নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ জুলাই, ২০১৫ ২০:৫৫

রাতারগুলের পথের কাঁটা

টলটলে জলে অর্ধেক ডুবে থাকা গাছের পর গাছ নিয়ে বিশাল বন। ডালে ডালে নানা জাতের পাখির কলতান; জলে মাছের সঙ্গে সাপ-ব্যাঙয়ের বসবাস। সবমিলে অনিন্দ্য সুন্দর জলাবন; রাতারগুল স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘সিলেটের সুন্দরবন’ নামে।

সারা বছরই এই বনে পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও বর্ষায় পানি বাড়ায় প্রকৃতিপ্রেমীদের আকৃষ্ট করে বেশি। কিন্তু প্রকৃতির টানে রাতারগুল যাওয়ার পথের কাঁটা হয়ে উঠেছে এখানকার সড়কটি।

রাতারগুলে যাওয়ার আরো দুটি বিকল্প পথ থাকলেও বনবিভাগের করা প্রধান রাস্তা চলতি বর্ষায় বেহাল দশা হয়েছে।

প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে অনেক জায়গায় কাঁচা রাস্তার অস্তিত্ব-ই হুমকির মুখে। এতে রাতারগুল ঘুরতে আসা পর্যটকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বিশ্বের ২২টি ব্যতিক্রমী মিঠাপানির জলাবনের অন্যতম রাতারগুলের আয়তন ৩ হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর। এর মধ্যে ৫০৪ একর বনকে ১৯৮৫ সালে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিশাল এই বনের গাছ-গাছালির ৮-১০ ফুট পর্যন্ত বছরের অন্তত সাত মাসই থাকে পানির নিচে।

সিলেট নগরী থেকে ২৬ কিলোমিটার দুরে রাতারগুলের অবস্থান সদর উপজেলার সীমানা ঘেষে গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে। নিজস্ব বা ভাড়া গাড়ি ছাড়াও নগরীর আম্বরখানা থেকে সিএনজি অটোরিকসাযোগে সাহেববাজার হয়ে রাতারগুল গ্রামে যাওয়া যায়। গ্রাম থেকে পরে পায়ে হেটে যেতে হয় জলাবনের সৌন্দর্য অবগাহনে। আবার আম্বরখানা থেকে গাড়িতে মোটরঘাট গিয়ে ওখান থেকে নৌকাযোগে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

রাতারগুল গ্রাম থেকে জলাবনে যাওয়ার জন্য গ্রামবাসী প্রশাসনের সহযোগিতায় কয়েক বছর আগে কাঁচা রাস্তা তৈরি করেন। এই রাস্তারও কয়েক জায়গায় কাদা হয়ে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান রাতারগুল গ্রামের বাসিন্দা ফজলু মিয়া।

তিনি বলেন, গ্রামবাসীর উদ্যোগে রাস্তার কিছু জায়গায় ইট-সুরকি বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে গাড়ি চলাচল করলেও অনেকে রাতারগুল গ্রাম থেকে নৌকাযোগে জলাবনে যাচ্ছেন। এছাড়া মোটরঘাট থেকে সরাসরি নৌকাযোগে রাতারগুলে যাওয়া গেলেও নৌকাভাড়া বেশি হওয়ায় অনেকে বনবিভাগের রাস্তা ব্যবহারে আগ্রহী থাকেন। তবে এই রাস্তার অবস্থা বর্তমানে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় রাস্তার অস্তিত্বই দেখা যায় না পানিতে ডুবে থাকায়।

অথচ বনবিভাগের এই রাস্তায় সাহেববাজার থেকে চৌমুহনী বাজার হয়ে সরাসরি রাতারগুলে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চৌমুহনী থেকে চিরিঙ্গী পর্যন্ত তিন কিলোমিটার পাঁকা সড়ক পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকলেও এরপরের কাঁচা দুই কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা বেহাল। বর্ষার পানিতে অনেক জায়গায় রাস্তা ভেঙে গেছে, আর কোথাও কাঁদা-মাটি ধানের জমিকেও হার মানিয়েছে।

চিরিঙ্গী গ্রামের নৌকাচালক সাচ্চা মিয়া বলেন, রাস্তার অবস্থা খারাপ থাকায় এখন প্রায় সকলেই নৌকায় রাতারগুলে যাচ্ছেন। আরেক নৌকাচালক স্থানীয় মহিষকিয়ার বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম বলেন, এই রাস্তাটি শুধু রাতারগুলে আসা লোকজনের নয়, গ্রামবাসীরও উপকারে লাগে। কিন্তু বর্ষায় রাস্তাটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সকলেই।

বনবিভাগের রাস্তা হয়ে রাতারগুলে গেলে সহজে ওয়াচ টাওয়ারে উঠে পুরো জলাবন দেখার সুযোগ রয়েছে। যদিও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো শুরু থেকেই এই টাওয়ার নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। অনেকেই রাতারগুলকে পিকনিট স্পট হিসেবে মনে করছেন অনুযোগ করে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ভূমি সন্তান বাংলাদেশের’ সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর বলেন, বনবিভাগের যে রাস্তা রয়েছে; তা আসলে বর্ষায় আর রাস্তাই থাকে না। অন্য রাস্তাগুলোর অবস্থাও খারাপ। এতে রাতারগুলে যেতে প্রকৃতিপ্রেমীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

রাতারগুলের সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় বনকর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত