মাসকাওয়াথ আহসান

০৬ আগস্ট, ২০১৬ ২২:৩২

রম্য : নোবেল পুরস্কার নির্মূলে এগিয়ে আসুন!

নোবেল পুরস্কার ইহুদী-নাসারাদের প্রচলিত একটি পুরস্কার। ডিনামাইটের আবিষ্কারক আলফ্রেড নোবেল ইসলাম ধর্মকে ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই এই পুরষ্কার চালু করেন। চালু লোক তাই পুরস্কারের মধ্যে ডিনামাইট পুরে দিয়ে গেছেন। বেশীরভাগ নোবেল পুরস্কার ইহুদী-নাসারা পেয়েছে। মুসলিম সমাজে এতো জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা; সারাক্ষণ মুসলিমরা গবেষণাগারে উদ্ভাবনে ব্যস্ত; অথচ তাদের মূল্যায়ন নেই।

টাকা-টুকা বিষয়ে নোবেল সমমর্যাদার অর্থনীতির পুরস্কারটি প্রত্যেক বছর মুসলমানদের পাওয়ার কথা। অথচ তা হয়না। এরপর আর এসব পুরস্কারের ওপর ভরসা কী করে রাখি! বাংলাদেশের খ্যাতনামা অর্থবিদ দরবেশ এ পুরস্কার আজো কেন পেলেন না; সেটি বোধগম্য নয়। অর্থশাস্ত্রের জাদুকর দেশপ্রেমিক মানুষটি তার শেয়ার-বাজার উত্থাপন ও অবনমনের ধ্রুপদী তত্ত্বের জন্য খ্যাত। অথচ ওরা নোবেল মর্যাদার অর্থনীতির পুরস্কার দেয় কাফের অর্থনীতিবিদদের।

কিন্তু লক্ষ্য করুন, নোবেল মর্যাদার অর্থনীতির পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেন ভুল-ভাল তত্ত্ব দিয়ে পুরস্কার পেয়েছেন। উনি বলেছেন, যে দেশে সংবাদপত্র আছে সে দেশে কখনো দুর্ভিক্ষ হয়না। কিন্তু পাঠকের চেয়ে সংবাদপত্র বেশী এমন দেশে দুর্ভিক্ষ হয়; বন্যায় অনাহারী মানুষ মারা যায়। অন্যদিকে অর্থবিদ দরবেশের প্রতিটি সূত্র সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। জনমানুষের উপকার করতে গিয়ে এই মহানুভব অর্থবিদের বাড়ীটি আজ নিলামে উঠেছে। যুগে যুগে পরোপকারী মানুষ কষ্ট পান।

আর পুরস্কার পান অমর্ত্য সেনেরা; যাদের "গ্রোথ উইদ ইক্যুইটি" সূত্রটি এই মুহূর্তে অর্থনীতির সবচেয়ে ভ্রান্ত ধারণা। গ্রোথের সঙ্গে ইক্যুইটির কোন সম্পর্ক নেই; ইক্যুইটির সঙ্গে হ্যাপিনেসের কোন সম্পর্ক নাই। যেসব দেশ কল্যাণরাষ্ট্র; রাষ্ট্র প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের দায়িত্ব নেয়; সেসব রাষ্ট্রের মানুষ চরম অসুখী। আর যে সব রাষ্ট্রে প্রতিমুহূর্তে মৌলিক মানবাধিকার হরণ করা হয়; সেসব রাষ্ট্রের মানুষ চরম সুখী। সাম্প্রতিক সমীক্ষাগুলো তাই অর্থনীতির জগতে "স্কুল অফ অমর্ত্যে"র চেয়ে "স্কুল অফ দরবেশে"র প্রায়োগিক সাফল্য বেশী করে তুলে ধরেছে।

স্তম্ভিত হয়ে যাই যখন "পিস টিভি"-র বিশ্বনন্দিত শান্তি কমিটির প্রধান জাকির নায়েক নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননা। সারাক্ষণ এতো এতো শান্তির কথা বলে যিনি মুসলিম বিশ্বে শান্তির গোলাপ পানি ছিটিয়েছেন; তাকে কেন চোখে পড়ে না নোবেল কমিটির। জাকির নায়েক এতো শান্তির কথা বলেন যে, কিছু পরোপকারী মুসলমান আবেগাপ্লুত হয়ে আত্মঘাতী হয়ে সঙ্গে প্যারিস-ব্রাসেলসের কাফেরদের বেহেশতে নিয়ে যান। আর নিয়মিত স্বধর্মের মানুষ নিয়ে বেহেশত যাত্রা তো চলছেই। ভাবা যায় জাকির নায়েকের শান্তির বাণী কতটা শান্তিধারণ করলে মানুষ আত্মঘাতী হয়ে অন্যদের জন্য বেহেশতের পাসপোর্ট বিতরণ করতে পারে। সুতরাং জাকির নায়েক যে শান্তি পুরস্কার পাননা; ঐ নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্থহীন।

নোবেল কমিটি কতিপয় দিকভ্রান্ত মুসলমানকে নিয়ে গিয়ে হারাম রেড-ওয়াইন খাইয়ে ব্রেণওয়াশ করে নোবেল পুরস্কার দিয়ে তাদের নিজ নিজ মুসলিম দেশে পাঠিয়ে দিয়ে দেশটার দেশপ্রেমিক পরোপকারী সরকার ও ধর্মপ্রাণ মানুষকে দিকভ্রান্ত করে। নোবেল ভিলেনরা মিশরের লিবের‍্যালিজম খোর লেখক নাগিব মাহফুজকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দিয়ে মিশরীয় সমাজের এতো বড় ক্ষতি করেছে যে সেইখানে বেলি ডান্স হয়; নীল নদের পবিত্র পানি অপবিত্র হয়। পর্যটন স্টিমারে এইসব বেলি ডান্স আজ প্রায় অপবিত্র করে ফেলেছে নীলনদকে। নাগিব মাহফুজ তার কায়রো ট্রিলজির "প্যালেস ওয়াক" উপন্যাসে নানাভাবে বেলেল্লাপনাকে উস্কে দিয়েছেন। এই উস্কানিপ্রাপ্ত তরুণেরা তাহরীর স্কোয়ারে এসে গণ্ডগোল করেছিলো। অনেক কষ্টে মুসলিম পিসফুল ব্রাদারহুড গণ্ডগোলের দখল নিয়ে যখনই খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে গেলো; অমনি নাগিব মাহফুজ ও বেলি ডান্সের ভক্ত মুরসি এসে খিলাফত বিপ্লবকে মুরগী করে দিলো ; প্যালেসে ঢুকে পড়লো ওয়াক করে। এটা যে নোবেল কমিটির ষড়যন্ত্র তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

পাকিস্তানের পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর সালাম নোবেল কমিটির আরেক অভিশাপ; যাকে পাকিস্তানে প্রেরণ করে ইসলামের বিরাট ক্ষতি করা হয়েছে। মুসলমান শিক্ষক শুধু মুসলমান ছাত্র পড়াবে; কিন্তু না সালামের ছাত্ররা খ্রিস্টান, ইহুদী, হিন্দু আরো নানা ধর্মের। মুসলমানও কিছু আছে; কিন্তু তারা সালামের বিজ্ঞান শিক্ষা করে উচ্ছন্নে গেছে। অবশ্য পাকিস্তানের অত্যন্ত শান্তি কমিটির সদস্যরা তাকে ছেড়ে দেয়নি। সারাজীবন তার গৃহের দিকে পাথর নিক্ষেপ করেছে; শেষে গিয়ে কবরের স্মৃতিফলক ভেঙে দিয়ে এসেছে।

নোবেল কমিটি তাদের নতুন ষড়যন্ত্র মালালাকে শিশুকাল থেকে বড় করছে, পাকিস্তানের শান্তিকমিটির তালেবানদের জীবনটা ঝালাপালা করার জন্য। এই মেয়ের আব্বা কাফের কার্ল মার্কস চর্চা করতো। এতো বড় সাহস তার! কোনদিন বেহেশতী জেওর নামের অমূল্য গ্রন্থ কেউ তার হাতে দেখে নাই। এইজন্য তালেবানরা আর এই ষড়যন্ত্র মালালাকে পাকিস্তানে ঢুকতে দিবেনা। বেহেশতের পাসপোর্টের পরিবর্তে তার জন্য দোজখের পাসপোর্ট রেডি করাই আছে। নোবেল কমিটির ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে পাকিস্তানের তালেবর তালেবানরা। মালালার কত বড় সাহস সে নারী শিক্ষার প্রচারণা চালায়। সে কী জানে না, নারী গৃহে থাকিবে এবং উহার স্বামীর পা টিপিবে; ইহাই নারীর জন্য তালেবান শান্তি কমিটির জীবন বিধান।

ঐ দিকে ইরানের এক বব কাট চুলের পথভ্রষ্ট নারী শিরিন এবাদিকে নোবেল কমিটি নিশ্চয়ই তার নাচ-গান দেখে শান্তি পুরস্কার দিয়েছে; এমনটাই মনে করে অনেক খোমেনি ভক্ত শান্তি কমিটির মেম্বর। নোবেল শান্তি পুরস্কার খালি নোবেল কমিটির কাছে পেলেই হয়না; ইরানের শান্তি কমিটি যদি তা মেনে না নেয়; তার আর কোন মূল্যই থাকে না। শিরিন এবাদির ঐ এক রোগ, অযথা নারী অধিকারের কথা বলেন, ঐটা শুনে বখে যায় ইরানের অবলা নারীরা। তারা বোরখা পরতে অস্বীকৃতি জানায়; কিছু স্ত্রৈণ পুরুষ নিজেরা বোরখা পরে নারীকে বোরখা পরতে বাধ্য করার প্রতিবাদ করে। শিরিন এবাদিই ইরানের সমাজটাকে এরকম আদব-লেহাজহীন করে তুলেছেন; অন্যথায় কীরূপে তাহারা খোমেনির বিধান ভঙ্গ করে।

আর বাংলাদেশের মতো মদিনা সনদের ভিত্তিতে চলা; ইসলামের হেফাজতে শান্তি-সংকুল দেশের এক নোবেল শান্তি বিজয়ী ইউনূস ইদানীং ব্রাজিলে গিয়ে অগ্নি উপাসনা করেছেন। এই ইউনূসই বাংলাদেশের সমস্ত অশান্তির কারণ। সর্বদলীয় "জ্বালিয়ে দাও-পুড়িয়ে দাও" স্লোগানের মূল কারণ ইউনূসের এই অগ্নি উপাসনা। আর যে দেশে সততার পরাকাষ্ঠাদের বসবাস; যেখানে কোন ঘুষ-দুর্নীতি-ধনী-গরীবের ব্যবধান নেই; যেখানে জনহিতকর জনপ্রতিনিধিরা মানুষকে ভোটের আগে অপরিশোধ যোগ্য ঋণ দেয়; সেইখানে ইউনূস মানুষকে ঋণ দিয়ে সুদ খান। ইসলাম এইসব সুদের ব্যবসা অনুমোদন করে না। যে দেশের অত্যন্ত সৎ কিছু দেশপ্রেমিক লোক চারটা পদ্মা সেতু বানানোর টাকা শান্তিপূর্ণভাবে পাচার করেছে বা নিয়মিত করে ; সেই দেশের পদ্মা সেতু নির্মাণে বাধা দিয়েছেন দেশের শত্রু ইউনূস। নোবেল কমিটি চেয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে। কারণ পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশ এতো উন্নতি করেছে যে নরওয়ে-সুইডেন উন্নয়নে পিছে পড়ে গেছে।

কাজেই নোবেল পুরস্কার মুসলিম দেশগুলোর জন্য অভিশাপ ডেকে এনেছে। মুসলিম দুনিয়াকে খুবই সচেতন হতে হবে। ষড়যন্ত্রের দিকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। মসজিদ সমূহের খোতবায় নোবেল পুরস্কারের বিরুদ্ধে অন্তত: একটি দুটি কথা থাকা অতীব জরুরী; পাছে ভবিষ্যতে আর কেউ নোবেল পুরস্কারের দিকে হাত না বাড়ায়। কোন মুসলমান নোবেল পুরস্কার পেলেই তাকে নিয়মিত ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখে দোররা মারতে হবে; সহিভাবে গালিগালাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে সংস্কৃতির মেজোমামাদের কাছ থেকে টিপস নিতে হবে যারা ফতুয়া পরে লিবের‍্যালিজমের বাণী দিয়ে বেড়ায়; কিন্তু প্রয়োজনের সময় ঠিকই কনজারভেটিভ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দেয়। এমন সংস্কৃতি মামাদের সঙ্গে হেফাজতের নেতাদের সাংস্কৃতিক অন্ত্যমিল প্রগাঢ়।

এই সম্মিলিত পিং পং আদর্শকে কাজে লাগাতে হবে নোবেল পুরস্কার নির্মূলে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত