আলমগীর শাহরিয়ার

১২ নভেম্বর, ২০১৮ ১৫:৫৬

পঞ্চান্নে পীর হাবীব

এদেশের সাংবাদিকতা জগতে পীর হাবীবুর রহমান এক উজ্জ্বল স্বতন্ত্র নাম। পীর ভাই আপাদমস্তক একজন সাংবাদিক। রাজনীতির অন্দরমহলের খুঁটিনাটি তাঁর মত আর খুব কমজনেরই নখদর্পণে আছে। প্রায় তিন দশকের বেশি তাঁর সাংবাদিকতা জীবন। পেশাগত কাজে ও প্রয়োজনে নব্বই পরবর্তী রাজনীতি তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। দেখেছেন এদেশে গণতন্ত্রে উত্তরণকালকে নিবিড়ভাবে। সে সূত্রেই সমকালীন রাজনীতির তিনি একজন পর্যবেক্ষক, বোদ্ধা ও বিশ্লেষক। রাজনীতি নিয়ে তাঁর অনেক অনুসন্ধানী লেখা, ভবিষ্যদ্বাণী---দৈববাণীর মত ফলে গেছে। তাই রাজনীতি নিয়ে তাঁর কোনও সিরিয়াস লেখার প্রতি রাজনীতি সচেতন ও সংশ্লিষ্ট সকলের বাড়তি মনযোগ লক্ষ্য করা যায়। এদেশে তাঁর কলামের মনযোগী পাঠক প্রচুর। জনপ্রিয় কলাম লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরীর পর পীর হাবীবুর রহমানের কলামের নিজস্ব এবং আলাদা একটা পাঠক শ্রেণি তৈরি হয়েছে বললে--মোটেই অত্যুক্তি হবে না।

যা হোক, পীর ভাই সাংবাদিক না হলে তিনি আর কী হতে পারতেন? আমার মনে হয় তিনি একজন সুসাহিত্যিক হতেন। একজন সুসাহিত্যিক হবার সকল গুণই তাঁর মধ্যে ছিল। হাওরের জল-জোছনার প্রতি তাঁর অন্তহীন গভীর প্রেম, মরমিয়া বাউল বন্দনার প্রতি তাঁর অনুরাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার চত্বরের সবুজ যৌবনের নস্টালজিয়া অন্তত তাই বলে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের ভূস্বর্গখ্যাত সুনামগঞ্জ শহরে ১৯৬৩ সালের ১২ নভেম্বরে মধ্যবিত্ত এক মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। আট ভাই বোনের মধ্যে তিনি সপ্তম। তাঁর নামের আগে পীর দেখে আমার মত অনেক নবীন পাঠকই এক সময় সংশয়ে পড়েন। প্রশ্ন জাগে---ইনি সত্যি কোন ঘরানার পীর? আসলে এটা তাঁর পারিবারিক পদবী। বাবা ছিলেন মোহাম্মদ রইছ আলী পীর ও মা সৈয়দা রাহিমা খানম।

সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি শেষ করে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ(সম্মান), এমএসএস করেন। সাংবাদিকতায় তাঁর হাতেখড়ি ১৯৮৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন সময়ে। এক সময়ের জনপ্রিয় দৈনিক 'বাংলাবাজার' পত্রিকার সূচনালগ্নে মূলত তার পেশাদারিত্বের বিকাশ ঘটে। তারপর দৈনিক যুগান্তরের সঙ্গে ছিলেন দীর্ঘদিন। আলোচিত রিপোর্টার হয়েছেন বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে। দৈনিক আমাদের সময়, আমাদের অর্থনীতির সঙ্গেও ছিলেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিম। বর্তমানে জনপ্রিয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

পেশাগত জীবনে ২০০০ সালে জাতিসংঘের সহস্রাব্দের অধিবেশন, জর্ডানের আইপিও সম্মেলনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্ট কাভার করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এ সাংবাদিক সর্বশেষ ভারতের লোকসভা নির্বাচন কাভার করছেন। এছাড়া তিনি টেলিভিশন টক শো'র একজন জনপ্রিয় মুখ। উপস্থাপনা করেছেন জনপ্রিয় টক শো 'একুশের রাত'।

তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বিভিন্ন সময়ে লেখা কলাম নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে 'অব দ্যা রেকর্ড', 'এক্সক্লুসিভ', 'টক অব দ্যা প্রেস', 'ভিউজ আনকাট ও মন্দিরা' প্রভৃতি। তাঁর সৃজনশীল গোপন লেখক স্বত্বার বিলম্বিত প্রকাশ দেখতে পাই ‘জেনারেল ও কালো সুন্দরীরা’, ‘লজ্জাবতী’ ও ‘বুনোকে লেখা প্রেমপত্র’-এর মত পাঠকনন্দিত বইয়ে। সাংবাদিকতা জগতে তাঁর অবদান ও উল্লেখযোগ্য কাজ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রামাণ্য পীর হাবীবুর রহমান’ নামের একটি গ্রন্থ।

হাওরের জল-জোছনার সুন্দরে মুগ্ধ পীর ভাই আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকুন দীর্ঘদিন। দীর্ঘদিন এদেশের গণমাধ্যম তাঁর সমৃদ্ধ বর্ণিল কর্মময় পদচারণায় মুখর থাকুক। ১২ নভেম্বর তাঁর পঞ্চান্নতম জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁর একজন অনুরাগী পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী হিসেবে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত