আবীর মুখোপাধ্যায়

০৮ মে, ২০১৬ ০০:৫৮

নোবেলের সেই দিন

পুরস্কারের চিঠি হাতে পেয়ে রবিঠাকুর মেটাতে চেয়েছিলেন আশ্রমের নালা সারাইয়ের খরচ!

সে দিন খুব হাওয়ার রাত। খোয়াইজুড়ে রাস পূর্ণিমার গোল হলুদ চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে পারুল বন। জোব্বার পকেট থেকে টেলিগ্রামের কাগজটা বের করলেন কবি। ভাঁজ খুলে বার দু’য়েক পড়লেন। চেয়ে রইলেন দূর বনপথে। চোখে উদাস করা চাহনি। তারপর উদাসীন ভাবে নোবেল প্রাপ্তির টেলিগ্রামটা সচিবের দিকে এগিয়ে বললেন, ‘‘নিন, নেপালবাবু। এই আপনার ড্রেন তৈরির টাকা!’’
রবিঠাকুরের কথা শুনে নির্বাক আশ্রম-সচিব নেপালচন্দ্র রায়!

দু’চোখের কোণ ভিজে এল তাঁর!
নোবেল কমিটির কাছে কবির ঠিকানাই ছিল না!

শেষে সুইডিশ অ্যাকাডেমি ‘গীতাঞ্জলি’-র প্রকাশক ম্যাকমিলান কোম্পানির কাছ থেকে ঠিকানা নেয়। ১৪ নভেম্বর, শুক্রবার লন্ডন থেকে কেবলগ্রাম পাঠায় ৬ নং দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের ঠিকানায়।

কমিটি লেখে, “SWEDISH ACADEMY AWARDED YOU NOBEL PRIZE LITERATURE PLEASE WIRE ACCEPTATION SWEDISH MINISTER.”

১৫-র মধ্যরাতে জোড়াসাঁকোয় নোবেলের কেবলগ্রাম এল, ঘুমোতে পারেননি কবির ছোট জামাই নগেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। সারা রাত্তির বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেছেন, কখন আলো ফুটবে।

ঘড়িতে যখন সবে সকাল ৭-১০, নগেন্দ্রনাথ দৌড়ে গেলেন ডাকঘরে। তড়িঘড়ি টেলিগ্রাম করে শ্বশুরকে জানালেন তাঁর নোবেল প্রাপ্তির খবর!

কিন্তু জামাই নগেন্দ্রর ওই টেলিগ্রাম নয়, সেদিন কবি তাঁর তিন সুহৃদের টেলিগ্রামে নিজের নোবেল প্রাপ্তির খবর প্রথম জেনেছিলেন!

কবির নোবেল প্রাপ্তির খবর কলকাতায় প্রথম ছাপে ইংরেজি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা ‘এম্পায়ার’।

১৩ তারিখ নোবেল-পুরস্কার কমিটি কবির নাম ঘোষণা করার পর, স্টকহোমের রয়টার প্রতিনিধি খবরটি প্রথম ‘ব্রেক’ করেন।

নিউইর্য়ক ইভনিং পোস্টে সে খবর প্রকাশিত হয়। এদেশে রয়টারের খবর এল পরের দিন, ১৪ নভেম্বর সকাল ৯টায়। ততক্ষণে সেদিনের কাগজ ছাপা হয়ে বেশিরভাগ বিক্রিও হয়ে গিয়েছে! সে দিনের ‘এম্পায়ার’ দেখেই শোরগোল পড়ে সন্ধেরাতের শহরে।
শোরগোলের কথা জানিয়েছেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে সীতা দেবী।
তিনি সে দিন কলেজ থেকে ফিরছিলেন।

‘পুণ্যস্মৃতি’-র পাতায় লিখছেন, ‘‘কলেজ হইতে ফিরিবামাত্র শুনিলাম যে রবীন্দ্রনাথ Nobel Prize পাইয়াছেন। কলিকাতা শহরে মহা হৈ চৈ বাধিয়া গেল। শুনিলাম কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সর্বপ্রথম কবিকে এই খবর টেলিগ্রামে জানাইতে গিয়াছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে টেলিগ্রাম লিখিতে জানিতেন না, অন্য কাহাকেও দিয়া লিখাইতে গিয়া দেরি হইয়া গেল, তাঁহার আগেই আর-একজন টেলিগ্রাম পাঠাইয়া দিলেন।’’

রাজপথে সে দিন কাগজের হকররা ছোটাছুটি করে হুলুস্থূল কাণ্ড বাঁধায়। জোড়াসাঁকো থেকে গড়ের মাঠ, হাটেবাজারে শুধু রবির জয়গাথা।

সে দিনের কথা পাওয়া যায় চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিতেও।

চারু লিখছেন, ‘‘আমি প্রবাসী-আপিসে প্রুফের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে আছি, বেলা তখন তিনটে হবে...।’’

প্রেসের ভিতর সত্যেন্দ্র ঢুকেই চিৎকার করে চারুকে বললেন, ‘‘আমি তোমায় মারব।’’
বেগতিক দেখে প্রুফ সরিয়ে সত্যেন্দ্রর উল্লাস দেখেন চারু।

হেসে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কী এমন সুখবর যে আমায় মারতে ইচ্ছে করছে?’
‘‘আন্দাজ করো!’’

সত্যেন্দ্রর হাতে একতাড়া ‘এম্পায়ার’ কাগজ দেখে চিৎকার করে ওঠেন চারু! ‘‘রবি-বাবু নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন!’’

আনন্দের চোটে সত্যেন্দ্র কথার খেই হারিয়ে কাগজটা টেবিলে মেলে ধরলেন।
চারুচন্দ্র লিখছেন, ‘‘আমি বললাম, ‘রবিবাবুকে টেলিগ্রাম করেছ?’ সত্যেন্দ্র বললেন, ‘আমি নগেন গাঙ্গুলির কাছে এসপ্লানেডে শুনেই কাগজ কিনে নিয়ে তোমাকে খবর দিতে ছুটে এসেছি। টেলিগ্রাম তো আমি করতে জানি না- তুমি যা হয় করো।’ তখন আমরা দুজনে কান্তিক প্রেসে গিয়ে মণিলালকে খবর দিল‌াম। আর তিনজনের নামে রবি-বাবুকে টেলিগ্রাম করলাম আমাদের সানন্দ প্রণাম জানিয়ে- Nobel Prize, our pranams। আমাদের টেলিগ্রামটা নগেনবাবুর টেলিগ্রামের পরে রবি-বাবুর কাছে পৌঁছেছিল, তাতে সত্যেন্দ্র ক্ষুণ্ণ হয়ে বলেছিলেন, ‘টেলিগ্রাম করতে জানলে আমিই আগে খবর দিতে পারতুম!’’’

সত্যিটা সত্যেন্দ্র তখনও জানতেন না, তাঁদের টেলিগ্রামই কবির হাতে পৌঁছয় প্রথম।
‘রবিজীবনী’-র লেখক প্রশান্তকুমার পাল লিখছেন, ‘‘১৪ নভেম্বর রাত্রি ৭-৪৪ মিনিট পর্যন্ত বোলপুরে পৌঁছনো এরূপ টেলিগ্রামের সংখ্যা ৭টি, তার মধ্যে চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়-কথিত নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেলিগ্রাম বা রবীন্দ্রনাথ-কথিত বিলেতের প্রকাশকের কেবলগ্রাম কোনোটিই নেই। তবে ‘সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত’ ফাইলে মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ও চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের একত্রে পাঠানো টেলিগ্রামটি পাওয়া যায়।’’

কলকাতায় ৪টে ১০ নাগাদ এই টেলিগ্রামটি জমা পড়ে। বোলপুর ডাকঘরে পৌঁছয় ঠিক তেত্রিশ মিনিট পর। কবির আমন্ত্রণে সে দিনই বেলা সাড়ে ১১টায় শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন বাঁকুড়ার ওয়েসলিয়ান কলেজের অধীন হাই স্কুলের অধ্যক্ষ পাদ্রী এডওয়ার্ড জন টমসন। পাদ্রীসাহেব বাংলা জানতেন। তাঁকে কবি বাংলাতেই চিঠি লিখে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সাহেব লিখছেন, “About 4.30, I had tea. He came in suddenly and said, ‘Mr. Thomson, will you excuse me for a few hours? I have to go somewhere.”

অতিথি টমসনের কাছ থেকে সময় নিয়ে কোথায় গেলেন রবীন্দ্রনাথ?
বনবিহারে।

রেল লাইনের পুব পাড় ধরে মোটর গাড়িতে চড়ে জোব্বা উড়িয়ে চললেন পারুলবনের দিকে।

সঙ্গে কয়েকজন বিদেশি অতিথি, এস্রাজ নিয়ে গানের ভাণ্ডারী দিনুঠাকুর, ছেলে রথি আর সচিব নেপালচন্দ্র।

পথেই দেখা হল, বোলপুরের ডাক পিয়োনের সঙ্গে। কবিতা তাঁকে দেখে গাড়ি থামাতে বলে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘কোনও সংবাদ আছে?’’

‘‘আজ্ঞে। কলকাতা থেকে তার আছে আপনার।’’

এর পর টেলিগ্রাম হাতে পেয়েও কবি তখনই খুললেন না। সকলের দেরি হবে ভেবে জোব্বার পকেটে রেখে দিলেন কাগজখানা। কিন্তু সকলের কৌতূহল থামে না। এখন টেলিগ্রাম!

সবার অনুরোধে চাঁদের আবছা আলোয় বনপথেই টেলিগ্রাম খুললেন কবি।
প্রথমে বিশ্বাস হয়নি!

তিন প্রিয় মানুষ পাঠানো সু-সংবাদ পড়ে বলেন, ‘‘উঁহু, সম্ভবত টেলিগ্রামের ভাষায় ভুল আছে বুঝলে!’’

সকলের উৎসুক চোখ কবির মুখের দিকে!
ফের পড়লেন তিনি।

তার পর নেপালবাবুর দিকে এগিয়ে দিলেন কাগজখানা। রথীন্দ্র দেখলেন কাগজে লেখা, ‘‘নোবেল প্রাইজ কনফারড অন ইউ, আওয়ার কনগ্র্যাচুলেশনস।’’

এক আকাশ চাঁদের সে রাতে আশ্রামের চতুর্দিকে কেবল রবিরব। পুজোর ছুটির পর সবে খুলেছে রবিবাবুর ‘গানের স্কুল।’

বাড়ি থেকে ফিরে ছুটির হোম-টাস্ক নিয়ে মনখারাপ ছোটদের। তারই মাঝে সন্ধেরাতের হাওয়ায় রটল কবির নোবেল প্রাপ্তির খবর।

সে সময় প্রমথনাথ বিশী শান্তিনিকেতনের ছাত্র। ‘রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন’-এ তিনি লিখছেন, ‘‘শীতের প্রারম্ভে নূতন-ওঠা বেগুনভাজা পরিবেশিত হইয়াছে... সহসা অজিতকুমার চক্রবর্তী রান্নাঘরে ঢুকিয়া চীৎকার করিয়া বলিলেন, ‘গুরুদেব নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন।’’

প্রাক্তনীর স্মৃতির পথে ফিরে দেখি, আশ্রমের অধ্যাপক অজিত চক্রবর্তীর চলাফেরা প্রায় নৃত্যের তালে পরিণত হয়েছে। চঞ্চল হয়ে উঠেছেন ‘গম্ভীরপ্রকৃতির লোক, চলাফেরায় সংযত’ ক্ষিতিমোহন সেন। বিদ্যালয়ের সর্বাধ্যক্ষ জগদানন্দ রায় এসে যখন তিন-চার দিনের ছুটি ঘোষণা করলেন, তখন ছাত্ররা বুঝতে পারল, ‘ব্যাপার কিছু গুরুতর!’

প্রমথ লিখছেন, ‘‘কোথায় গেল ক্লাসের নিয়মিত ঘণ্টা, কোথায় গেল অধ্যাপকদের গম্ভীর চালচলন, স্নানাহারের সময়ও গোলমাল হইয়া গেল!’’

সেই রাতে গৌরপ্রাঙ্গণে চাঁদের আলোয় বিস্তর আমোদ করেছিল আত্মহারা শান্তিনিকেতন আশ্রম।

পিয়ার্সন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কাফ্রিদের ঢাল-তরোয়াল-মুখোশ এনেছিলেন। সে সব তিনি বের করে দেন আনন্দ-নৃত্যের জন্য। পিয়ার্সন ও ছেলেদের নাচের মাঝেই কালি-ঝুলি মেখে সং সেজে হাজির হলেন সুধাকান্ত। কোমরে তাঁর জড়ানো কুয়োর লম্বা দড়ি!

লেজ নিয়ে কী লম্ফ-ঝম্প!



কবি অবিচল থাকলেও, সে দিন এমনই উল্লসিত হয়ে ওঠেন আশ্রম সদস্য ও তাঁর আপনজনেরা। কবির বড়দাদা, ঋষিপ্রতিম দ্বিজেন্দ্রনাথও খবর পেয়ে তাঁর নিচুবাংলার ঘর থেকে দৌড়ে গিয়েছেন কবিকে বুকে জড়িয়ে ধরতে! আদর করে বলেছেন, ‘রবি, তুই নোবেল প্রাইজ পেয়েছিস!’

বোলপুরের ডাকঘর উপচে পড়ছে অভিনন্দন বার্তায়। অজস্র চিঠি-টেলিগ্রাম!
খুব কাছের কয়েকজনকে কবি নিজেই উত্তর লিখলেন। বন্ধু রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীকে লিখলেন, ‘‘সম্মানের ভূতে আমাকে পাইয়াছে, আমি মনে মনে ওঝা ডাকিতেছি- আপনাদের আনন্দে আমি সম্পূর্ণ যোগ দিতে পারিতেছি না। আপনি হয়ত ভাবিবেন এটা আমার অত্যুক্তি হইল কিন্তু অন্তর্যামী জানেন আমার জীবন কিরূপ ভারাতুর হইয়া উঠিয়াছে। ‘কোলাহল ত বারণ হল/ এবার কথা কানে কানে’ এই কবিতাটি দিয়া আমি গীতাঞ্জলির ইংরেজি তর্জ্জমা শুরু করিয়াছিলাম। কারণটা যে কতদূর সফল হইল তাহা দেখিতেই পাইতেছেন।’’ লিখলেন রোটেনস্টাইনকেও!

বাকিদের পাঠানো হল, রবীন্দ্র-হস্তাক্ষরে লেখা চিঠির বয়ান।
২৩ নভেম্বর কবিকে সংবর্ধনা জানাতে বিশেষ ট্রেন এল বোলপুরে!

সে ট্রেনের খবর জানিয়ে কাগজে বিজ্ঞপ্তি বের হয়। জানানো হয়, শান্তিনিকেতন যাওয়ার ভাড়া ৩ টাকা চার আনা! কে নেই বিজ্ঞপ্তির স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে ব্রজেন শীল, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, নীলরতন সরকার। সু-সজ্জিত রেলগাড়ি ছাড়তে ৫৫ মিনিট দেরি হয়।

কারণ সভাপতি জগদীশচন্দ্র বসু স্টেশনে পৌঁছতে পারেননি!
দুপুরে ট্রেন যখন বোলপুরে এল, কবির নামে জয়ধ্বনি উঠল বোলপুরের ভুবনডাঙার আকাশ জুড়ে।

আম্রকুঞ্জে সংবর্ধনা সভায় কবি এলেন গরদের ধুতি পাঞ্জাবিতে, তাঁকে মালা পরিয়ে দিলেন সভাপতি জগদীশচন্দ্র। কবি বসলেন মাটির বেদীতে, পদ্মপাতায়। রেশমের কাপড়ে কবি সত্যেন্দ্র দত্তের খসড়া করা অভিনন্দনপত্রটি পড়লেন হীরেন্দ্রনাথ দত্ত। একটি লজ্জাবতী লতার গাছ উপহার দিলেন জগদীশচন্দ্র!

সকলের অভিনন্দন শেষে এ বার কবির পালা।
কবি গাইবেন মাস তিনেক আগে লেখা গীতিমাল্যের একটি গান, ‘এ মণিহার আমায় নাহি সাজে।’

কিন্তু হঠাৎ খুব রেগে গিয়ে গানের দলকে থামিয়ে দিলেন তিনি!
আম্রকুঞ্জের সভায় ছিলেন সীতাদেবী। তিনি লিখছেন, ‘‘বোধ হয় আর কিছু বলবার সংকল্প প্রথমত তাঁহার ছিল না। কিন্তু তাঁহাকে প্রিয়তমের মত ভালোবাসিয়াছে এমন বাঙালীরও যেমন অভাব নাই, এবং ছিলও না, তেমনি চিরকাল তাঁহাকে বিদ্বেষ করিয়াছে এবং লোকচক্ষে হীন করিতে চেষ্টা করিয়াছে, এমন বাঙালীরও অভাব তখন ছিল না।’’ সভার সামনের সারিতে বসেছিলেন তেমন কয়েকজন।

কবি তাঁদের দেখেই ধৈর্য হারান!
উঠে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বললেন, ‘‘...আজ আপনারা আদর করে সম্মানের যে সুরাপাত্র আমার সম্মুখে ধরেছেন তা আমি ওষ্ঠের কাছে পর্যন্ত ঠেকাব, কিন্তু এ মদিরা আমি অন্তরে গ্রহণ করতে পারব না। এর মত্ততা থেকে আমার চিত্তকে আমি দূরে রাখতে চাই।’’

বহুচর্চিত সে সভার স্মৃতিপাঠে কেউ কেউ এমনও লিখেছেন, কবি সে দিন বক্তৃতায় সংবর্ধনাকারীদের তুলনা করেছিলেন সেই সব গ্রাম্য বালকদের সঙ্গে, যারা কুকুরের লেজে টিন বেঁধে রাস্তায় রাস্তায় তাড়া করে বেড়ায়! কেবল লোকের মুখের কথা নয়, নিজেও লেখেন এমন কথা মর্মদাহে!

তাঁর অভিভাষণে সভায় মৃদু গুঞ্জন ওঠে। অনুগামীরা কেউ কেউ না খেয়েই ট্রেন ধরতে ফেরেন বোলপুর স্টেশনে।

কবি তাঁদের জন্য মণ্ডা-মিঠাই-কমলালেবু পাঠিয়ে দেন ট্রেন ছাড়ার আগে!
গহন বেদনা আর অভিমানে কয়েক দিন পরে পিলুতে লেখেন, ‘লুকিয়ে আসে আঁধার রাত’।

আপন কথায় খাম্বাজে গাঁথেন, ‘আমার সকল কাঁটা ধন্য করে!’
এই আমাদের রবিঠাকুর!

সৌজন্যে : আনন্দবাজার

আপনার মন্তব্য

আলোচিত