স্বকৃত নোমান

১৪ জুন, ২০২১ ২২:৩৫

রাষ্ট্রীয় রীতি আর ধর্মীয় রীতি এক নয়

‘গার্ড অব অনার’ একটি রাষ্ট্রীয় রীতি। জানাজা একটি ধর্মীয় রীতি। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানে নারী ইউএনওর বিকল্প ব্যক্তি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ অজ্ঞানতা প্রসূত। রাষ্ট্রীয় রীতি ও ধর্মীয় রীতিকে তারা এক করে ফেলেছে। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী হতে পারেন না। বাংলাদেশ শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র নয়। এই দেশের নাম রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। এই ‘গণ’র মধ্যে নারীরাও অন্তর্ভুক্ত। এই কারণেই এ দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশ যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে তা হবে নারীর প্রতি চরম অসম্মান এবং নারীর ক্ষমতায়নকে পিছিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা। এক সময় দেখা যাবে এরকমই কোনো এক কমিটি সুপারিশ করে বসবে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নারীর বিকল্প ব্যক্তি নির্ধারণ করা হোক। মননের দিক থেকে দেশ যেভাবে পিছাচ্ছে, সেই সুপারিশ আসতে আর বেশি দেরি নেই।

এই সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেছেন, ‘মহিলা ইউএনও গার্ড অব অনার দিতে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন।’ প্রশ্ন তো তুলবেই। কারণ গোটা দেশের অধিকাংশ মানুষের মগজে তো ‘বিষ্ঠা’ ঢুকে আছে। পঞ্চাশ বছর ধরে কেবল বিষ্ঠাই ঢুকেছে। অতীতে কেউ পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয়নি, আপনারাও নেননি, নিচ্ছেন না। এই বিষ্ঠার দুর্গন্ধ এখন আপনাদের নাকেও লাগছে। বিষ্ঠার গন্ধকে আপনারা এখন সুঘ্রাণ ভাবতে শুরু করেছেন। জনগণকে যদি সভ্যতা ও সংস্কৃতিমুখী প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা যেত, তারা এই প্রশ্ন তুলত না। তাদেরকে বরং সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলুন। তা করার জন্য সংসদে সুপারিশ পেশ করুন।

এই সুপারিশের মধ্য দিয়ে সংসদীয় কমিটি সংশ্লিষ্টরা নিজেদেরকে নারী বিরোধী, সভ্যতা বিরোধী এবং রাষ্ট্রীয় রীতি বিরোধী একটি অপশক্তি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন। এদেরকে রুখে দেওয়া আবশ্যক। আশা করছি সরকার নারীবিরোধী এমন সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে না এবং সুপারিশকারীদের তিরস্কার করবে।

স্বকৃত নোমান: কথাসাহিত্যিক

আপনার মন্তব্য

আলোচিত