দেবজ্যোতি দেবু

২৪ অক্টোবর, ২০১৬ ১৫:১৯

আপনাকে স্যালুট ব্রড!

'সবসময় গোছানো ও সুসংবদ্ধ থাকবে। যাই করো, নিজের সর্বোচ্চটুকু দিতে হবে।' মায়ের দেয়া এই শিক্ষাটা অন্তরে ধারণ করে জীবন সাজিয়েছেন যিনি তিনি স্টুয়ার্ট ক্রিস্টোফার জন ব্রড। নির্ধারিত দিনের প্রায় ১২ সপ্তাহ আগে জন্ম নেয়া ব্রডের বেঁচে যাওয়াটা রীতিমত অসম্ভব ছিল। তখন যে ডাক্তারের অক্লান্ত পরিশ্রমে শিশু ব্রড বেঁচে যান সেই ডাক্তারের নাম ছিল 'জন'। তাই সেই ডাক্তারের নামটা ব্রডের নামের সাথে যুক্ত করে দেয়া হয় শিশু ব্রড সুস্থ হয়ে উঠার পর।

মাত্র ছয় বছর বয়সে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট ব্যাট হাতে নেন ব্রড। এরপর প্রায় ১১ বছরের দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পরে ১৭ বছর বয়সে এসে তার মনে হলো তার ফাস্ট বোলার হওয়া উচিত। একটা সময় তিনি ভেবেছিলেন হকি খেলোয়াড় হবেন! কারণ তখন তিনি হকিও খেলেছেন গোলকিপার হিসেবে। কিন্তু অবশেষে ফাস্ট বোলারেই নিজের গন্তব্য নির্ধারণ করেন ব্রড। ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার দীর্ঘকায় দেহের অধিকারী ব্রড কিশোর বয়সে স্টেট লেভেলে খেলতে গিয়ে বোলার জীবনের শুরুতেই ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে খরুচে ওভার করে অনেকটা হতাশ করে দেন নির্বাচকদের। পারিবারিক সমস্যা, তার উপর নির্বাচকদের তিরস্কার, সব মিলিয়ে অনেকটা ভেঙ্গে যাবার কথা ছিল তার। কিন্তু তিনি যে জন্মযোদ্ধা! দমে না গিয়ে তখন থেকেই ঘুরে দাঁড়ান ব্রড। একে একে চমক দেখাতে থাকেন ক্রিকেট বিশ্বকে। এক সময় চলে আসেন জাতীয় দলে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় ৩০ আগস্ট ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। এরপর থেকে আর কোনদিন পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। গতি আর সুইং দিয়ে তাক লাগিয়েছেন বহুবার। উপহার দিয়েছেন কিছু সৃষ্টিশীল বোলিং স্পেল। ২০১১ সালে হয়েছেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের টি-টুয়েন্টি স্কোয়াডের অধিনায়কও। যদিও ২০০৭ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে তার একই ওভারে ছয় বলে ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন যুবরাজ সিং। তবুও দমে যান নি ব্রড। পরের সিরিজগুলোতেই ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখিয়েছেন চমকের পর চমক।

৩০ বছর ৪ মাস বয়সী এই ইংলিশ ক্রিকেট তারকার ঝুলিতে হ্যাট্রিক সহ টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে মোট ৫৩৮ টি উইকেট। শুধু যে বোলিং দিয়েই নিজেকে জাহির করেছেন তিনি তা কিন্তু না। টেস্ট ক্রিকেটে একটি শতক এবং ১০ অর্ধশতক সহ করেছেন ২৬৪৭ রান। ওয়ানডেতে করেছেন ৫২৯ রান। বর্তমানে র‍্যাংকিং-এর ৪ নাম্বার বোলার হিসেবে নাম আছে তার।

শুধু ক্রিকেটার হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেও ব্রড চমৎকার মনের অধিকারী। বেবী ফেস ব্রডের মনটাও ঠিক বাচ্চাদের মতই। হাসিখুশি থাকা আর প্রতিপক্ষের সাথে ভাল ব্যবহার তাকে ক্রিকেট বিশ্বে অন্যরকম এক পরিচয় এনে দিয়েছে। তার এমন সৎ মনোভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজেও। টেস্ট ক্রিকেটে তুলনামূলক দুর্বল দলের প্রশংসা করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি ব্রড। শুধু তাই নয়, প্রথম ম্যাচ জিতে যাওয়ার পরে, জয় উদযাপন ফেলে ছুটে গেছেন প্রতিপক্ষ শিবিরের হতাশায় ভেঙ্গে পড়া খেলোয়াড়ের পাশে। টেনে তুলে সান্ত্বনা দিলেন সাব্বিরকে। দারুণ এই দৃশ্য ইংলিশ ক্রিকেটে সত্যি-ই বিরল!

মায়ের বলে দেয়া উপদেশ আজো মেনে চলা ব্রড, আপনাকে স্যালুট জানাই। বৈচিত্র্যময় ক্রিকেট জীবনের পাশাপাশি আপনার যে একটা সুন্দর মন আছে তা অনেকেই জানতো না। ইংলিশ শিবিরে আপনি এক ধ্রুবতারা হয়েই রাজত্ব করে যাবেন অনেক বছর। আপনার সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করি।

-ফেসবুক থেকে

আপনার মন্তব্য

আলোচিত