মাসকাওয়াথ আহসান

২২ অক্টোবর, ২০১৬ ১০:১১

অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা হোক কাউন্সিলের লক্ষ্য

উন্নয়নের প্রথম সূচক রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন। রাজধানী ঢাকার প্রধান প্রধান সড়ক বন্ধ রেখে দলীয় কাউন্সিল আয়োজন খুবই অনুন্নত এক রাজনৈতিক অপ-সংস্কৃতি। চীনেও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা জারী রয়েছে। কিন্তু চীনের কম্যুনিস্ট পার্টি কনভেনশানে বেজিং-এর মূল পথঘাট বন্ধ হয়ে যায়না। আওয়ামী লীগে যে আগামীমনষ্ক রাজনীতিক রয়েছেন; তাদেরকে ভবিষ্যতে এই দিকটিতে খেয়াল রাখতে হবে।

আর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনেক শ্রম ও ঘাম যাদের রয়েছে; পার্টি কাউন্সিল নিয়ে তাদের ভাবনা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যারা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়; সুতরাং আওয়ামী লীগ; তাদের মুখে পার্টি কাউন্সিল নিয়ে অতিশয়োক্তি স্বভাবতই বেমানান।

আজকাল বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করা যায়; ফেসবুকে পেশার জায়গায় ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ লেখা রয়েছে অসংখ্য তরুণের। এটি তীব্র বেকারত্ব ও রাজনীতিকে একটি মধুভান্ড হিসেবে উপস্থাপন করে।

একটি দেশের সব মানুষের জীবন একটি রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে পারে না। ঈদের দিনে ঈদ মুবারাক, পূজার দিনে পূজার শুভেচ্ছা জানানোর মত যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলের উপলক্ষটি। রাজনীতি সচেতনতা নাগরিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; কিন্তু নিজেকে আওয়ামী লীগ হিসেবে দেখাতে মরিয়া হয়ে ওঠাটা খুব বেশী সুস্থ আচরণ বলে মনে হয় না। এরকম বাহুল্যের সংস্কৃতি একবিংশে বেমানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রশ্ন করেছেন, এরকম কাউন্সিলের খরচ কোত্থেকে আসে; নিশ্চয়ই তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থেকেই প্রশ্নটি উত্থাপন করেছেন। আমার ধারণা আয়োজকরাও আয়োজনটির খরচে বাহুল্য বর্জন করেছেন। কিন্তু অতি-উৎসাহী লোক সবসময়ই থাকে; তারা যে কোন কাজের নান্দনিকতা নষ্ট করে দেয় খরচের বাহুল্যে আর বাগাড়ম্বরে।

বৃটিশ-পাকিস্তানীরা দখলদার শক্তি ছিলো; তারা সাধারণ নাগরিককে তাদের স্তব-সংকীর্তনে দেশীয় দালাল দিয়ে চাপ দেওয়াতো। কিন্তু আওয়ামী লীগ দখলদার শক্তি নয়; তাই এর স্তব-সংকীর্তন অপ্রয়োজনীয়; প্রতিটি নাগরিকের নিজের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটু সম্পর্ক দেখানো বাধ্যতামূলক নয়। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান ও সমসাময়িক নেতা-কর্মীদের অনেকেই এ সম্পর্কে সচেতন। তবে অনেকের মধ্যে একটা দখলদার ঔপনিবেশিক খোয়ারি রয়েছে; যেটি ঝেড়ে ফেলা সময়ের দাবী।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। ক্ষমতায় থাকার সূত্রে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে যেসব অপরাধী চাঁদাবাজি-ভূমি-জলমহাল-বালুমহাল দখল করে, জনগণের জন্য বরাদ্দ লুণ্ঠন করে, বিভিন্ন প্রকল্পে কমিশন খায়; আট বছরে দেশের সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতির মাঝে রেখেছে, খুন-ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত; তাদেরকে বেছে বেছে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করে আইনের আওতায় আনা খুব জরুরী।

সাধারণ মানুষের উপকার না করতে পারলেও; আওয়ামী লীগের মাধ্যমে যেন মানুষের অপকার না হয়; এটা একান্ত প্রত্যাশা। রাজধানীতে দলীয় কাউন্সিল চলার কারণে প্রধান সড়ক বন্ধ রাখায় জনজীবনে যে ভোগান্তি নেমে আসবে; হাসপাতালগামী এম্বুলেন্সকে পথ ঘুরে হাসপাতালে পৌঁছাতে গিয়ে যদি পথেই কোন নাগরিকের মৃত্যু ঘটে; তা হবে আওয়ামী লীগের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আওয়াম শব্দের অর্থই তো আমজনতা। কাজেই আওয়ামী লীগ কোনভাবেই ভিআইপি কালচার লালন করতে পারে না। তাই ভবিষ্যতে যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি দেবার সময়; সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধার দিকে প্রথমে নজর দিতে হবে।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সাফল্য প্রত্যাশা করি। ত্যাগী ও বর্ষীয়ান নেতা-নেত্রীর দীর্ঘায়ু প্রার্থনা করি। সৎ ও দেশপ্রেমিক তরুণ নেতৃত্বের অভিষেক ঘটুক সুবিবেচনার মাঝ দিয়ে।

  • মাসকাওয়াথ আহসান : সাহিত্যিক, সাংবাদিক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত