ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ

৩১ জুলাই, ২০২১ ০০:৩৬

উপকমিটির সদস্যদের জবাবদিহির মধ্যে আনা হোক

ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপকমিটিতে স্থান পাওয়া মনির, সাহেদ, পাপিয়া কিংবা হেলেনাদের কীর্তিকলাপ যখন ফাঁস হয় তখন এইসব উপকমিটিতে স্থান পাওয়া দলের সত্যিকারের ত্যাগী ও আদর্শবান নেতাকর্মীদের মানসিক অবস্থা কেমন হয় সেটা আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়! তখন নিশ্চয় ক্ষোভ লজ্জা আর অপমানে এইসব নেতাকর্মীদের নিজেই নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হয় কিংবা কচুগাছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মাহুতি দিতে মন চায়!

আমরা জানি, প্রতিষ্ঠার শুরুতে আওয়ামী লীগে এমন উপকমিটি আর এমন শ'য়ে শ'য়ে সহ-সম্পাদকের পদ-পদবি ছিলো না, হালে করে এর সৃষ্টি হয়েছে। বাড়তি নেতাকর্মীর চাপ এবং সংগঠনের বিস্তৃতির কারণে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী হয়তো মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই এই পদগুলোর সৃষ্টি হয়েছিলো। হয়তো ধারণা করা হয়েছিলো দেশের আনাচেকানাচে বিভিন্ন অনাচারের কথা কিংবা দেশের একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে থাকা সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীর সমস্যা ও অসহায়ত্বের কথা এইসব সহ-সম্পাদকের দ্বারা সরাসরি ও তড়িৎবেগে কেন্দ্রে পৌঁছাবে এবং কেন্দ্রও সেই অনুযায়ী সরাসরি তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে পারবে।

কিন্তু হায়! বিধি বাম! ঘটেছে পুরো উল্টোটা! এইসব মুড়িমুড়কির মতো শতশত সহ-সম্পাদকেরা আজ পর্যন্ত তৃণমূলের পোড় খাওয়া কোন নেতাকর্মীর কোন উপকারে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে এসেছে বলে শুনিনি। এদের দ্বারা সংগঠনও কখনো কোনভাবে লাভবান হয়েছে বলেও শুনিনি উল্টো আরও এদের বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারী, অনৈতিক ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের দ্বারা সংগঠনকেই বিব্রত হতে দেখেছি বারবার।

আমরা দেখেছি, এইসব সহ-সম্পাদকেরা বিভিন্ন উপকমিটিতে তাদের অন্তর্ভুক্তিকে তুরুপের তাস বা ওপেন ক্রেডিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করে যেখানে সেখানে আকামকুকাম করে নিজের আখের গুছিয়েছে কিন্তু সংগঠনের বারোটা বাজিয়ে চলেছে প্রায় অবিরতভাবে।

যুগের বিবর্তনে এবং সময়ের চাহিদা অনুযায়ী আমরা সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা এইসব উপকমিটি এবং এইসব সহ-সম্পাদকের পদ-পদবির বিরোধিতা করতে চাই না। কিন্তু আমরা চাই, এমন মুড়িমুড়কির মতো শ'য়ে শ'য়ে উপকমিটি না করে এবং তাতে কোনরকম বাছবিচার ছাড়াই এমন হাজার হাজার সহ-সম্পাদক অন্তর্ভুক্ত না করে এদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা হোক এবং শুধুমাত্র ত্যাগী নেতাকর্মীদেরকেই অন্তর্ভুক্ত করা হোক এবং প্রতি তিনমাস পরপর এদের সাংগঠনিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে এদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা হোক। এতে যারা সহ-সম্পাদক হবেন তাদের যেমন সামাজিক ও সাংগঠনিক গুরুত্ব বাড়বে তেমনি সংগঠনও প্রকৃতার্থে উপকৃত হবে।

আইরনি হলো, আমরা সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা আগেও বহুবার এমন আওয়াজ দিয়েছি কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। উল্টো আমরা দেখেছি এইসব সহ-সম্পাদকদের যখন বিভিন্ন উপকমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তখন সংগঠনের একশ্রেণির নীতিনির্ধারক নেতারা সংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে এইসব ভুঁইফোঁড় হাইব্রিড আর তোষামোদকারীদের মূল্যায়ন করেন। ত্যাগী নেতাকর্মী ব্যতিরেকে এইসব হাইব্রিড চাষি নেতারা কেন এইসব হাইব্রিডদের মূল্যায়ন করেন সেটা অনেকের কাছেই ওপেন সিক্রেট।

নীতিনির্ধারকেরা যদি এভাবেই চলতে থাকেন এবং সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে যদি কার্যকারী ফিল্টার ব্যবস্থা চালু না করেন তাহলে এমন পাপিয়া, হেলেনা, সাহেদ আর মনিররাই একসময় সব খেয়ে ফেলবে!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত