স্বকৃত নোমান

০৫ অক্টোবর, ২০২০ ০১:১২

এই নষ্ট সমাজে যেন পুনর্জন্ম না হয়!

গ্রামবাংলা দেখতে খুব সুন্দর। এর কোনো তুলনা নেই। আমরা এর সৌন্দর্যের প্রশংসা করি। কিন্তু এই সুন্দরের আড়ালে রয়েছে বিষ। ভয়াবহ জহর। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ (অবশ্যই সবাই নন) অন্তরে যে বিষ পোষণ করে, দশটি গোখরোর বিষ একত্রিত করলেও তার সমান হবে কিনা সন্দেহ। গ্রামের মানুষ চালিত হয় ধর্ম ও রাজনীতি দ্বারা। ধর্ম ও রাজনীতি দিয়ে তারা যে সমাজ গড়েছে, সেই সমাজে চুরি-ডাকাতি অপরাধ নয়, ঘুষ অপরাধ নয়, দুর্নীতি অপরাধ নয়, মারামারি হানাহানি অপরাধ নয়, ক্ষেত্রবিশেষ ধর্ষণও অপরাধ নয়। কিন্তু কোনো বিয়ে-বহির্ভূত নারী-পুরুষের সম্পর্ক গুরুতর অপরাধ। কোনো নারী কোনো পুরুষের সঙ্গে আড়ালে-আবডালে একটু কথা বললেই হলো। গেল গেল! সমাজ ধসে গেল! সব শেষ হয়ে গেল! শালিস বসিয়ে ওই নারীকে অপমান-অপদস্থ করো, প্রয়োজনে দোররা মারো, একঘরে করো, পিটিয়ে গ্রাম ছাড়া করো। আর পুরুষটি? ওকে হালকা-পাতলা ধমক দিয়ে দিলেই হবে।

বিজ্ঞাপন

গ্রামবাংলার অধিকাংশ মানুষের এই যে মানসিকতা, এটা শিখিয়েছে ধর্ম। নিশ্চিতভাবেই ধর্ম। ধর্মের ঠিকাদাররা ঘুষের বিরুদ্ধে বলবে না, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলবে না, চুরি-ডাকাতি-হানাহানির বিরুদ্ধে বলবে না; তাদের বলার একমাত্র বিষয় নারী। তাদের একমাত্র শত্রু নারী। তাদের কাছে নারী খারাপ, নারী দইয়্যুজ, নারী জাহান্নামের হানজাল (জ্বালানি)। পারলে তো নারীকে জ্যান্ত দাফন করে। তারাই আবার বড় গলায় বলে, ‘ইসলাম নারীদের অধিকার দিয়েছে।’ আহারে অধিকার!

গ্রাম খারাপ। শহর কি তার ব্যতিক্রম? মোটেই না। শহর আরও খারাপ। দেশটাকে খুব ভালোবাসি। প্রাণপণ ভালোবাসি। কিন্তু মাঝেমধ্যে এতটাই ঘৃণা জন্মে যে, যেমন নোয়াখালীর নারী নির্যাতনের ভিডিওটি দেখে জন্মেছে, যেমন পাহাড় ও সমতলে লাগাতার ধর্ষণের ঘটনায় জন্মেছে, তখন আর দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা থাকে না।

আমার জন্ম এ দেশে, এ নিয়ে আমার কোনো গৌরব নেই। খেদও নেই। জন্মের পেছনে আমার কোনো হাত নেই। আমি বাঙালি, এ নিয়েও আমার কোনো গৌরব নেই। আমি জাতীয়তাবাদের ঊর্ধ্বে। বিশ্বমানব। এই দেশে জন্মেছি বলে এ দেশকে ভালোবাসি। আমেরিকায় জন্মালে আমেরিকাকেই ভালোবাসতাম। চীনে জন্মালে চীনকে। যদি পরজন্ম থেকে থাকে, যদি পঞ্চভূত থেকে আবার আমার উত্থান ঘটে, তবে যেন এই নষ্ট, এই বর্বর সমাজে জন্ম না হয়।

স্বকৃত নোমান: কথাসাহিত্যিক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত