অমি রহমান পিয়াল

০৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ০২:০২

আল জাজিরার কথায় শেখ হাসিনাকে ত্যাগ করবেন?

বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরে তার শাসনামল শুরু করলেন, প্রো-পাকিস্তানি আমলাদের নিয়েই তাকে কাজ করতে হয়েছে। তার উপায় ছিলো না, বিকল্প ছিলো না। পদে পদে বিপদ আর দুর্নীতির অপবাদ নিয়েই এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটারে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উপায় খুঁজে বেড়িয়েছেন। প্রয়োজনে কম্প্রোমাইজ করছেন, দেশের স্বার্থে। নতজানু হয়েছেন, চোখ বন্ধ রেখেছেন, হাত পাতছেন। নিজেকে বুঝ দিয়েছেন দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি সচল হলে, উন্নয়ন বেগ পেলে দেশের মানুষ সভ্য হবে। তাদের রুচি তৈরি হবে। তারা নিজের ভালো কিসে টের পাবে। 'গোলামের জাত' ট্যাগ থেকে বের হয়ে আসবে, আইনের শাসন ভিত্তি পাবে। তিনি সফল হন নাই, সেই দুর্নীতিবাজদের অপবাদ তার উপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে নির্বংশ করে দিয়েছে পরাজিত শক্তি। চারটা বছর তাকে লড়তে হয়েছে বাংলার অভাবী মানুষের ভাত-কাপড়-বাসস্থানের যোগাড়যন্ত্রের পাশাপাশি প্রাসাদ ষড়যন্ত্র আর প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে। অথচ বঙ্গবন্ধু দুর্নীতিবাজ ছিলেন না। তাকে হত্যা করে তার বাসা থেকে কোটি কোটি টাকা পাওয়া যায় নাই, তার বা তার ছেলেদের নামে লাখ টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে পারে নাই খুনিরা।

শেখ হাসিনা যেবার ওপেনে বললেন, আওয়ামী লীগে আমাকে ছাড়া সবাইকে কেনা যায়, সেই ক্ষোভের ব্যাখ্যা ছিলো। এর অর্থ ছিলো আমি বাকিদের মতো নীতির সঙ্গে আপোষ করে বিক্রি হই না। তার আশেপাশে কেউ কথাটার প্রতিবাদ করার সাহস পায় নাই। একজনও বলেন নাই আমিও সৎ আপা, আমিও দুর্নীতি করি না। শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তাকে '৮৬ বিশ্বকাপের ম্যারাডোনা হতে হবে। চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে নিজের পারফরম্যান্সেই ভরসা রাখতে হবে, বাকিরা কলাগাছ। হয়েছেও ঠিক তাই। উনি নিজের সততা অক্ষুণ্ণ রেখে দেশের জন্য কাজ করে গেছেন, যাচ্ছেন, যাবেন। যে দেশে দাড়ি টুপি পরে সারাক্ষণ কোরআন হাদিসের মধ্যে থেকেও লোকজন শিশুদের বলাৎকার করে, সেই দেশে সাধু সজ্জন লোক পাওয়া অসম্ভব। যারা আছে তাদের নিয়েই কাজ করতে হবে। যেখানে সিস্টেম করাপ্ট সেখানে মতিয়া চৌধুরীর মতো সৎ মানুষকেও দুর্নীতির অপবাদ সইতে হয়। আমলাতন্ত্রের যে জাল সেখানে ভালো মানুষও ভালো থাকবে না, চুরি না করলেও চোরদের দায় নিতে হবে।

স্বাধীনতার পর থেকে ৫০ বছর চলছে এমন কোন সরকার নাই যার বিরুদ্ধে পুকুর চুরির অভিযোগ নাই। দুর্নীতির অভিযোগ নাই। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এতিমের টাকা মারার অভিযোগে জেল খাটলেন। তারপরও সেই তলাহীন ঝুড়ি, প্যারিস কনসোর্টিয়ামে হাত পেতে ভিক্ষা আনার পর্যায় থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি। যে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়া একসময় হাসাহাসি করছে ছ-রা, সে ডিজিটাল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবহার এখন তারাই করে। বাংলাদেশ নিজের টাকায় পদ্মাসেতু করছে, অন্তরীক্ষে বাংলাদেশের এখন স্যাটেলাইট আছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে, গরীব কমছে, ভিটেহীনরা এখন ঠিকানা পাচ্ছে। প্রান্তিক মানুষ পাচ্ছে উন্নয়নের আঁচ। দেশ উন্নত হচ্ছে, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। এতে কাদের চোখ টাটাইতেছে আমরা বুঝি না? কাদের গোলামরা এই উন্নতির অবসান চায় তাদের আমরা চিনি না?

তিরিশ লাখ শহীদের রক্ত হাতে মাখা যুদ্ধাপরাধীদের যারা ক্লিনচিট দিতে চায়, যারা শহীদের সংখ্যা নিয়া মশকরা করে, যারা এতিমের হক মারাদের শাসনক্ষমতায় ফেরাতে চায়, গ্রেনেড হামলাকারী, জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকদের ক্ষমতায় আনতে চায়, তাদের কথায় আপনারা শেখ হাসিনাকে ত্যাগ করবেন? সিরিয়াসলি? ডিএনএ টেস্ট করান প্লিজ, দেখেন কারা আপনার কাজিন!

অমি রহমান পিয়াল: ব্লগার।
[লেখাটি ফেসবুক থেকে নেওয়া]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত