তপু সৌমেন

২০ অক্টোবর, ২০১৬ ১৩:৫৮

বাঙালির অপরিসীম ধৈর্য ক্ষমতা!

বহুদিন আগে লিখেছিলাম, “বাংলাদেশ একদিন হিন্দুহীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ভাবেন একটা দেশ একটাই ধর্মের মানুষ। আর কোন ধর্মের মানুষ নাই। কি চমৎকার না? দেখবেন সেদিন একটা রেকর্ড হবে গিনেস বুকে পৃথিবীর একমাত্র একটি ধর্মের দেশ – বাংলাদেশ” - মনে হয় খুব একটা ভুল বলিনি। আমি অবশ্য এর শেষটুকু দেখতে চাই আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের শেষ অঙ্কের মত।

একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান দেই - হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বক্তব্য অনুযায়ী এমনকি গতবছরের তুলনায়ই এই বছর শুধু ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের সংখ্যা ৩ গুন। আর একটা তথ্য দেই বাংলাদেশে এখন হিন্দুদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫ ভাগেরও কম।

আচ্ছা এখন কথা হলো কেন বার বার হিন্দুদের উপর অত্যাচার?
১। কারণ ইন্ডিয়াতে মুসলিমদের উপর অত্যাচার হচ্ছে।
২। হিন্দুরা যে ধর্ম পালন করে তা গ্রহণযোগ্য না।
৩। এদের মেয়েরা অন্য ধর্মের মেয়েদের চেয়ে বেশি খোলামেলা। (অধিকাংশ মহিলার পেটে কাপড় থাকেনা)
৪। এক ফেসবুক গ্রুপে পড়ছিলাম যে বাংলাদেশের সরকারী উচ্চ পর্যায়ে এতো বেশি হিন্দুরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন যে তাতে করে দেশ ইন্ডিয়ার অঙ্গরাজ্য হতে আর বাকী নাই, তাই প্রিয় স্বদেশ মাতৃভূমির রক্ষা করা কর্তব অতএব পরিশেষে হিন্দু হটাও।
৫। কলেজে যখন পরতাম একটা ভালো গল্প ছিল “হিন্দুদের মেয়েরা বেশ সেক্সি হয়” অতএব এই যুক্তিও আমি যোগ করে দিলাম।

ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই গুগল খুলে “হিন্দু মহিলা” খালি এইটা লিখুন দেখেন আমরা কি খুঁজে বেড়াই, এটা গুগলের দোষ না আমরা খুঁজি বলেই সে পপুলার সার্চ ক্রাইটেরিয়া হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখে।

কি বুঝলেন? খুব উপযুক্ত যুক্তি না? আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? তাইলে আর একটা ভালো বুদ্ধি দেই যেখানেই দেখবেন হিন্দুদের নিয়ে কোন লেখা তার নিচের কমেন্টগুলো পরে দেইখেন এর চেয়ে আরো বেশি যুক্তি তুলে এনে এই তালিকায় আপনিই যোগ করে দিবেন।

বাগেরহাটের মোল্লারহাটে সোবহান মোল্লা নামের যে লোকটা সংখ্যালঘু পরিবারের বৌটিকে ধর্ষণ করেছে, তলোয়ার দিয়ে বৌটির স্বামীর গলা কেটে খুন করার চেষ্টা করেছে, তারপর কোপ দিয়ে মেয়েটার পায়ের গোড়ালি কেটে নিয়েছে এবং সেই আহত মেয়েকে হাসপাতালে যেতে না দিয়ে পুরো পরিবারকে জিম্মি রেখে রক্তাক্ত মেয়েকেই ধর্ষণ করেছে ১৫ দিন ধরে- সেই সোবহান মোল্লার চেয়ে ক্ষমতাধর আর কোনো ব্যক্তি এইদেশে আপাতত আছে বলে আমার মনে হয় না। -
[মোল্লারহাটের ধর্ষণ: শুধু শুধু এতো ভাববেন না প্লিজ/ শারমিন শামস্; উইমেন চ্যাপ্টার, অক্টোবর ১৯, ২০১৬]

আদতেই কিন্তু তাই চিন্তা করেন কি বুকের পাঠা? এবং এই ব্যক্তি এখন কিন্তু আবার অনেকের কাছে হিরো কারণ ঐ উপরের যুক্তি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যে রেখেছে। বিশ্বাস হয়না? আবার বললাম বাগেরহাটের ঘটনার যত খবর পাবেন দয়া করে আগেই কমেন্ট গুলো চেক করবেন তাইলেই বুঝবেন।

আচ্ছা এখন কি হবে?
১। একটা মামলা হবে, তদন্ত কমিটি হবে, দু একদিন পেপারে আসবে।
২। এই ঘটনার শেষের গল্প আরো ভয়ংকর তা হবে সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারটির এদেশে টিকতেই পারবে না, চলে যেতে হবে হিন্দুর দেশ ভারতে বা অন্য কোথাও।
৩। দু’একদিনের মধ্যেই বৌটির চরিত্র নিয়ে বেশ কিছু রসালো গল্প বাজারে চলে আসবে, যা শুনে আপনি কিছু রিলিফ পাবেন এই ভেবে যে, যাক, দোষ তবে কিছু ওই বৌয়েরও ছিল! যা হইছে খাদিজার বেলায়ও।

আরিফ জেবতিক ভাইয়ের লেখাটার একটা অংশ এমন-

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বিলুপ্তির পর্যায়ে যে প্রাণিটি আছে সেটি আসলে সুন্দরবনের বাঘ কিংবা মেঘনা নদীর শুশুক নয়, এই প্রাণীটির নাম হিন্দু। এরা দিব্যি দেখতে মানুষের মতো, মানুষের মতোই হাসে-কাঁদে-ভাত খায় এবং আমাদের সকলের লাথি খায়। আমাদের ছোটবেলা আশেপাশে এই প্রাণিটি অনেক দেখতাম, এদের সঙ্গে যে আমাদের তফাৎ আছে এরকম না ভেবেই একসঙ্গে হেসে খেলে আমরা বড় হয়ে উঠেছি। তারপর আমাদের অগোচরেই তাঁরা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে শুরু করেছে।
[সুন্দরবনের বাঘ নয়, বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় ‘প্রাণীটির’ নাম হিন্দু/ আরিফ জেবতিক; সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম, অক্টোবর ১৯, ২০১৬]

এখনো সন্দেহ পোষণ করেছেন? আমি শুরুতে যে লাইন দিয়ে শুরু করছি তা একটা এজেন্ডা যদি মনে করেন তাহলে তার প্রায় ৭০% বাস্তবায়িত হয়ে গেছে; আর তো ৩০%!

দেশ ও এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদেরও সহ্য ক্ষমতা বাড়ছে। ও আপনাকে যেতে যেতে একটা চমৎকার তথ্য দিয়ে যাই - পৃথিবীতে বাঙালিরাই একমাত্র জাতি যাদের ধৈর্য ক্ষমতা আর যেকোনো প্রাণীর তুলনায় অপরিসীম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত