রাজীব রাসেল

১৫ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ১৪:১২

শুভ জন্মদিন বাউল সম্রাট

সঙ্গীত সাধক ও বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জন্মদিন আজ। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ধলআশ্রম গ্রামে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন বাংলা বাউল গানের এই জীবন্ত কিংবদন্তী।

হাওর অঞ্চল বলে খ্যাত সুনামগঞ্জে কালনীর তীরে বেড়ে ওঠা এই বাউল সাধক আজীবন গানে গানে বলে গেছেন বাংলাদেশ, বাঙালি আর অসাম্প্রদায়িক সমাজ নির্মাণের কথা। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলেছে সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। শাহ আব্দুল করিমের গান ভাটি অঞ্চলে জনপ্রিয় হলেও দেশের শহরাঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায় মাত্র কয়েক বছর আগে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন তিনি।

দারিদ্রতা ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। বাউল সম্রাটকে গানের প্রেরণা দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। তিনি তাকে আদর করে ডাকতেন ‘সরলা’। পাশাপাশি তিনি তাঁর গানের অনুপ্রেরনা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সাধক ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ এর দর্শন থেকেও।

যদিও দারিদ্রতা তাঁকে বাধ্য করে কৃষিকাজে তাঁর শ্রম ব্যয় করতে, কিন্তু কোন কিছু তাঁকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তিনি আধ্যাত্মিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেন কামাল উদ্দীন, সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ এর কাছ থেকে। শরীয়তী, মারফতি, নবুয়ত, বেলায়া সহ সব ধরণের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন তিনি।

বাউল শাহ আবদুল করিমের লেখা গান নিয়ে এ পর্যন্ত ৬টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হলো- আফতাব সঙ্গীত (১৯৪৮), গণসঙ্গীত (১৯৫৭), কালনীর ঢেউ (১৯৮১), ধলমেলা (১৯৯০), ভাটির চিঠি (১৯৯৮), কালনীর কূলে (২০০১) ও শাহ আবদুল করিম রচনাসমগ্র (২০০৯)। এছাড়া বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তাঁর ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে।

বাউল শাহ আব্দুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় পেয়েছেন লেবাক এ্যাওয়ার্ড (২০০৩), মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (২০০৪), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস আজীবন সম্মাননা (২০০৫), বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা (২০০৬), খান বাহাদুর এহিয়া পদক (২০০৮), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী সম্মাননা (২০০৮), হাতিল এ্যাওয়ার্ড (২০০৯), এনসিসি ব্যাংক এনএ সম্মাননা (২০০৯) ও কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরি পদক (২০০০)।

বাউল সাধক শাহ আবদুল করিম জীবনের একটি বড় অংশ লড়াই করেছেন দারিদ্রতার সাথে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় তাঁর সাহায্যার্থে এগিয়ে এলেও তা যথেষ্ঠ ছিল না। ২০০৬ সালে 'সাউন্ড মেশিন' নামের একটি অডিও প্রকাশনা সংস্থা তাঁর সম্মানে ‘জীবন্ত কিংবদন্তীঃ বাউল শাহ আবদুল করিম’ নামে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া তাঁর জনপ্রিয় ১২টি গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে। এই অ্যালবামের বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ তাঁর বার্ধক্যজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে সিলেটের একটি ক্লিনিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহান এই বাউল সম্রাট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত