সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ এপ্রিল, ২০২১ ২০:৫৩

মমতাজের ‘সম্মানসূচক ডিগ্রি’ নিয়ে বিতর্ক

লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী ও সাংসদ মমতাজ বেগমের ‘সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

গত শনিবার (১০ এপ্রিল) ভারতের তামিলনাড়ুর ‘গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাকে সম্মাননা দেয়। তারা উল্লেখ করে, বিশ্বের প্রথম শিল্পী হিসেবে ৭০০টির বেশি একক অ্যালবামের রেকর্ড, সুদীর্ঘ ৩০ বছর বাংলা গানকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা ও সমাজসেবা ছাড়াও নানামুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রেখে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মমতাজ। যে কারণে তারা বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শনিবার ‘ডক্টর অব মিউজিক’ পদক প্রদান করে। এটি দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. পি. ম্যানুয়েল।

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন মমতাজ নিজে। সোমবার (১২ এপ্রিল) দেশে ফিরেছেন। পদকপ্রাপ্তির অনুভূতি জানিয়ে তখন এ শিল্পী বলেন, ‘এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। ৩০ বছর ধরে আমি মা-মাটির গান করে চলেছি; মানুষের সেবা করেছি। এই প্রাপ্তি কাজ করতে আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করবে।’

এদিকে, মমতাজ বেগমের এই সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রাপ্তির সংবাদ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ২০২০ সালে ‘গ্লোবাল পিস ইউনিভার্সিটি’ নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠান চলাকালে চেন্নাই পুলিশের অভিযানের বিষয়টিও সামনে এসেছে। অনেকেই দাবি করছেন, গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটি নামে স্বীকৃত কোনও প্রতিষ্ঠানই নেই ভারতে! অভিযোগ উঠেছে, টাকার বিনিময়ে উক্ত প্রতিষ্ঠান এই সম্মাননা দিয়ে থাকে। প্রশ্ন উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট ডোমেইন-হোস্টিং নিয়েও।

সমালোচনার এসময়ে এনিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেন মমতাজ। তিনি জানান, ‘ভুয়া বলে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আসছে, সেটা এটা নয়। তারা আমার সঙ্গে গত বছর থেকে যোগাযোগ করেছে। করোনার কারণে আমি ডিগ্রিটি গ্রহণ করতে পারিনি। তাই তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। আমি যাচাই-বাছাই করে দেখেছি।’

সাংসদ মমতাজের এই ডিগ্রি সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক লিখেন, ‘‘আমাদের কিংবদন্তি লোকগান শিল্পী এবং সংসদ সদস্য মমতাজ ভারতের গ্লোবাল হিউম্যান পিস নামের একটি ওয়েবসাইট ভিত্তিক ‘ইউনিভার্সিটি’ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি জোগাড় করেছেন। উনার দেখাদেখি আমিও একটা ডক্টরেট কিনতে সেই সাইটে ঢু মেরেছিলাম, কিন্তু ব্যান্ডউইথ লিমিট ক্রস করায় ডক্টরেটের দোকানটি আপাতত বন্ধ আছে। মনে হচ্ছে, মমতাজের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে আমার মতো আরও অনেকেই সাইটে দামাদামি করতে গেছেন। আমাদের সব পত্রিকা অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে এই খবরটি ছেপেছেন, কোথা থেকে কেমনে এই ডিগ্রি এসেছে সেটা গুগল করার মতো সময় তাদের হয়নি। এতে করে মমতাজের সম্মানসূচক ডক্টরেটের উসিলায় উনার সম্মানে বরকত হোক, এই দোয়া আমিও করি।’’

আরিফ জেবতিক আরও লিখেন, ‘‘সমস্যা এখানে নয়। সমস্যা হচ্ছে ইন্ডিয়া সরকার কিন্তু এই ধরনের ফেইক ভার্সিটিগুলোর বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে। মমতাজ যে ওয়েব ভার্সিটি থেকে 'ডক্টরেট' নিয়েছেন সেই ভার্সিটি গত ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে চেন্নাইয়ে এক হোটেলে এরকম 'ডক্টরেট' প্রদানের অনুষ্ঠান করেছিল যেখানে ঐদিন মমতাজের মতোই ১২০ জনের 'সম্মানসূচক ডক্টরেট' দেয়ার অনুষ্ঠান ছিল। পুলিশের হানা টের পেয়ে সেই সম্মানসূচক ডিগ্রিপ্রত্যাশী লোকজন পড়িমরি করে দৌড়ে পালাতে গিয়ে অনেকেই উস্টা খেয়ে পায়ের নখ ভেঙেছিলেন।’’

চিকিৎসক ও অ্যাক্টিভিস্ট জোবায়ের আহমেদ ফেসবুকে লিখেন, ‘‘গ্লোবাল পিস ইউনিভার্সিটি তামিলনাড়ু মাত্র ২০ হাজার রুপিতে ডক্টরেট ডিগ্রির সার্টিফিকেট বিক্রি করে। এই ইউনিভার্সিটি একটা ফেইক ইউনিভার্সিটি। আপনি চাইলেই নিজের টাকায় একটা ডক্টরেট ডিগ্রি কিনে নিজেকে সম্মানিত করতে পারেন।’’

জোবায়ের আহমেদ ফেসবুকে এই ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠান চলাকালে ভারতের পুলিশের অভিযানের সংবাদ লিঙ্কও ফেসবুকে শেয়ার করেন।

জানা যায়, ভারতের ৯৭৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটির নাম। তাদের কেন্দ্র পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় ৫৪টি, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় ৪২৫টি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ৪২৫টি, এবং ইউজিসি অ্যাক্ট-১৯৫৬ এর তিন সেকশন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ্য করা হয় আরও ১২৫টি প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম নেই।

এদিকে, সাংসদ মমতাজের দাবি সেখানে আগত অতিথি সবাই বেশ সম্মানীয়। তিনি ছাড়া আরও যে ৪-৫ জন ডিগ্রি পেয়েছেন, তারা আগেও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

মমতাজ বলেন, ‘আমি ছাড়াও চেন্নাইয়ের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি অতিথি হিসেবে ছিলেন। এরমধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবুল কালাম ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর, লোকাল চ্যানেলের মালিক, কমিশনারসহ অনেকই ছিলেন। একই সময়ে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন চেন্নাইয়ের সাবেক জেলা জজ থিরু এজে মুরুগানানথাম ও তামিলনাড়ুর আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু খলিফা মাস্তান সাহেব। এছাড়া পুরো অডিটোরিয়াম পূর্ণ ছিল। এত মানুষ ভাড়া করে নিয়ে আসা যায় না। কিংবা মেকি হলে তা বোঝা যাবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সাংসদ হন মমতাজ। ২০১৮ সালে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন এই শিল্পী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত