আলমগীর শাহরিয়ার

২৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ১০:৩৬

সৈয়দ আবুল মকসুদ কেন সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরতেন?

সৈয়দ আবুল মকসুদ

সৈয়দ আবুল মকসুদ মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতিতে গভীর আস্থাশীল এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। শুধু বাংলাদেশ নয় বিবেকী একজন মানুষ হিসেবে বিশ্বের যে কোন স্থানে সন্ত্রাস, সংঘাত, সহিংসতা তাঁকে গভীরভাবে ব্যথিত করত। লেখক আনিসুল হকের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছেন, ইরাকে মার্কিন হামলার প্রতিবাদে তিনি সেলাই করা কাপড় বর্জন করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এটা এই অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্য—বিদেশিরা এই অঞ্চলে আসার আগে আমরা সেলাইবিহীন কাপড় পরতাম। ধুতি আর শাড়ি। ব্লাউজ ছিল না। লুঙ্গিতেও সেলাই ছিল না। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি শাড়ির সঙ্গে পরার জন্য ব্লাউজ, পেটিকোট ইত্যাদির প্রচলন করে।"

এ প্রসঙ্গে তিনি লেখক আনিসুল হককে এক স্মৃতিচারণ করে বলেন, "সেদিন রিকশায় যাচ্ছি। দুই লোক ঝগড়া করছে। একজনের পরনে লুঙ্গি। দ্বিতীয় লোক তার লুঙ্গি ধরে টানাটানি করছে। ভাবছিলাম, রিকশা থামিয়ে তাদের ঝগড়া মিটিয়ে দেব। কিন্তু লুঙ্গি ধরে টানাটানি শুরু করার পর ওখানে যাওয়াটা আর বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হলো না। কিন্তু লুঙ্গির উপকারিতা অনেক। কবি কায়সার হক এ বিষয়ে একটা দীর্ঘ ইংরেজি কবিতা লিখেছেন। এই দেশে প্রবাদ প্রচলিত আছে, যষ্মিন দেশে যদাচার, কাছা খুলে নদী পার।

সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, এই বর্ষা-প্রধান নদীমাতৃক দেশে মানুষ লুঙ্গি বা ধুতিকে তাদের পোশাক হিসেবে বেছে নিয়েছে। কারণ, তাতে চলাচলের সুবিধা হয়। কায়সার হকের কবিতায় লুঙ্গি পরে নদীতে নামার পর সেটা বাতাসে ফুলিয়ে ঢোল বানানোর ইমেজ পাই, সেটা পড়ে অনেক দিন পরে সেই দৃশ্য মনে পড়ল। ছোটবেলায় দেখতাম, কেউ কেউ, অতি পারদর্শী, চুইংগাম দিয়ে বেলুন বানানোর মতো, লুঙ্গি দিয়ে পানিতে ফুটবল বানাতে পারতেন। বিদেশিরা লুঙ্গির একটা গুণে মুগ্ধ, তা হলো এর এয়ারকন্ডিশনিং ক্ষমতা। আমাদের মতো আর্দ্র দেশের জন্য যা বিশেষভাবে উপকারী।"

৯/১১ পর ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে এই মিথ্যা অজুহাতে মার্কিনরা ইরাকে হামলা চালায় এবং পুরো পৃথিবীটাকে অশান্ত করে তোলে, লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়, মৃত্যু হয়। তারই প্রতিবাদে সৈয়দ আবুল মকসুদ দুই খণ্ড সেলাই-ছাড়া সাদা চাদর পরা শুরু করেন। গান্ধীর অহিংস নীতিতে উদ্বুদ্ধ সৈয়দ আবুল মকসুদের কাছে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর মুখে একদিন শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল নিরীহ ফিলিস্তিনীদের উপর ইজরাইলের আক্রমণ ও বাস্তুহারা করার প্রতিবাদেও তিনি এই সাদা কাপড় পরা শুরু করেন। চাইতেন সংঘাত ও সহিংসতাপূর্ণ পৃথিবী নয়, মানুষের বাসযোগ্য শান্তির এক পৃথিবী।

তিনি চলেই গেলেন। সুবিধা নিতে মরিয়া সময়ের বিচূর্ণ আয়নায় বারবার দেখি এক প্রকৃত বুদ্ধিজীবীর মুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত