মিনহাজ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট থেকে

২৪ আগস্ট, ২০১৮ ১৭:৫৫

ঈদের ছুটিতে জাফলং, বিছনাকান্দিতে উপচে পড়া ভিড়

সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট সারাদেশের ভ্রমণ প্রেয়সী মানুষ। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে বছর জোড়ে পর্যটকদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মত। ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবসের ছুটিতে ভ্রমণ প্রেয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে সিলেটের পিকনিক স্পটগুলো। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।

ঈদুল আযহার টানা ছুটিতে পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব মিলে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে যেন ঢল নেমেছিল সিলেটের জাফলং জিরোপয়েন্টে, জিরোপয়েন্ট ঘেঁষা ভারতীয় ঝুলন্ত ব্রিজ, ফাটাছড়া মায়াবি ঝর্ণা, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাইসহ সিলেটের নয়নাবিরাম নান্দনিক পর্যটন স্পট সমূহে।

বুধবার ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে আজ শুক্রবার পর্যন্ত জাফলং, ফাটাছড়া মায়াবি ঝর্ণা, বিছনাকান্দি, রাতারগুল সোয়াম ফরেষ্ট, পান্তুমাই সর্বত্রই পর্যটকদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। লোকে লুকারণ্য যেন পুরো পিকনিক স্পট এলাকা সমূহ। বাস, ট্রাক, মিনি বাসসহ ছোট যানবাহনে করে ভ্রমণ প্রেয়সী মানুষজন এখানে এসে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। সবুজ সতেজতায় নিজেকে আবৃত্ত করতে তাড়া ছুটে আসেন প্রকৃতির দূরগোড়ায়। দিগন্ত জোড়া পাহাড়, ছোট বড় টিলা, পাহাড়ের গায়ে সবুজ লক্ষ লক্ষ গাছের সারী, পিয়াইনের বুকচিরে বয়ে চলা প্রবাহমান পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ স্ফটিক জল, নুড়ি পাথর, চা বাগান, গহিন বন, হিজল করচের অরণ্য ঘেরা সবুজ বেষ্টনী, পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ঝর্ণা ধারায় গা ভিজিয়ে ছবি সেলফিতে নিজেদের আবদ্ধ করে আনন্দে ভাগাভাগি করছেন আগত পর্যটক দর্শনার্থীরা।

সিলেট তামাবিল মহাসড়কসহ সবকটি সড়কের বেহাল অবস্থায় দূর্ভোগ ভোগান্তি উপেক্ষা করেও আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের সকল যন্ত্রণার যেন অবসান হয়ে গেছে প্রকৃতির কাছাকাছি এসে। এখানকার সবুজ অরণ্য ঘেরা মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আগন্তুকদের ভ্রমণ যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছে। বিগত ৩দিনের পর্যটক দর্শনার্থীর চাপে এখানকার সড়ক সমূহে পর্যটকবাহী বাস, মিনিবাসসহ যানবাহনের সৃষ্ট যানজটের কারণে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। জাফলং থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরবর্তী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল যানজটে আটকা পড়া যানবাহনের সারী। কাদা পানি মাড়িয়ে পর্যটকরা ছুটে গেছেন প্রকৃতির একেবারে কাছাকাছি। আগত পর্যটক দর্শনার্থীদের পদভারে ভরপুর হয়ে উঠেছে এখানকার সবকটি হোটেল, মোটেলসহ রাত্রি যাপনের সবকটি কটেজও। হোটেল, রেস্টুরেন্ট গুলোর বিকিকিনিও বেড়েছে বহুগুণ।

পর্যটক নিরাপত্তায় গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ অনাকাংক্ষিত পরিস্থিতি ঠেকাতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।

জাফলং জিরো পয়েন্টে কথা হয় ঢাকার বনশ্রী এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের সাথে। প্যাকেজ প্রোগ্রামে তারা বিশ জন বন্ধু বান্ধব জাফলং ভ্রমণে এসেছেন। সোহেল নামের তাদের দলনেতা জানান, পৃথিবীর অগণিত দেশে পর্যটন শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ হয়েছে। সেখানকার পর্যটন শিল্প বিকাশ হওয়ার কারণে তাদের অর্থনীতি ও চাঙ্গা হয়েছে। আমাদের দেশের সিলেটের জাফলং, ফাটাছড়া মায়াবি ঝর্ণা, বিছনাকান্দি, রাতারগুলসহ নান্দনিক সবকটি পর্যটন স্পটে সরকারের পর্যটন মন্ত্রণালয় বিনিয়োগ ও রক্ষণাবেক্ষণে উদ্যোগী না হওয়াতে সরকার এই খাত থেকে কাঙ্কিত রাজস্ব পাচ্ছে না। আমি মনে করি এসব পর্যটন স্পটে সরকারি পৃষ্ট পোষকতায় এখানকার পর্যটন শিল্প বিকশিত হলে সরকারের বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে।

