রাজীব রাসেল

০৪ আগস্ট, ২০১৬ ২৩:২৩

বাড়ির নাম ‘পাখি বাড়ি’

বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়। এ যেন পাখির রাজ্য! চেনা-অচেনা হাজারো পাখির কলতানে মুখরিত বাড়ির ভেতরের বাগান। গাছে গাছে পাখিদের দল। তাদের নিজস্ব কথোপকথন মাতিয়ে রেখেছে পুরো বাড়িটি।

গ্রামের নাম ছালিয়া। সিলেট শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সালুটিকরে এর অবস্থান। এই ছালিয়া গ্রামেই নুরুদ্দিনের বাড়ি। প্রায় তিন একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই বাড়িটিকে লোকে চেনে নুরুদ্দিনের ‘পাখি বাড়ি’ নামে। দোতলা বাড়ি। বাড়ির সামনেই একটি পুকুর। পুকুরে আছে শান বাঁধানো ঘাট। পাখিদের বসার জন্য পুকুর জুড়ে বাঁশ পুঁতে দেওয়া। আর পুরো বাড়ি জুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গাছ।

নুরুদ্দিন ব্যক্তি উদ্যোগে নিজের বাড়িতে তৈরি করেছেন পাখির এই বিশাল অভয়ারন্য। মানুষ যখন নির্বিচারে পাখি নিধন করছে, তখন পাখিরাই নিশ্চিন্ত আবাস গড়ে নিয়েছে এই বাড়িটিতে। তবে হঠাৎ করেই তৈরি হয়নি এই পাখি নিবাস। এর পেছনে আছে নুরুদ্দিনের পাখিপ্রেমের গল্প।

নুরুদ্দিন বাজারে গেলেই পাখি কিনতেন। কখনো এক জোড়া, কখনো আবার চার-পাঁচ জোড়া। পাখি কিনে বাড়িতে এনে সেগুলোকে ছেড়ে দিতেন। সবাইকে বলতেন, “পাখির জায়গা খাঁচায় না, আকাশে।” কিছু পাখি উড়ে মিলিয়ে যেত আকাশে, আর কিছু পাখি থেকে যেত নুরুদ্দিনের বাড়ির গাছগাছালিতে। সেই থেকে যাওয়া পাখিদের দেখাদেখি আরো পাখি আসতে থাকে, ক্রমশ বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা। একসময় পাখিদের ভিড়ে নুরুদ্দিনের বাড়ি হয়ে যায় ‘পাখি বাড়ি’। পাখিদের নিরাপত্তায় নজর দেন নুরুদ্দিন। পাখি চুরি ঠেকাতে বাড়িতে বসান পাহারা।

পাখি বাড়িতে বক জাতীয় পাখিই বেশি। শীতে পরিযায়ী পাখিরাও আসে। পাখিরা সারাদিন বিলে খাবার খুঁজে সন্ধ্যায় নুরুদ্দিনের বাড়িতে এসে আড্ডা জমায়। তাই পাখি দর্শনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে বিকেল থেকে সন্ধ্যা।

পাখিপ্রেমী নুরুদ্দিন এখন বেঁচে নেই। নুরুদ্দিনের মৃত্যুর পর পাখি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর ছেলে এমদাদুল হক।

পাখিপ্রেমীদের জন্য একটি দারুন জায়গা নুরুদ্দিনের ‘পাখি বাড়ি’। পাখি ভালোবাসলে একবার ঘুরে আসতে পারেন পাখিদের এই অভয়ারণ্য থেকে। ফিরবেন মুগ্ধতা নিয়ে- এই আশ্বাসটুকু নির্দ্বিধায় দিতে পারি।

 

ছবিঃ বেলাল আহমেদ

 

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত