সৌমিত্র পালিত

১০ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৬:৩৭

ভেঙেছে দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়

ঢাকা
সবাই আছেন ঘরে, শ্বশুর-শাশুড়ি-ছেলেমেয়ে, জামাই। রেডিও বাজছে। দিল্লিতে এসে পৌঁছবেন সকাল আটটায়, ভারতীয় সময়। আমাদের সময় সকাল সাড়ে আটটা। আকাশবাণী থেকে ধারাবিবরণী শুরু হয়ে গেছে। দিল্লীর পালাম বিমানবন্দরে অসংখ্য জনতা, এসেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, চঞ্চল কণ্ঠে বিবরণী ভেসে আসছে। "এখনও বিমান দেখা যায় নি, কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে যাবে--"।

চোখের জল আজ বাধা মানতে চায় না। শুধু অশুভ ছায়া ভিড় করে আসে মনে। দীর্ঘ আকাশপথ, তাঁকে বিনাশ করার জন্য কত পাক চাতুরী, ষড়যন্ত্র। তিনি নির্বিঘ্নে ঘরে এসে পৌছতে পারবেন তো! আল্লাহ, তোমার অসীম করুণা।

"বিমান দেখা যাচ্ছে। সূর্যকরোজ্জ্বল আকাশে রুপালি রেখার মত বিমান, এগিয়ে আসছে, শেখ সাহেব আসছেন, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের জনক।"
ঘোষকের কণ্ঠ উত্তেজিত। জনতার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে 'জয় বাংলা'। মন শান্ত হও, বিপদে বা আনন্দে স্থির থাকো। তিনি বলতেন। তিনি আসছেন, আসছেন তিনি।
"বিমানটিকে খুব কাছ থেকে দেখা যাচ্ছে। রয়্যাল এয়ারফোর্সের বিমান, কমেট বিমান, কথা ছিল আমাদের বিমানে আসবেন, কিন্তু সেটি নয়।"

বুড়ো শ্বশুরমশাই-এর ক্ষীণ কণ্ঠ শোনা গেল, খোকা আসছে।
"বিমানটি আমার মাথার উপর দিয়ে চক্কর দিয়ে ঘুরে গেল।"

লন্ডনের হোটেল থেকে শনিবার তিনি ফোন করেছিলেন। সেই ভরাট গলা, সেই আবেগ-ভারাক্রান্ত কণ্ঠস্বর। কামাল ফোনটা হাতে তুলে দিয়েছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা ভাল আছ? জিভ ঠোঁট সব অসাড় হয়ে গিয়েছিল। সেইগলা, সেই মানুষ। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা ভাল আছ তো? কোনমতে জবাব দিতে পেরেছিলাম, হ্যাঁ, ভাল আছি। আমার সারা শরীর তখন কাঁপছিল। পঁচিশ মার্চের সেই কালরাত্রি, ন'মাস ধরে এই ঢাকায় বীভৎস হত্যা-গুলি-আগুন-কার্ফু-মিলিটারি জুলুম। ধানমন্ডির এই বাড়িতে খান সেনাদের হাতে বন্দী, কি ভয় আর যন্ত্রণা, আবার তোমার কথা শুনতে পাব! আল্লাহ জানেন, আল্লাহ জানেন। দু'চোখ ভরে যদি জল টলটল করে ওঠে, আমি কি করতে পারি বলো? বলো তুমি!

"বিমানের দরজা খুলে গেছে। না, এখনো শেখ সাহেব নামেন নি। ক্যামেরাম্যানরা দৌড়ে কাছাকাছি যাচ্ছেন। জনতা উত্তাল হয়ে উঠেছে, একজন নামলেন। না, ইনি শেখ সাহেব নন। আমার ঘড়িতে এখন আটটা দশ মিনিট, এই যে, হ্যাঁ,সেই উন্নত ললাট, ঘন কালো-সাদা চুল, উজ্জ্বল চোখ, শেখ সাহেব বেরিয়ে আসছেন, শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।"

তিনি এসেছেন। আহ শান্তি। ভুট্টো যখন তাঁকে মুক্তি দেবার কথা বলেছিলেন, তখনো ভয়টা পুরোপুরি দূর হয়নি। মার্চ মাসে এই ভুট্টোই তো পদে পদে তাঁকে বাধা দিয়েছিলেন, নির্বাচনের রায়টাকে বানচাল করে, চক্রান্ত করে, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশটাকে গুড়িয়ে দেবার জন্য মদত দিয়েছিলেন ইয়াহিয়াকে। এত সহজে তিনি ভালমানুষ সেজে যাবেন?

রাজনীতি? রাজনীতি তো শেখ সাহেব সারা জীবন ধরেই করেছেন। মানুষের মঙ্গলের জন্যই তো তাঁর রাজনীতি। তিনি তো ভ্রমেও কারো অহিত চাননি, শুধু দেশের জন্য, দেশের মানুষের সুখের জন্য শান্তির জন্য, নির্ভয়ে এগিয়ে গেছেন নিষ্পেষণের সম্মুখে, বছরের পর বছর কেটেছে জেলে, 'বিশ্বাসঘাতক' 'দেশদ্রোহী' বলে তাঁকে চিৎকার করে গালাগাল করেছে সেই ইস্কান্দার থেকে ইয়াহিয়া পর্যন্ত সব মিলিটারি ডিক্টেটররা। তবু তিনি তো কোন হীন ষড়যন্ত্র, কোন অন্যায় পথে একদিনও চলেননি। ওদের কাছে রাজনীতির অর্থটাই ভিন্ন। ওদের কাছে রাজনীতি হচ্ছে শোষণ, পীড়ন, দমন,অত্যাচার, ষড়যন্ত্র। ওরা কি শেষ পর্যন্ত মুক্ত করবেন ওই মানুষটিকে? যে মানুষটির কাছে বাংলা মায়ের মুক্তি আর মঙ্গল হচ্ছে প্রাণের থেকেও বেশী মূল্যবান। তাঁকে ছেড়ে দেবে ওরা? ওই রাজনীতির নামে যারা বর্বরতার চর্চা করে? সুখবর শুনে সবাই তখন হাসছিল, কামাল, জামাল, হাসিনা, রেহানা। রাসেল হাততালি দিয়ে নাচছিল, আব্বা আসছে। কিন্তু আমার মন থেকে ভয় দূর হয়নি।

না, রাজনীতি আমি বেশী বুঝি না। রাজনীতিকের সহধর্মিণী হয়েও না। আমার কাছে এই সংসার, তিনি, ছেলেমেয়ে, শ্বশুর, শাশুড়ি, চার ননদ, ভাইসাব আর আত্মীয় স্বজন আর পাড়া প্রতিবেশী, রান্নাবান্না। সবাই যেন সুখে থাকে,ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া, অসুখে শুশ্রূষা, পড়াশোনা, সকলের বিনা বিঘ্নে কাজকর্ম, আমি এ নিয়েই তৃপ্ত। কিন্তু পাকিস্তানের পত্তন থেকে শাসনকর্তারা আমাকে স্বস্তি দেননি, শান্তি দেননি, বারবার তাঁকে জেলে পুরে রেখেছেন। তারপর যখন সারাদেশ তাঁকে বিজয়মাল্য দিল, ইয়াহিয়া, জল্লাদ, নৃশংস, দুর্বৃত্ত, ওরা কি মুসলমান?

"বঙ্গপিতাকে স্বাগত জানাবার জন্য রাষ্ট্রপতি শ্রীগিরি এগিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর পেছনে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, মন্ত্রীসভার অন্যান্য সভ্যগণ, রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেছেন, দিল্লীর আকাশে উজ্জ্বল সূর্যালোক,বঙ্গবন্ধু ন'মাস কারাজীবন কাটিয়ে ফিরে যাচ্ছেন তাঁর সোনার-বাংলায়, স্বাধীন, সার্বভৌম, হানাদারমুক্ত।"

চোখের জল আজ বাধা মানবে না। খোদার অসীম দোয়া, তিনি আসছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত তাঁর খুব প্রিয়, বলেন কথার সঙ্গে সুরের এমন আশ্চর্য মিল আর কোথাও নেই। সব চেয়ে প্রিয় গান তাঁর, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। আরও অনেক গানই তাঁর প্রিয়। দুবেলা মরার আগে মরব না ভাই মরব না। একদিন তিনি গুন-গুন করে গাইছিলেন। রাসেল তাঁর পায়ের কাছে তিন চাকার সাইকেল চালাচ্ছিল। আমি এক গ্লাস হরলিকস নিয়ে ঢুকেছিলাম, ঘরে কেউ নেই। তিনি গাইছিলেন গুন-গুন করে। আমি ভয় করব না, ভয় করব না, ভয় করব না।

তাঁর মুখের দিকে তাকিয়েছিলাম। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা। বলেছিলাম তুমি কাউকে ভয় কর নাকি?
তিনি হেসেছিলেন, ভয় করি না আবার? ভয় করি আল্লাহকে, বাংলা মা'কে, দেশের মানুষকে। তাই তাঁদের সাধ্যমত সেবা করি। এই মানুষটিকে দেখে আসছি কবে থেকে। বিয়ের পর এত বছর কেটে গেল। মানুষকে এমনভাবে ভালবাসার মত বিচিত্র মানুষ, দুঃখেও যার সন্তোষ হারায় না, ক্ষমাশীল, কোমল অথচ দৃঢ় নির্ভয় অক্লান্ত পরিশ্রমী, এঁকেই ওরা বন্দী করে নিয়ে পুরে রেখেছিল পশ্চিম পাকিস্তানে, বাংলাদেশটাকে লুটেপুটে ধ্বংস করে, ইজ্জত নিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাড়িয়ে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল যদৃচ্ছভাবে। আল্লাহ তাঁদের শাস্তি দিয়েছেন, তিনি আসছেন, বিজয়ী বীর।

হাসিনা হাপুস নয়নে কাঁদছে। মেয়েটা তার আব্বাকে দারুণ ভালবাসে। শুধু মেয়ে কেন, সবাই, সারা দেশের লোক। নির্বাচনের সময় দেখেছি মানুষের ভালবাসায় তিনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতেন। কে একজন বলেছিল তিনি যাচ্ছিলেন একটা গাড়িতে চড়ে মিটিং এ বক্তৃতা দেবার জন্য। সঙ্গে নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ আরও অনেকে। একটি যুবক রাস্তা থেকে ছুটে এসে লাফিয়ে চড়েছিল গাড়িতে। দুহাত দিয়ে সে শেখ সাহেবকে জড়িয়ে ধরেছিল, চুমো খেয়েছিল, জনতা উল্লাস করে উঠেছিল। শেখ সাহেব বিব্রত মুখে সস্নেহে যুবকটিকে সামান্য সরিয়ে আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন। জনসাধারণের অফুরন্ত ভালোবাসার কত অভিব্যক্তি রোজ দেখতে পাই।

"রাষ্ট্রপতির সম্ভাষণের পর বঙ্গবন্ধু এসে দাঁড়িয়েছেন মাইকের সামনে। তিনি কাগজে লিখে এনেছেন, এখনি পড়বেন ...This journey is journey from darkness to light, from captivity to freedom, from desolation to hope."

সেই গলা, গম্ভীর, ভারী, জোরালো কণ্ঠস্বর। অন্ধকার থেকে আলোয়, বন্দিত্ব থেকে স্বাধীনতায়, ধ্বংস থেকে প্রত্যাশায়। অন্ধকার, বন্দিত্ব, ধ্বংস? আজ এই সকালে সেই বীভৎস রাতের কথা বারবার মনে পড়ছে, পঁচিশে মার্চ, রাত পৌনে একটা। ইয়াহিয়ার আলোচনার খেলা শেষ হয়ে গেছে, গাড়ি গাড়ি সৈন্য এসেছে ঢাকা শহরে। মিথ্যা কথার স্তূপ, নানা ফন্দি ফিকির, ভুট্টোর কারসাজি সব শেষ। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল আজ একটা ভয়ংকর কাণ্ড ঘটবে। এতদিন ধানমন্ডি রোডের বত্রিশ নম্বর বাড়িটাই যেন ছিল আওয়ামী লীগের আসল হেড কোয়ার্টার। নেতা-কর্মী-সাধারণ মানুষ বাড়িতে সবসময় গিজগিজ করত। মার্চ মাসের প্রথম থেকেই দেশ-বিদেশের সাংবাদিক, ক্যামেরাম্যান এখানে বাংলাদেশের হৃদয়ের কথা জানার জন্য ভিড় জমাতেন। সব সময় মানুষ আসছে, যাচ্ছে। কাজের ব্যস্ততায় তাঁর তখন নাওয়া খাওয়ারও ঠিকমত অবসর ছিল না। অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে তিনি যখন পঁয়ত্রিশ দফা নির্দেশ জারি করে শাসন ক্ষমতা হাতে তুলে নিয়েছিলেন, সারা দেশে সেকি আলোড়ন। ছুটে এসেছিলেন ইয়াহিয়া, ভুট্টো, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নানা নেতৃবৃন্দ। ঢাকা শহর জুড়ে সে কি প্রত্যাশার আগুন জ্বলেছিল। ইয়াহিয়া আলোচনার খেলা চালিয়ে যেতে লাগলেন, মনে হল তিনি বুঝি একটা আপোষে আসবেন, ছ'দফা দাবি মেনে নেবেন। কিন্তু সেটা যে শুধুই টালবাহানা, সময় কাটাবার ফিকির, সেটা বোঝা গেল পঁচিশ মার্চ তারিখ বিকেলে। সৈন্যদল রাস্তায় রাস্তায় টহল দিয়ে বেড়াতে আরম্ভ করল, রাত যত অন্ধকার হতে শুরু করল, সৈন্যদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলতে লাগল। তিনি ইয়াহিয়াকে ফোনে ধরতে চাইলেন, এ কী ব্যাপার হচ্ছে? কিন্তু ধরতে পারলেন না। বসবার ঘর থেকে তিনি যখন উপরে উঠে এলেন,সদাপ্রসন্ন তাঁর মুখটা যেন কেমন হয়ে আছে। বললেন, রেণু আজ একটা ভয়ংকর ব্যাপার ঘটতে পারে।

ভয়ংকর ব্যাপার, আমি অতটা বুঝতে পারিনি। কি ভয়ংকর ব্যাপার ঘটাবেন ইয়াহিয়া, জাতীয় পরিষদ বাতিল করে দেবেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের খারিজ করে দেবেন? এটাও পাকিস্তানে নতুন নয়। গোলাম মহম্মদ, ইস্কান্দার সবাই করেছেন, আইয়ুব খান মিলিটারীতন্ত্র চালিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ক্ষমতা বানচাল করে দিয়ে কলোনি করে রাখবেন, তার বেশী কি! পশ্চিম পাকিস্তান তো চব্বিশ বছর ধরে এই ষড়যন্ত্রই করে আসছে।

নামমাত্র খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমরা দোতলার শোবার ঘরে এসেছি। জামাল, রাসেল ও আমি বিছানায় বসে আছি। তিনি বুকে ক্রুশবিদ্ধ হাত রেখে পায়চারি করে চলেছেন।

রাস্তায় সৈন্য ভর্তি গাড়ির ছুটে যাওয়ার শব্দ শোনা যেতে লাগল। ক্রমশ শুরু হল গোলাগুলির আওয়াজ। মানুষের আর্তনাদ, অনবরত গুলির শব্দ, তিনি পায়চারি করে চলেছেন। যেন এক আহত সিংহ।

রাত্রি পৌনে একটার সময় আমাদের বাড়ির সামনে সৈন্য ভর্তি কয়েকটা গাড়ি এসে দাঁড়াল। ঝটপট নেমেই সৈন্যরা বেপরোয়া গুলি চালাতে শুরু করল। কয়েকটা বুলেট আমাদের ঘরের দেওয়ালে বিদ্ধ হল। নিরস্ত্র একটা পরিবারকে বিনা অপরাধে কি ওরা মেরে ফেলতে এসেছে? আমরা খাটের তলায় আশ্রয় নিলাম, নইলে যে কোন সময় গুলি এসে আমাদের গায়ে লাগতে পারত। কিন্তু ওদের বেপরোয়া গুলি কিছুতেই থামছে না। তিনি তখন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে। অবিরতগুলির মধ্যেও তিনি অবিচলিত।

তিনি বললেন, তোমরা সবাই এ ঘর থেকে চলে যাও। তাঁর জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বর। এ আদেশ অমান্য করি আমার সাধ্য নেই। আমরা বাথরুমের ভিতর গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার ছেলেরা আমার সঙ্গেই ছিল, জামাল ক্রোধে ফুঁসছিল।
তিনি তখন চেঁচিয়ে বললেন, আমি বাইরে আসছি। আমাকে ধরবে তো? ধরে নিয়ে যাও, বাট আই সে, স্টপ শুটিং।
কিন্তু তখনই একটা বোমা বিস্ফোরণ হল, বিকট আওয়াজে তাঁর কথা ডুবে গেল। তখন, সৈন্যরা বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েছে। গুলি চালাতে চালাতে ওরা সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে ছুটে আসছে। সারাটা বাড়ি ওরা ঘিরে রেখেছে। একদল ছুটে গেছে ছাদে-সবুজ লাল সোনার বাংলাদেশের পতাকায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

ঘরের কাজ করার ছেলেটা ভয়ে কাঁদছিল। তিনি তাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন, চোখের জল মুছিয়ে দিলেন, সান্ত্বনা দিতে লাগলেন, কাঁদিস না বাপ, কালই তোকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিব। তিনি সৈন্যদের চিৎকার করে বললেন হোল্ড ইয়োর ফায়ার, আই এম ইন মাই রুম। সেই বজ্রকন্ঠের হুকুম, সৈন্যরা গুলি চালানো বন্ধ করল।

তিনি ঘর থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন, অফিসারের খোঁজ করলেন। আমি তখন বাথরুম থেকে শোবার ঘরে এসে দাঁড়িয়েছি। তিনি অফিসারের সঙ্গে কথা বললেন, কি কথা হল জানি না। তিনি ঘরের মধ্যে এসে আমাকে বললেন, আবার বন্দী হলাম, আমার নিত্য ব্যবহারের সামান্য জিনিসপত্র গুছিয়ে দাও।

তিনি আবার বাইরে গেলেন। অফিসারের কাছে এই বেপরোয়া গুলিবর্ষণের কারণ জানতে চাইলেন। অফিসার নিশ্চুপ। আমি তাঁর জিনিসপত্র গুছিয়ে দিচ্ছি, আমার বুকের মধ্যে কান্না, কালবৈশাখীর ঝড়, হাত আড়ষ্ট হয়ে আসছে।

আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনি কতবার জেলে গেছেন, কিন্তু এমনভাবে সারা শহরে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বেপরোয়া গুলি চালিয়ে বাড়ি আক্রমণ করে কখনো সৈন্যদল তাঁকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়নি।

তিনি এক মুহূর্তের জন্য আমার দিকে তাকালেন। ঠোঁট একটু কাঁপলো, অস্ফুট বাক্য আর ধ্বনিত হল না। তিনি ধীর পদক্ষেপে বেড়িয়ে গেলেন। সৈন্যদলের গাড়িগুলি তাঁকে নিয়ে চলে গেল, গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে তিনি আমাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হলেন।

ন'মাস তোমার খবর জানি না। আমাদের বন্দী করে রেখেছিল ওরা। কামাল জামালেরও খবর পাইনি। পাক সেনাদের করা পাহারায় আমাদের দিন কেটেছে। আবার কোনদিন যে আলোর মুখ দেখতে পাব, ভাবিনি; স্বাধীনতা, সুখ, শান্তি,তুমি বলতে তোমার অগাধ বিশ্বাস ছিল, খোদা আমাদের নিশ্চয়ই বঞ্চিত করবেন না। আহা, তুমি এসেছ দিল্লীতে, তোমার গলা শুনতে পাচ্ছি। এই যে তুমি বাংলায় বলছ প্যারেড গ্রাউন্ডের সমাবেশে। তুমি বলছ, "কী চেয়েছিলাম? বাঁচবার অধিকার চেয়েছিলাম, তার প্রতিদানে পেয়েছিলাম বন্দুক, বুলেট, গুলি। আজ বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র।" আল্লাহ তোমার স্বপ্ন সফল করেছেন; তুমি এসেছ ওগো, আজ চোখের জলে ভাসতে ভাসতে, নিজের কাছে লজ্জা না করে চেঁচিয়ে আবৃত্তি করতে ইচ্ছা করছে কবিগুরুর সেই কবিতা, ভেঙেছে দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়।

দুই
বিমানে, ঢাকার পথে
আমি মুজিব, কি চেয়েছিলাম আমি? ফরিদপুর জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মেছি, দেখেছি মানুষের উপর কি নিদারুণ অত্যাচার, অবিচার, শোষণ, হিংসা। আমার চোখ পানিতে ভরে গেছে। সভ্যতার এত কাল পেরিয়ে এসেও মানুষ কিনা মানুষকে জানোয়ারের মত পীড়ন করতে পারে! নদী জলভরা শস্যশ্যামল আমার জন্মভূমি, মাটির মত এদেশের মানুষের মনও বড় কোমল। আকাশে পানি, খালে বিলে পানি, মানুষের চোখেও পানি। দুঃখের পানি--আনন্দের পানি বড় দূর্লভ।

আজ আমার দুচোখ ভরে পানির ধারা। এক চোখে আনন্দের, এক চোখে শোকের। সোনার বাংলা আজ স্বাধীন; কিন্তু এই স্বাধীনতার জন্য মূল্য দিতে হল লক্ষ লক্ষ প্রাণ, মা বোনের ইজ্জত, গ্রামের পর গ্রাম, বাড়ি খামার স্কুল হাসপাতাল কলকারখানা আজ সব ধ্বংসস্তূপ।

গোপালগঞ্জের স্কুল থেকে পাস করে পড়তে গিয়েছিলাম। কলকাতায়, থাকতাম বেকার হোস্টেলে। দেশ তখন পরাধীন। ইংরেজ গভর্নর, ইংরেজ আমলা, ইংল্যান্ডের মন্ত্রীসভা। তখন যুদ্ধ চলছে, কলকাতার পথেঘাটে গোরা সৈন্য, জীবনের অপচয়, তার মাঝখানে দেখেছি কংগ্রেসের 'ভারত ছাড়' আন্দোলন।

মুসলমান আর নিন্মবর্ণের হিন্দুরা তখন বাংলাদেশের সবচেয়ে দুঃখী, দরিদ্র, শোষিত, অত্যাচারিত। আমি তখন মুসলিম লীগের ছাত্রকর্মী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তখন আমার নেতা।

চৌদ্দ অগাস্ট, উনিশশো সাতচল্লিশ। ইংরেজের পতাকা নেমে গেল। নূতন প্রভাত। নূতন সূর্য। ধর্মের ভিত্তিতে দুই স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম হয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তানে থাকবে হিন্দু, ভারতেও মুসলমান। সংখ্যায় কম হলেও তাঁরা সকলের সঙ্গেই চিরস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধি ভোগ করবেন।

ভারতের উপর দিয়ে বিমান উড়ে যাচ্ছে। দুপুরের উজ্জ্বল আলোয় নিচে দেখা যাচ্ছে মাঠের পর মাঠ, বাড়িঘর, গ্রাম, নদী, দূরে দূরে শহর। কলকাতা পেরিয়ে গেলে ঢাকা পৌঁছাতে কতক্ষণ? কলকাতা থেকে এসেছিলাম ঢাকায় আইন পড়তে। পাকিস্তানের কর্তারা আমাকে পড়তে দিল না, কলেজ থেকে রাস্টিকেট করে দিল।

আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের স্বপ্ন দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে কর্তারা যে আমাদের নতুন গোলাম বানিয়ে রাখতে চায়, সেই ষড়যন্ত্রটা আমরা ধরে ফেললাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে ভাষণ দিতে গিয়ে জিন্নাহ সাহেব বললেন উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। বাঙালী ছাত্ররা সমস্বরে বলে উঠল নো নো। এই নো নো না না চব্বিশ বছর ধরে বাংলার আকাশে বাতাসে মুখর হয়ে উঠেছে। ওরা বুলেট চালিয়েছে, বাঙালী আর্তনাদ করে বলেছে না আ আ আ; ওরা জেলে পুরেছে, বাঙালী তীরস্বরে বলেছে না আ আ; ওরা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়েছে, বাঙালী বলেছে না আ আ; ওরা নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করে মেরেছে, বরকত সালাম মৃত্যুঞ্জয়ী কণ্ঠে গর্জন কর উঠেছে, না না না। এ হতে দেব না।

ওরা লাহোরে গৃহীত পাকিস্তানের প্রস্তাব কবর দিয়ে আমাদের বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল ক্রীতদাস। আমাদের থেকে ওরা স্থলপথে প্রায় বারশ মাইল দূরে। ওদের ভাষা ভিন্ন, খাদ্য পোশাক আদব কায়দা সব ভিন্ন। তার উপর ওরা লোকসংখ্যায় কম। পাকিস্তানের প্রায় ষাট শতাংশের ভাষা বাংলা, মানুষ বাঙালী, রাজস্ব সম্পদ বাংলাদেশের, তবু ওরা আমাদের উপর সব চাপিয়ে দিয়েছিল। সেখানেই রাজধানী, ওদের ভাষা রাষ্ট্রভাষা। ওদেরই মাটিতে সৈন্যসামন্ত অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ। ওদের চোখে আমরা নাকি আধা-মুসলমান, আমরা কাফের, আমাদের গায়ের রঙ কালো, ভাতমাছ খাই, যুদ্ধবাজ নই, আমরা খুব নিরীহ। মাতাল গভর্নর ফিরোজ খান নুন একথা বলেছিলেন। করাচীতে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে মওলানা হক সাহেব তো আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছিলেন, পাকিস্তানের প্রতি ইস্ট পাকিস্তানের মুসলমানদের যেন দরদ উছলে উঠে। ডিক্টেটর আইয়ুব খানও তাঁর 'ফ্রেন্ডস নট মাস্টার্স' বইতে বাঙালী মুসলমানদের ঠিকুজি সম্বন্ধে পণ্ডিতি ফলিয়ে লিখেছিলেন, আমাদের উৎপত্তি নাকি বহুযুগের পর পদানত, অনুন্নত ও নিন্মশ্রেণীর বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে। আমরা এখনো স্বাধীনতার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে অক্ষম। অথচ কি আশ্চর্য, ওরা রোজার দিনে খানা খায়, মদ খায়, আমরা শুদ্ধাচারী, তবু ওরাই মুসলমান, আর আমরা আধাআধি! আমরা স্বাধীনতার মর্ম বুঝি না!

তাঁরা দয়া করে আমাদেরকে স্বাধীনতার তাৎপর্য বুঝিয়ে দেবার জন্য-- আমরা যে বাঙালী, আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি যে বাংলা, এ কথাটা ভুলিয়ে দেবার জন্য চেষ্টা কম করেন নি। জ্যোৎস্না-পুলকিত রাত্রিতে নদীর ছল ছল জলের বুকে যে মাঝি প্রাণের আবেগে গান গেয়ে ওঠে, মা আমায় ঘুরাবি কত, তাকে স্বপ্ন দেখতে হবে মরুভূমির, তাকে বলতে হবে দুর্বোধ্য কৃত্রিম এক বাংলাভাষা।

ওরা আমাদের বাঙালীর জাতীয়তাবোধ মেরে ফেলতে চেয়েছিল। এটি নির্মূল করতে না পারলে আমাদের রুজি-রোজগার লুট করা যাচ্ছিল না। ভারত জুজুর ভয় দেখিয়ে, ইসলাম বিপন্ন জেহাদের ডাক তুলে রাইফেল স্টেনগান কামানের দাপটে চিরকালের জন্য আমাদের ক্রীতদাস করা সম্ভব হচ্ছিল না। আমাদের জাতীয়তাবোধ যত প্রসারিত হচ্ছিল, ওরা সাংবিধানিক ক্ষমতা তত সংকুচিত করছিল। শেষ পর্যন্ত মিলিটারি শাসন কায়েম হল। ইস্কান্দার, আইয়ুব, ইয়াহিয়া লোকলজ্জার শরমটুকু আর রাখলেন না।
মিলিটারি রাজত্ব, সাধারণ মানুষের সমস্ত স্বাধীনতা লুণ্ঠিত। ওরা ভারী ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সৈন্যদল ছড়িয়ে দিল সারাদেশে। ভয়ে আতঙ্কে দেশটা যেন বোবা হয়ে যায়, আর কিছু ভিক্ষা ছুড়ে দিল যেন কিছু তোষামোদি চাটুকার দেশদ্রোহী তোতাপাখির মত তাদের শেখান বুলি আওড়াতে পারে। কিন্তু... সারা বাংলার একটিমাত্র আওয়াজ, না না না। সত্তর সালের নির্বাচন এ কথা প্রমাণ করে দিল। সমস্ত পৃথিবী সাক্ষী।

বাংলাদেশের ছ'দফা দাবি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, নিজস্ব বাণিজ্য ও রাজস্ব এবং আপন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আমরা পল্টনের ময়দানে প্রতিজ্ঞা করলাম, 'চন্দ্রসূর্য' যতদিন থাকবে, ততদিন কেউ আমাদেরকে এই ছ'দফার দাবি থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। পারবে না, কেউ না। ইয়াহিয়া আলাপ আলোচনার ছদ্ম আবরণ নিয়ে ছুটে এলেন ঢাকায়। আমি বললাম সাড়ে সাত কোটি মানুষকে তোমরা দাবায়া রাখতে পারবা না। ওরা ছদ্ম পোশাক খুলে রেখে আসল স্বরূপে বেরিয়ে এলো পঁচিশে মার্চ নিশীথ নগরী ঢাকায়। আমাদের শুরু হল মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।

ওরা আমাকে বন্দী করে রেখেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের নির্জন কারাগারে। সামরিক বিচার চলছিল। ফাঁসির হুকুম হয়ে গিয়েছিল, কবর খোঁড়ারও বাকি ছিল না। সমস্ত পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে আমাকে ওরা মেরে ফেলতে চেয়েছিল।তাতে আমার ক্ষোভ থাকত না; কেননা দেশের মুক্তির জন্য আমি প্রাণ দিতে চেয়েছিলাম। পঁচিশ মার্চ সন্ধ্যায় যখন ধানমন্ডির বাড়িতে আমাকে আত্মগোপন করার জন্য তাজউদ্দীন কাঁদছিল অবিরল ধারায়, বলেছিলাম,--না তোমরা এক্ষুনি চলে যাও, নির্দেশ মত সংগ্রাম চালিয়ে যাও। সে সংগ্রাম আজ সফল হয়েছে।

কিন্তু চোখে আজ পানি কিছুতেই ধরে রাখতে পারছি না, মাগো! লক্ষ লক্ষ লোককে ওরা নৃশংসভাবে খুন করেছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে, আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, মা-বোনদের ইজ্জত নিয়েছে। শয়তান, কাপুরুষ, ইতর, বর্বর।

এই যে নিচে দেখা যাচ্ছে আমার সোনার বাংলা, এতদিনে জীবন সার্থক হল। কি মধুর হাওয়ার পরশ লাগছে, কি আনন্দ! সারা আকাশ ভরে আজ গুনগুণ করে গান গাইতে ইচ্ছে করছে, এই আকাশে আমার মুক্তি, আলোয় আলোয়।

তিন
ঢাকার উপকণ্ঠ
- রাণী, অনেক রাইত হইল, এখন ঘুমাও।
- ঘুম আইতাছে না।
- এমুন কইরও না। বঙ্গবন্ধু ত আইয়া গেছেন। সেই ভোর থনে বইসা ছিলাম রেসকোর্সে, দেইখ্যা প্রাণডা ভইরা গেল। আহা, কান্দে না, কান্দে না, রাণী সব ঠিক হইয়া যাইব। বঙ্গবন্ধু আইসা গ্যাছেন। রাণী অত কান্দ কেন? এ কি তুমার একলা? তুমার মত কত মাইয়া... এবার ঘুমাও, সুনা।
- খোদা--
- কাইন্দ না রাণী, রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধু কাইন্দা ভাসাই দিলেন। দেশের মানুষকে কত ভালবাসেন তিনি, খানরা যে আমরারে মাইরা ধ্বংস করছে, এই শোক তিনি সামলাইতে পারতাছিলেন না। শুনছ ত রেডিওতে?
- হ শুনছি
- চব্বিশটা বছর ধইরা পাকিস্তানীরা যে অত্যাচার করছে বঙ্গবন্ধু বুক দিয়া আটকাইতে গ্যাছেন। কতবার জেল, পুলিশের মাইর, কত কিছু ভোগ করছেন। একটু নড়েন নাই, আইজ তিনি কাইন্দা ভাসাইছেন। রাণী, এমন মানুষ আর হয়না, আল্লাহর দোয়া, এমন মানুষ আমরার লিডার। আরে বোকা কান্দে না, সরকার ঘোষণা করছেন, তুমরা মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনা।
- মন মানে না--
- খানরা ত দ্যাশটারে ছারখার কইরা দিছে। তুমি কি একলা, কোন পরিবারটা সুস্থ আছে কও ত। কার বাড়িঘর ঠিক আছে, আত্মীয়স্বজন সব জীবিত আছে, কও তুমি। দুঃখ কইরও না, এবার নতুন দিন আইব। শিকল ভাইঙ্গা লিডার আইসা গেছেন, আর কষ্ট নাই।
- তুমি--
- জান, বঙ্গবন্ধু ময়দানে খালি কান্দতাছিলেন। কইলেন--
- আমি সব শুনছি। আমিও সঙ্গে সঙ্গে কান্দছি।
- রাণী এবার আর কান্দা না, এবার ঘুমাও, এমন নিশ্চিন্তে আর কোনদিন ঘুমাই নাই। নয়টা মাস দক্ষযজ্ঞের পর মুজিব ভাই দ্যাশে ফিরছেন, এখন আর ভয় নাই, দ্যাখো।
- মুজিব ভাই---
- মুজিব ভাই আইসা গ্যাছেন, রাণী, আমরার সব দুঃখ ঘুচব। সব গ্লানি মুছব। আমরা, আমরার পোলাপানরা মানুষের মত মানুষ হইব। খোদা মেহেরবান।
দীর্ঘ কারাবাসের পর আমাদের মাটির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান দেশে ফিরেছেন। সেদিন রেসকোর্সের জনসমুদ্রে অশ্রুজলে ভেজা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে কিরণ কুমায় রায়ের গল্পের রাণী কেঁদেছিল। সারা বাংলাদেশ কেঁদেছিল। বিনীতভাবে একটা অনুরোধ করি। যারা শুনেছেন আর যাদের শোনা হয়নি সবাই সম্পূর্ণ ভাষণটা আবারো একটু শুনবেন।

সৌমিত্র পালিত : শিক্ষক, চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত, মন্তব্য লেখকের নিজস্ব। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত, মন্তব্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

আপনার মন্তব্য

আলোচিত