সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ এপ্রিল, ২০১৬ ২১:৩৯

সময়ের ফেরিওলা প্রকাশনায় মুগ্ধতার বয়ান

প্রত্যেক বক্তাই যেনো গল্প শুনালেন। গল্পের আঙ্গিক, বিষয় বৈচিত্র, বিন্যাস, শব্দচয়ন, কাহিনী বিশ্লেষন, নান্দনিকতা-সবই উঠে এলো আলোচনায়। আর দশটা প্রকাশনা অনুষ্ঠানকে ছাপিয়ে তাই ভিন্ন ধরনের পাঠ ও পাঠকৃতি শুনে মুগ্ধ হলেন উপস্থিত সবাই।

গল্পকার তাপসী চক্রবর্তী লিপির গল্পগ্রন্থ ‘সময়ের ফেরিওয়ালা’র প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি সোমবার সন্ধ্যায় শুধু মুগ্ধতাই ছড়ায়নি, ছড়িয়েছে সাহিত্যের প্রকৃত সুভাস। হাওর প্রকাশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মদনমোহন কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির পরিচালক (অর্থ) মিহিরকান্তি চৌধুরী।

লেখক, সাংবাদিক অপূর্ব শর্মার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর নৃপেন্দ্র লাল দাশ ও বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল হক। আলোচনায় অংশ নেন, গল্পকার জামান মাহবুব, উন্নয়ন সংগঠক নজমুল হক, অধ্যাপক শামীম আরা বেগম, বিআরডিবির সহকারী পরিচালক শ্যামল দে প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ডক্টর আবুল ফতেহ ফাত্তাহ তাঁর বক্তব্যে তাপসী চক্রবর্তীকে আধুনিক গল্পকার আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তার অধিকাংশ গল্পেই আধুনিকতা বর্তমান। প্রত্যেক গল্পকারকেই সাঁকোতে দাঁড়িয়ে গল্প লিখতে হয়। গল্পে শাখা-প্রশাখা থাকলে সেটি আর গল্প হয়না।’ রবী ঠাকুরের ছোটগল্প প্রসঙ্গে বিখ্যাত উক্তি-‘শেষ হয়ে হইলো না শেষ’ উদৃত করে তিনি বলেন, ‘খুব কম কথায় অনেক কিছু বুঝাতে হয় গল্পকারকে। গল্পে যেমন নান্দনিকতা থাকবে, তেমনি শব্দচয়নে থাকবে চতুরতা। তীর্যক কথা দিয়ে পাঠককে ভাবনায় ফেলতে হবে। তাতেই স্বার্থক হয় গল্পের বুনন। এসব কিছুই আছে তাপসী চক্রবর্তী লিপির গল্পে।’ তিনি বলেন, ‘আলোচ্যগ্রন্থের গল্পগুলোতে সমাজবাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধ যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে ভালোবাসার কথা।’

গল্পকারের মধ্যে আগামীর উপসন্যাসিক লুকিয়ে আছে উল্লেখ করে অধ্যাপক নৃপেন্দ্র লাল দাশ তার বক্তব্যে বলেন, ‘ইচ্ছে করলেই তিনি উপন্যাস লিখতে পারবেন। অনেক কিছুর সমন্বয় তার গল্পকে নান্দনিক করেছে। আবেগ-অনূভূতি, ব্যাথা- বেদনার স্বার্থক মিশ্রন তার গল্পকে করেছে বাস্তবধর্মী।    

মিহিরকান্তি চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, ‘সামাজিক অবস্থা ও পরিবেশ লেখকের অনেক গল্পেই উঠে এসেছে এবং সবটাই বিন্যস্ত হয়েছে তাঁর স্বকীয় বৈশিষ্ট অনুযায়ী। গল্পের মধ্যকার উত্থান-পতন বা ঘূর্ণাবেগ যতটা না প্রধান তার চেয়ে বেশি ধরা পড়ে জীবনের প্রতিচ্ছবি। শিল্পের প্রতি অঙ্গিকার ও সেই থেকে তৈরি হওয়া লেখক সত্ত্বাই তাপসী চক্রবর্তীর গল্পগুলোকে অনন্য করেছে।’   

সময়ের ফেরিওলার লেখক তাপসী চক্রবর্তী লিপি অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আজ অনেক কিছু নতুন করে শিখলাম, যা আগামীর পথে পাথেয় হয়ে থাকবে।’ সেইসাথে তিনি গল্পকার হয়ে উঠার গল্প শোনান সাবাইকে।  

মদনমোহন কলেজ শিক্ষক মিলনায়তনে রবী ঠাকুরের ‘আগুনের পরশমনি ছোয়াও প্রাণে’ গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিক্ষিকা অনামিকা রায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত