সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ এপ্রিল, ২০১৭ ১৬:০২

রাউধার মৃত্যুতে সহপাঠীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

মালদ্বীপের মডেল ও মেডিকেল শিক্ষার্থী রাউধা আতিফের মৃত্যুর ঘটনায় তার এক সহপাঠীকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ।

সোমবার (১০ এপ্রিল) তার বাবা রাজশাহীর আদালতে এই মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে রাউধার মৃত্যুর ১২ দিন পর এ মামলা হলো।

সোমবার দুপুরের দিকে রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ রাজশাহী মহানগর আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলামের আদালতে উপস্থিত হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাউধার সহপাঠী সিরাত পারভীন মাহমুদের নাম।

বাদীপক্ষের আইনজীবী কামরুল মনির বলেন, আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলা দায়েরের পর ডা. আতিফ বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই এটি একটি হত্যাকাণ্ড। আমরা রাউধার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাংলাদেশে ছুটি এসেছি। ওর (রাউধা) গলায় হাতের ছাপ আছে। তাই এটা আত্মহত্যা হতে পারে না।’

পেশায় চিকিৎসক ডা. আথিফ আরও বলেন, ‘রাউধাকে যে হত্যা করেছে, সে ডানহাতি। তাকে শ্বাসরোধ করেই হত্যা করা হয়েছে। যদি রাউধা আত্মহত্যা করে থাকে, তাহলে কেন পুলিশ আসার আগেই তাকে নামানো হলো? প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালের ভেতরের রুম দেখেও মনে হয়েছে এটা হত্যাকাণ্ড।’ এখন এই মামলার তদন্ত রাজশাহীর পুলিশ ভালোভাবে করবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, ‘মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে সিরাত ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে রাউধাকে ফলের জুস খেতে দেয়। ওইদিন বিষয়টি রাউধা তার মাকে জানিয়েছিল। এছাড়া, রাউধার মৃত্যুর পর কাউকে জানানোর আগেই সিরাত একাই রাউধার রুমের দরজা ভেঙে নিজেই লাশ নামিয়েছে বলে সবাইকে জানায়। কিন্তু ওই রুমের দরজা বা ছিটকানি ভাঙার কোনও চিহ্ন নেই। রাউধার মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরা সচল থাকলেও ওই রাতে তা অকেজো ছিল বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ রাউধার পরিবারকে জানিয়েছে। এসব বিষয় থেকেই রাউধাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।’

রাউধা হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি করা হয়েছে রাউধার সহপাঠী সিরাত পারভীন মাহমুদকে। এ দু’জনের সম্পর্ক প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের সেক্রেটারি আব্দুল আজিজ রিয়াদ বলেন, ‘ভারতের কাশ্মীরের মেয়ে সিরাতের সঙ্গে রাউধার ভালো সর্ম্পক ছিল। এটা আমরা জানতাম। দু’জনই দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, দু’জনেই বিদেশি ব্লকে থাকত।’

সিরাতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়া প্রসঙ্গে আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা একাডেমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেব। তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে আমাদের পক্ষ থেকে।’

গত ২৯ মার্চ (বুধবার) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় রাওদা আতিফের ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর ৩১ মার্চ তার পরিবারের সম্মতিতে ময়নাতদন্ত শেষে নগরীর হেতেখাঁ কবরস্থানে দাফন করা হয়। এমবিবিএস ১৩ তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন রাউধা। বিদেশি কোটায় ভর্তির পর গত বছরের ১৪ জানুয়ারি মহিলা হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার ওই কক্ষে ওঠেছিলেন তিনি।

২০১৬ সালের অক্টোবরে বিখ্যাত ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ সাময়িকীর নবম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সংখ্যায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মডেলদের নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য্য উদযাপন’ (সেলিব্রটিং বিউটি ইন ডাইভার্সিটি) শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছিলেন মালদ্বীপের ‘নীলনয়না’ এই মডেল। উঠতি মডেল হিসেবে রাউধার ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত