
৩০ মে, ২০১৬ ২০:৪১
শাশুড়ির নির্যাতন, স্বামীর মদ্যপান, অবশেষে মেয়ের আত্মহত্যার হুমকি সহ্য করতে না পেরে নিজেই প্রাণ দিলেন সঙ্গীত পরিচালক হিল্লোল দাস রাজীবের স্ত্রী জয়া সেন। এমনটাই অভিযোগ প্রতিবেশী ও স্বজনদের।
এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (৩০ মে) সকালে বাংলামেইলকে তথ্যটি নিশ্চিত করেন রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মশিউর রহমান।
হিল্লোল দাস রাজীবের এক ঘনিষ্ট বন্ধু নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাংলামেইলকে জানান, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সব সময় বেশ দুশ্চিন্তা করতেন জয়া সেন। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী মেয়ে রাজশ্রী দাস স্রিজার কিছুদিন আগে এক ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সম্পর্ক নিয়ে মা জয়া সেনের বরাবরই আপত্তি ছিল। ঘটনার দিন (২৭ মে) রাতে মেয়ের সাথে তার কথা কটাকাটিও হয়।
সেই সম্পর্ক থেকে সরে আসতে বললে মেয়ে স্রিজার উল্টো আত্মহত্যার হুমকি দেয়। আর সেই হুমকিতে ক্ষুব্ধ হয়ে মা জয়া সেন ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
ওসি মশিউর রহমান জানান, ৩৩/বি, পশ্চিম মালিবাগে ২৭ মে রাতে জয়া সেন ফ্যানের সিলিংয়ে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে মলিবাগের ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ৩টায় তার মৃত্যু হয়। পরে রোববার দুপুরে লাশ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মর্গে নেয়া হয়।
ওসি আরো জানান, এ ঘটনায় রোববার রাতে রমনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দয়ের করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, সঙ্গীত পরিচালক হিল্লোল দাস রাজীবের সাথে ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় জয়া সেনের। তখন জয়া সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। তাদের সংসারে মেয়ে স্রিজা ছাড়াও শুভ নামে একটি ছেলেও রয়েছে।
বিয়ের পরপরই শ্বশুর তার সব সম্পত্তি প্রিয় পুত্রবধূ জয়ার নামে লিখে দেন। এরপর থেকেই জয়া সেনের ওপর নির্যাতন শুরু করেন শাশুড়ি। সেই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বেশ কয়েকবার বাসা ছেড়েও চলে যান।
জয়ার অভিমানের আরো একটি কারণ ছিল স্বামী রাজীবের মদ্যপান। শিক্ষিত জয়া কখনোই চাইতেন না স্বামী মদ্যপান করুক। কিন্তু স্বামী তাকে বুঝানোর চেষ্টা করতেন, তিনি যে পেশায় কাজ করেন সেখানে এসব করতেই হয়। যা জয়া কখনোই মেনে নিতে পারেননি।
জানা গেছে, জয়া যেদিন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সেদিন তিনি সবার সঙ্গেই ভালো করে কথা বলেন। পরিচিতজনদের সঙ্গেও দেখা করেন। এমনকি রাতে খাবার টেবিলে স্বামী রাজীবের জন্য খাবার রেখে যান। এমনকি কথা কাটাকাটি হলেও মেয়েকে নিজের দু’টি ছবিও দিয়ে যান।
এদিকে প্রতিবেশীদের অভিযোগ, মায়ের মৃত্যুর পরও তেমন কষ্ট পেতে দেখা যায়নি মেয়ে স্রিজাকে। ওইদিন সকাল থেকেই তাকে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। উল্টো পরিচিত একজনকে স্রিজা বলে, ‘আমাকে এখন বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
আপনার মন্তব্য