সুলেমান আহমদ নামের একজন পর্যটক জানান, এখানকার সবুজ প্রকৃতির আর রূপলাভণ্যতায় বিমুগ্ধ হয় পর্যটক দর্শনার্থীরা। কিন্তু এখানকার সড়ক মহাসড়ক গুলোর বেহাল, সংস্কারহীন অবস্থায় পর্যটক উপস্থিতি হ্রাস পাবে। অনতি বিলম্বে এসব সড়ক মহাসড়ক সমূহ মেরামতের উদ্যোগ না নিলে ভ্রমণ প্রেয়সী মানুষ বিকল্প পর্যটন স্পট খোজে নিবে। তখন এটা সরকারের রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়বে।  

আহমেদ আল ফারুক নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী জানান, পর্যটন শিল্প বিকাশের ব্যাপারে সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। ভঙ্গুর, খানাখন্দ বেহাল সড়ক, পর্যটন স্পট সমূহ গুলো রক্ষণাবেক্ষণ দ্রুত উদ্যোগ নিলে পর্যটক ভোগান্তি কমার পাশাপাশি এখানকার সৌন্দর্য মণ্ডিত পিকনিক স্পটগুলোতে বাড়বে পর্যটক দর্শনার্থীর সংখ্যা।

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থেকে আসা পর্যটক আব্দুল আলিম জানান, বিছনাকান্দির অপরূপ সৌন্দর্যে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। এখানে ঘুরতে এসে আমরা বন্ধুবান্ধব সবাই অত্যন্ত খুশি। কিন্তু বঙ্গবীর হইতে হাদারপার পর্যন্ত সড়কের যে বেহাল দশা তা অত্যন্ত যন্ত্রণা ও পিড়া দায়ক। এই পর্যটন স্থানের উন্নয়নে এবং এখানকার সড়ক যোগাযোগ আরও উন্নত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান তিনি।

মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা কামরুল হাসান জানান, এত সুন্দর এলাকা তবে রাস্তাঘাটের সংস্কার না থাকায় কষ্ট দুর্ভোগের অন্ত ছিল না। ভ্রমণ আনন্দঘন ও নিরাপদ করনের দায়িত্ব সরকারের।

শুক্রবার রাতারগুল সোয়াম ফরেষ্টে ভ্রমণে আসা পর্যটক নাটোরের মেহজাবিন আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, পরিবার পরিজন নিয়ে গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন পিকনিক ঘুরে দেখতে এখানে ছুটে এসেছি। এখানকার অপরূপ সৌন্দর্যে আমরা বিমুগ্ধ। প্রকৃতির এই অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চলকে পর্যটনের আওতায়ভূক্ত করে দ্রুত একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প নিলে সরকারের এ খাত থেকে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারবেন।

জাফলং মামার বাজারের ফয়সাল মেডিসিন কর্নারের স্বত্বাধিকারী অবসরপ্রাপ্ত নায়েক ডা. আওলাদ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি সিলেটের পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং সড়ক মহাসড়ক সমূহ দ্রুত মেরামত সংস্কার দাবি জানিয়ে বলেন, পর্যটন বিকশিত করতে হলে পর্যটন অবকাঠামোর পাশাপাশি এখানকার বেহাল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করতে হবে। অন্যথায় পর্যটকরা এখানকার পর্যটন স্থান সমূহ থেকে বিকল্প স্থানে মুখ ফিরিয়ে নিবেন। এতে করে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্য অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ার পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হবেন।

গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, জাফলং, ফাটাছড়া মায়াবি ঝর্ণা, রাতারগুল, বিছনাকান্দিসহ সবকটি পর্যটন স্পটের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে সরকার আন্তরিক। এখানকার পর্যটন স্পটে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সরকার নির্দেশিত সবকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পথে। ইতিপূর্বে পর্যটকদের যাতায়াত সহজতর করনে সংগ্রাম বিজিবি ক্যাম্পের উত্তর পার্শ্ব দিয়ে পর্যটকরা পিয়াইন নদীতে সরাসরি নামার জন্য একটি সিঁড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল জলিল জানান, গোয়াইনঘাটের সবকটি পর্যটন স্পট সমূহে বেড়াতে আসা পর্যটক, দর্শনার্থী ও ভ্রমণ প্রেয়সীদের সার্বিক নিরাপত্তায় থানা পুলিশ সজাগ রয়েছে। টুরিষ্ট পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষ টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত