাগান পরিদর্শন শেষে দুপুর দুইটায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাকে লিখিতখভাবে বাগানের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান পঙ্কজ।

পঙ্কজ এই সম্পত্তির সেবায়েত রাজেন্দ্র গুপ্তের ছেলে। রাজেন্দ্র একাত্তরে মুক্তুযুদ্ধে শহীদ হন। রাজেন্দ্র গুপ্তের বাবা বৈকুন্ঠ চন্দ্র গুপ্ত তারাপুর চা বাগানটি দেবতার নামে দান করেন।

প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা মূল্যের তারাপুর চা বাগান দীর্ঘদিন ধরে শিল্পপতি রাগীব আলীর দখলে ছিলো। গত ১৯ জানুয়ারি উচ্চ আদালত রাগীব আলী প্রতারণামূলকভাবে বাগান দখল করেছেন উল্লেখ করে তা উদ্ধারে নির্দেশ দেন।

এই আদেশের প্রেক্ষিতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে  আজ রোববার (১৫ মে)  সকাল ১১টায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে উদ্ধার অভিযানে যান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মোঃ.মাহবুবুর রহমান।

এসময় রাগীব আলীর আইনজীবী বন্ধু গোপাল দাস ও গোলাম সোবহান চৌধুরী দিপন সময় প্রার্থণা করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তা নাকচ করে দেন।

জানা যায় আদালতের রায়ে, চা-বাগানে গড়ে তোলা আবাসিক প্রকল্প এবং সম্পত্তির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে অবৈধ, এ বাগানকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়াসহ ১৭টি নির্দেশ দিয়ে রায় প্রদান করা হয়।

তারাপুর চা বাগানে নির্মিত সব অবকাঠামো ৬ মাসের মধ্যে অপসারণ করে সে জায়গায় চা বাগান করার আদেশ দেওয়া হয় এই রায়ে। রিট আবেদনকারীরা তা করতে ব্যর্থ হলে পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের সহায়তা নিয়ে স্থাপনা অপসারণের কথাও উল্লেখ করা হয় রায়ে। তবে এ খাতে ব্যয় হওয়া অর্থ জেলা প্রশাসক রিট আবেদনকারীদের কাছ থেকে গ্রহণ করবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, জেলা প্রশাসক আপিল বিভাগে প্রদত্ত রায়ের আদেশগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করবেন। রিট আবেদনকারীরা যদি এ আদেশ না মানে সে ক্ষেত্রে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। উপযুক্ত জায়গায় মেডিকেল কলেজটিকে স্থানান্তর করবেন। রিট আবেদনকারীদের সমস্ত ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করবেন এবং মেডিকেল কলেজের জন্য সাময়িক লীজ নেয়ার জন্য অর্থ প্রয়োজনে এই সব জব্দকৃত একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। রিট আবেদনকারীরা যদি চা বাগান পুন:নির্মাণে ব্যর্থ হন সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক একটি কমিটি গঠন করে এ কাজটি সম্পন্ন করবেন। এ বাবতে যে অর্থ ব্যয় হবে তা তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি থেকে আদায় করবেন।

এই রায়ে বলা হয়েছে, রাগীব আলী কর্তৃক সরকারের থেকে ক্ষতিপূরণ বাবত ৩০ লাখ ৭৬ হাজার ১৮৯ টাকা উত্তোলন সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত। এই আদেশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে আইনানুগ সেবায়েতের অনুপস্থিতে দেবীর নামে নির্ধারিত একাউন্টে উত্তোলিত টাকা জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন সুপ্রিমকোর্টের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

রায়ে আরো বলা হয়েছে, তারাপুর চা বাগান দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে কোনভাবে সেবায়েত বা সেবায়েতের মনোনীত ব্যক্তি কর্তৃক স্থানান্তরিত হতে পারবে না। অভিযুক্ত সেবায়েত কর্তৃক ৯৯ বছরের জন্য তারাপুর চা বাগানকে স্থানান্তর বা লীজ প্রদান করা সম্পূর্ণ ভাবে আইন বিরুদ্ধ। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক (ট্রাস্টের) দেবীর মূর্তি প্রথম স্থাপিত জায়গায় স্থাপিত হবে। রিট আবেদনকারী আব্দুল হাই ও রাগীব আলীকে তারাপুর চা বাগানের খালি জায়গায় দেবী মোতায়েনের কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ করতে আদেশে বলা হয়।

আপিল বিভাগের ওই রায়ে সেবায়েতের অনুপস্থিতিতে সিলেট শহরের ১০ (দশ) জন নেতৃস্থানীয় সেবায়েত বা পুরোহিতের পরামর্শক্রমে সেবায়েত নিয়োগ দানের জন্য বলা হয়েছে। রিট আবেদনের ১০ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত চা রপ্তানি বাবত আয়ের ৫ কোটি টাকা সেবায়েতের কাছে ফেরত প্রদানেরও নির্দেশ দেয়া হয়।

একই সাথে কোতোয়ালী থানার ১১৭ নং মামলাটি চালু করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত