রাজেশ পাল

১৯ অক্টোবর, ২০১৬ ১৬:৪১

সোবহানরা আসলে একদিনে তৈরি হয় না

সোবহানরা আসলে একদিনে তৈরি হয় না। নষ্ট সমাজের অসুস্থ ব্যবস্থাপনা , ধীরে ধীরে একটু একটু করে তৈরি করে এদের্। একটি সমাজে যখন অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাড়ায় , নীতির স্থান দখল করে দুর্নীতি , তখন সেই সমাজে সোবহানরা জন্ম নেয় অবধারিতভাবেই।

কোন সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যখন অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভবনা  তৈরি হয় , তখন স্বাভাবিকভাবেই একেবারে গোবেচারা মানুষটিও অপরাধী হয়ে উঠার উৎসাহ পায়। আর সেক্ষেত্রে বাগেরহাটের সোবহানদের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য নর্দমার কীটেরা যে মারাত্মক বেপরোয়া হয়ে উঠবে সেকথা বলাই বাহুল্য।

বাগেরহাটের নির্যাতিতা গৃহবধূটির অপরাধ (!) ছিলো দুটি। একে সে হতদরিদ্র পরিবারের , তার উপরে আবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। যে সমাজে "গরীবের বৌ সবার ভাবী" বলে বিবেচিত হয় , যে সমাজে পূর্ণিমার মাকে হাতজোড় করে ধর্ষকের সামনে নতজানু হয়ে বলতে হয় ," একজন করে করে আসো বাবা। না হলে আমার মেয়েটা বাঁচবে না" , যেখানে ইয়াসমিনের মৃতদেহ পড়ে থাকে রক্ষকের ভক্ষণে পরিণত হয়ে , কারাগারের নিরাপদ প্রকোষ্ঠে ও লাশ হয়ে যায় মহিমা , পাহাড়ের মেয়ে কল্পনা চাকমা হয়ে যায় নিরুদ্দেশ , আর বারেবারে পোস্টমর্টেম শেষে মিতুর অতৃপ্ত আত্মার অভিশাপ নিয়মিতভাবেই করে চলে অরণ্যেরোদন , সেখানে সোবহানরা মনে করতেই পারে যে এসব করা তাদের অধিকারের (!) পর্যায়েই পড়ে।

একাত্তরের কুখ্যাত কলাবরেটর চরমোনাই এর পীর এদের ফতোয়া দিয়েছিল "গণিমতের মাল" বলে। আজ স্বাধীনতার চার দশক পরে এসেও সোবহানের মতো দেশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পীর সাহেবের অসংখ্য ভাবশিষ্যরা আজ সেই ফতোয়া বাস্তবায়নের পথ ধরে তাই "গণিমতের মাল" ভাগবাটোয়ারা নিয়ে তাই আজ বড় বেশীই উন্মত্ত হয়ে উঠেছে যেন পৈশাচিক উল্লাসে।

জর্জ বানার্ড শ বলেছিলেন , " When you see a blind man on the street, just kick him in the back. Because you don't have to be more gracious than God." আর তাই স্বয়ং স্রষ্টা যাদের দরিদ্র আর সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্য করে "জন্মই আজন্ম পাপের " অভিশাপে অভিশপ্ত করেছে , তাকে রাতের পর রাত সোবহানরা ধর্ষণ করলে , স্বামী বাধা দিতে চাইলে তাকে খুন করার চেষ্টা চালালে , পায়ের গোড়ালি কুপিয়ে আলাদা করে ১৫ দিন বিনা চিকিৎসায় আটকে রেখে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করলেও তাই আমাদের অনুভূতি আর জাগ্রত হয়না , নির্লিপ্ততই থেকে যায় এসব "স্বাভাবিক" ব্যাপারে।এভাবেই ধীরে ধীরে তিলে তিলে  এই রাষ্ট্র ও সমাজ দলে দলে জন্ম দিয়েছে চলেছে এইসব সোবহানদের্। দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষলে সে যে একদিন পাল্টা ছোবলও দিতে পারে , সেটা আসলেই ভেবে দেখেন কয়জন?

কবি নবারুণ ভট্টাচার্যের "ইতরের দেশ" কবিতার মতোই বলতে ইচ্ছে করে ,

"আমি একটি ইতরের দেশে থাকি
এখানে বণিকেরা লেখকদের উদ্ভাবন করে
এবং লেখকেরা উদ্ভাবিত হয়।
আমি একটি ইতরের দেশে থাকি
যে দেশের বুদ্ধিজীবী অধ্যুষিত সরকার
শীতের ইথারের মধ্যে
গরীব মানুষদের ঘর ভেঙ্গে দেয় –
আমি একটি ইতরের দেশে থাকি
যেখানে অবশ অক্ষরমালা চিবুতে চিবুতে
কবিরা গরু হয়ে যায়-
উল্টোটাও যে হয় না এমনও বলা যায় না।
আমার ভাগ্য আমি নিজেই ভেঙ্গেছি
তাই বাতিল স্টিমরোলারের
কাছে বসে থাকি
বসে থাকি আর
রাস্তা বানাবার গল্প শুনি।

আমি একটি ইতরের দেশে থাকি ……"

ফেসবুক থেকে

আপনার মন্তব্য

আলোচিত