দেবাশীষ রনি

১১ আগস্ট, ২০১৮ ০৯:৫০

ধলাই নদের উৎসমুখ ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর ও উৎমাছড়া

ছবি- সুদীপ দাস

ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা সিলেটের সীমান্তবর্তী এক নদের নাম ধলাই। মেঘালয় পাহাড়ের ঝরনার পানি এই নদের জলপ্রবাহের উৎস। ধলাই নদের উৎসমুখই হচ্ছে সাদাপাথরের রাজ্য। পাহাড়ি ঢলে উৎসমুখে পাঁচ একর জায়গা জুড়ে পড়েছে পলির মতো করে পাথরের স্তূপ। সাদা সাদা পাথর। এ যেন সাদা পাথরের আরেক বিছনাকান্দি। স্থানীয় লোকজন জায়গাটিকে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর নামেই চিনেন।

গত ১৭ জুলাই কাকডাকা ভোরে সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যাত্রা শুরু। গন্তব্য ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর। জায়গাটি এখনো খুব একটা পরিচিতি পেয়ে উঠেনি। ছোটবেলার বন্ধু বিশ্বজিৎ আগের দিন ফোন করে বলেছিল ঘোরাঘুরির জন্য বাড়ি থেকে সিলেট এসেছে সে। ঘুরতে কোথায় যাবো তা ভোরে ঠিক করি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে ভুগতে। সঙ্গী চার বন্ধু। সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কটির চারপাশে শুধু সবুজ চা বাগান। দেখলে মনে হয় নীল আকাশ যেন সবুজ কার্পেটের উপর তাবু টানিয়েছে। এই সড়কটি ধরে চলতে চলতে একটা সময় গতি কমে আমাদেরকে বহন করা গাড়িটির।

সংস্কারকাজ চলায় বিমানবন্দর থেকে বাকিটা পথ চরম খারাপ। এই সড়ক দিয়ে ভোলাগঞ্জের দয়ারবাজার যেতে সময় লাগে ২ ঘণ্টার মতো। দয়ারবাজার পৌঁছে নাস্তা সেরে নৌকা ভাড়া করে মূল গন্তব্য সাদাপাথরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। ধলাই নদের স্বচ্ছ নীল জলে নৌকা চলতে চলতে চোখে পড়ে মেঘালয়ের আকাশ ছোঁয়া পাহাড়। মনে হবে আকাশে হেলানো উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি। চারপাশের চোখ ধাঁধানো সব দৃশ্য দেখতে দেখতে ২০ মিনিটেই পৌঁছে যাই নদের উৎসমুখে। তীরে ভেড়ে নৌকা। ঠিক তীর নয়, পাথরের স্তূপে। পাথরগুলো সব সাদা। ছোট, মাঝারি, বোল্ডার আকৃতির পাথর। সাদার মধ্যে নিকষ কালো পাথরও আছে। কোনোটি খয়েরিও। পাথর মাড়িয়ে ঝরনার আবাহন। কোথাও হাঁটু সমান আবার কোথাও কোমর পানি। পাথরের ওপর দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে গিয়ে তৃষ্ণার্ত ধলাইয়ের মুখে। সেই জল বরফ গলা পানির মতো ঠাণ্ডা। বেশিক্ষণ গা ভেজালে এই প্রচণ্ড গরমেও শরীরে শীতের কাঁপন লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়।

আর পর্যটকের সংখ্যা একেবারে নেই বললেই চলে। যেখানে অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকের ভিড় প্রায় সবসময় লেগেই থাকে। এইখানে প্রকৃতি তার নিজের মতো করে আছে। সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এটি বিছনাকান্দির চেয়েও শ্রেয় বলে আমি মনে করি।

সাদাপাথরের সৌন্দর্য অনেকক্ষণ উপভোগ করে আমরা ফিরে আসি দয়ারবাজারে। সেখান থেকে আবারও সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে যাই আরেক ভূস্বর্গ উৎমাছড়ায়। সময় লাগে ৩০ মিনিটের মতো। উৎমাছড়া দেখতে সেই বিছনাকান্দির মতোই। ঘন সবুজ পাহাড়ের ভাঁজ থেকে নেমে এসেছে সরু ঝরনা। এখানেও প্রকৃতি তার সৌন্দর্য মেলে ধরেছে। মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যেন পাগল করে দেয় ইট-সুরকির নগরজীবনে বেড়ে ওঠা জীবনকে। আহ! পাথরের ওপর দিয়ে ঝরনার জল গড়িয়ে আসছে। শীতল জল।

যেভাবে যাবেন-
১) সড়কপথ: সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভোলাগঞ্জের দয়ারবাজার। ভাড়া জনপ্রতি ভাড়া পরবে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। দয়ারবাজার থেকে নৌকা ভাড়া করতে হবে। মানুষের সংখ্যার ভিত্তিতে ভাড়া আসা-যাওয়া ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা।

২) নৌপথ: সিলেট শহর থেকে বাদাঘাট হয়ে উমাইরগাঁও। সেখান থেকে সরাসরি ভোলাগঞ্জের নৌকা ভাড়া করা যায়। ভাড়া ২০০০-৩০০০ টাকা।

সচেতনতা: একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, পরিবেশ হুমকিতে পড়ে এমন কিছু অবশ্যই করা চলবে না। পলিথিন বা প্লাস্টিকের বোতলসহ পরিবেশ বিপন্ন হয় তেমন কিছু মনের অজান্তেও ফেলে আসবেন না। প্রকৃতিকে বেঁচে থাকতে দিন তার নিজের মতো করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত