সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

০২ অক্টোবর, ২০১৬ ১৫:৪৫

এটা আবেগ নয়, উন্মত্ততা

শনিবার বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ চলাকালীন নিরাপত্তা বাধা টপকে এক দর্শক ঢুকে পড়েন মাঠে। মাঝমাঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন টাইগার দলপতি মাশরাফিকে। এই ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এখন তোলপাড়।

মাশাফির প্রতি দর্শকদের ভালোবাসা, ভক্তকে রক্ষায় মাশরাফির ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা করছেন অনেকে। একইসঙ্গে নিরাপত্তা কড়াকড়ির মধ্যে বিনা বাধায় একজন দর্শকের মাঠে ঢুকে পড়া নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। 

ক্রীড়া সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রণি ফেসবুকে লিখেছেন-

'আবেগ? না, মোটেও তা নয়। এটাকে আবেগ বলে না। এটা উন্মত্ততা। অন্ধ উন্মত্ততা। এটা শিয়ার স্টুপিডিটি।

মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরতে চান? মাশরাফিকে এক নজর দেখার জন্য মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার ঘটনা আমরা অনেক জানি। গেটের সামনে, বাসার রাস্তায়, মসজিদের পথে, নানা জায়গায় দিনের পর দিন ঘোরাঘুরি করেছেন, এমন অনেকের কথা জানি। ম্যাশের সঙ্গে যখন ওদের বাড়ি গিয়েছিলাম নড়াইলে, আমি নিজে দেখেছি রংপুর থেকে লোক চলে এসেছে নড়াইলে। একনজর দেখতে।

রাস্তাঘাটে অনেক সময় নরম্যালি ঘরে বেড়ান মাশরাফি। অনেকে এসে ছবি তুলতে চান। মাশরাফি সবসময়ই যে খুব খুশি মনে সেলফি তোলেন, তা নয়। তার মতে, সেলফি ব্যাপারটা মানুষের আবেগ কেড়ে নিয়েছে। আগে লোকে দেখা হলে, হ্যান্ডশেক করত, জড়িয়ে ধরত, কথা বলত, অটোগ্রাফ নিত, কুশলাদি জিজ্ঞেস করত। এখন সেলফি তুলতে পারলেই কাজ হয়ে গেল! কিন্তু সেলফি ছাড়া, রাস্তাঘাটে কেউ যদি হাতটা বাড়িয়ে দেয়, মাশরাফি তাকে টেনে নিয়ে বুকে জড়ান। নিজের চোখে অসংখ্যবার দেখেছি। বাংলাদেশের যে কোনো সেলিব্রেটিকে জড়িয়ে ধরার চেয়ে সহজতম ব্যাপার মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরা।

যেটা বলছি, মাশরাফির প্রতি আবেগ দেখানোর শত শত পথ আছে, হাজারটা উপায় আছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাঝখানে মাঠে ঢুকে যাওয়া কোনো ভাবেই…আই রিপিট, কোনো ভাবেই সঠিক পথ নয়। কোনো ভাবেই, কোনো যুক্তিতেই সমর্থনযোগ্য নয়।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি এটা নিয়ে খুব সফটলিই বলেছেন। সিকিউরিটির লোকদের বলেছেন যেন ছেলেটির সমস্যা না হয়। প্রথমত, মাশরাফির কাছ থেকে এটা প্রত্যাশিতই। দুর্ভাবনার ব্যাপার থাকলেও মাশরাফি সেটা কখনোই বলবেন না। দ্বিতীয়ত, এটা নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক সামান্যতম নেগেটিভ কিছুই বললেও আন্তর্জাতিক নিউজ হবে। বিসিবির নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। অধিনায়ক তা অবশ্যই চাইবেন না।

কিন্তু দর্শক হিসেবে আমাদের দায়িত্বটা মনে রাখা উচিত। ব্যাপারটা নিয়ে হয়ত খুব বেশি কিছু হবে না। না হওয়াই ভালো। কিন্তু এসবকে উৎসাহ-প্রশ্রয় দেওয়া মানে ভবিষ্যতকে শঙ্কায় ফেলা। বিশেষ করে দেশের ক্রিকেটে যখন খুবই সেনসিটিভ সময়। ইংল্যান্ডকে অনেক কষ্টে আনা গেছে, মাত্রই তারা এসেছে। যদি বড় কিছু হতো? মাশরাফিও কিন্তু ওই দর্শককে ছুটে আসতে দেখে শুরুতে ভড়কে গিয়েছিল। পরে বুঝতে পেরে স্বাভাবিক হয়েছেন। মাশরাফি বলেই দারুণ ভাবে সামলাতে পেরেছেন। অন্য কেউ বা অন্য কিছু যদি হতো... বড় কিছু হতেই পারত! দেশের ক্রিকেটের অনেক বড় ক্ষতি হতে পারত।

বিসিবির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নগুলিও আরও উচ্চকিত করছে এই ঘটনা। এমনিতে হম্বি-তম্বির অভাব নেই। কাজের বেলায় ঠনঠন!

আবারও বলছি, আবেগের ব্যাপার আমার মাথায় আছে। কিন্তু এটা কোনো ভাবেই আবেগ নয়। মাশরাফিকে নিয়ে আবেগ কখনোই এত স্বস্তা নয়। মাশরাফিকে নিয়ে আবেগের অবিশ্বাস্য, রোমাঞ্চকর, অভাবনীয় সব গল্প-উদাহরণ আছে। দেশের ক্রিকেটকে, মাশরাফিকে বিপদে ফেলে স্বার্থপরের মতো স্টান্টবাজি কখনোই আবেগ হতে পারে না।

মাশরাফিকে নিয়ে আবেগ হওয়া উচিত পবিত্র, প্রশ্নবিদ্ধ নয়!'

আপনার মন্তব্য

আলোচিত