
০৮ জুন, ২০১৬ ২২:৩৫
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ভাগ্য নির্ধারণ হবে বৃহস্পতিবার।
শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় হাইকোর্টের দেয়া রুলের শুনানির তারিখ বৃহস্পতিবার। আর শুনানির আগে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসির দেয়া প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে, গত ২৯ মে রাষ্ট্রপক্ষ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসির দেয়া প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করার পর বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসনের দেয়া প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘দায়সারা নয়’, আগামী ৮ জুনের মধ্যে তাদের আবারো ‘সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত’ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেছে, ডিসিসহ অন্যদের বলবেন, যেন দায়সারা গোছের প্রতিবেদন না দেন। দায়সারা হলে আগামীতে এ রকম প্রতিবেদন গ্রহণ করা হবে না। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে কুণ্ঠিত হবো না। বিষয়টি ৯ জুন আবারো আদালতে উঠবে জানিয়ে আদেশে বলা হয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে হবে।
অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে নিয়ে সারা দেশে যখন আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়, তখন সেলিম ওসমানের অনুসারীরা ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য শ্যামল কান্তি ভক্তের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এমনকি কৌশলে আলেম ওলামাদেরও রাস্তায় নামিয়ে দেয় তারা।
উল্লেখ্য, গত ৮ মে শ্রেণিকক্ষে রিফাত হাসান নামে এক ছাত্রকে মারধর করেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি। ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে গত ১৩ মে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয় লোকজনকে ডাকা হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান শিক্ষককে মারধর করে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে তাকে কান ধরিয়ে উঠবস করান স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
দেশজুড়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচার দাবির মধ্যেই ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার দুই দিনের মাথায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল কমিটির ওই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে জানায়, প্রধান শিক্ষক তাঁর পদে বহাল আছেন। নিয়ম বহির্ভূত সিদ্ধান্ত নেয়ায় ওই স্কুল কমিটিকেও মন্ত্রণালয় বাতিল ঘোষনা করে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান ও মহসীন রশিদ ১৮ মে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন। এর প্রেক্ষিতে ওই দিন আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।
সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ ওই ঘটনায় যাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। পাশাপাশি ওই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও আদালত জানতে চায়।
এদিকে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে অপদস্থ করার ঘটনা তদন্তে আরো দুই মাসের সময় চেয়েছে পুলিশ। বুধবার এই সময় আবেদন করে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে আলাদা চিঠি পাঠিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার এবং বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
তিনি জানান, এসপি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন এবং ওসি আবুল কালাম আজই অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে আলাদা চিঠি দিয়ে হাইকোর্ট নির্ধারিত সময়ের পর আরো দুই মাসের সময় চেয়েছেন।
আপনার মন্তব্য