
০৮ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:২৩
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) র্যাগিংয়ের অভিযোগে অর্থনীতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের উপর র্যাগিংয়ের অভিযোগে অর্থনীতি বিভাগ ও পরিসংখ্যান বিভাগের পৃথক তিনটি ঘটনায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের একজনকে আজীবনসহ মোট ২৫ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারাদেশ প্রদান করা হয়েছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘প্রহসনের বহিষ্কার মানি না, মানব না, সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান এক হও এক হও, এক হও লড়াই কর!, আমাদের দাবি মানতে হবে, মানতে হবে!, প্রশাসনের স্বৈরাচারিতা মানিনা, মানব না! ইত্যাদি স্লোগান দেয়। পাশাপাশি নানা রকম প্রতিবাদী লেখা সম্বলিত প্লাকার্ড হাতে দাঁড়ান আন্দোলনকারীরা।
অর্থনীতি বিভাগে ঘটনায় সেদিন কোন র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী ও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. এনামুল বলেন, ওইদিন রাতে আমরা বাস্কেটবল খেলা ও বিদায় সংবর্ধনা নিয়ে কথা বলছিলাম। এসময় প্রশাসন ওখানে গেলে এখানে কোন র্যাগিং হয় নাই এ বিষয়ে আশ্বস্ত করি। কিন্তু স্যারেরা আমাদের প্রক্টর অফিসে নিয়ে গিয়ে আবরার ফাহাদের উদাহরণ দিয়ে আমাদেরকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে বিষয়টিকে এক্সট্রিম পর্যায়ে নিয়ে যায়। আমাদেরকে ডাইভার্ট করে তাদের মতো করে বক্তব্য আদায় করে।
তিনি আরও বলেন, ওইদিনের ঘটনার কয়েকদিন পর আমরা বিভাগ থেকে প্রশাসনকে একটা দরখাস্ত করি যে, এখানে র্যাগের মত কিছুই হয়নি। কিন্তু এই ঘটনার এক বছর পর প্রশাসন কীভাবে বহিষ্কার করে? আমরা অতিদ্রুত এই প্রহসনে বহিষ্কার প্রত্যাহার করতে প্রশাসনকে আহ্বান জানাই।
পরিসংখ্যান বিভাগের একটি ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিমুল ইসলাম রাব্বি বলেন, যেই ঘটনার ভিত্তিতে বহিষ্কারের আদেশ দিল তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট। আমরা মনে করছি প্রশাসন হয়ত কোন ভুল ম্যাসেজ পেয়েছে নয়তো তারা সেটা বানিয়েছে। আমরা এই প্রহসনমূলক বহিষ্কারাদেশের প্রত্যাহার চাই।
অর্থনীতি বিভাগের হাফিজুল ইসলাম ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের হাফিজুল ইসলাম বলেন, একটি মীমাংসিত ঘটনাকে অধিকতর তদন্তের নামে তিনটি সিন্ডিকেট মিটিং উপেক্ষা করে ২৩৭তম সিন্ডিকেটে এসে শিক্ষার্থীদের শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তকালীন সময়ে ভুক্তভোগী এবং অভিযোগকারী কারোই কোন জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়নি। দুটি বিভাগের কোন বিভাগীয় প্রধান, ছাত্র উপদেষ্টার সাথে তদন্ত কমিটি কোন বৈঠক করেনি। প্রক্টর অফিস ও প্রশাসন থেকে কোন যোগাযোগ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানি না অভিযোগ কী। মীমাংসিত তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে রায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিয়েছে সেটাকে আমরা অবৈধ বলে ঘোষণা করছি। এই অবৈধ রায় অতিদ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। নয়তো আমরা আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি প্রদান করা হবে।
এই বিষয়ে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিবৃতি দিয়ে জানান, 'তদন্ত এবং শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশের ওপর ভিত্তি করেই সিন্ডিকেট এই রায় দিয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত যেকোনো ছাত্র-ছাত্রীর আপিল করার সুযোগ রয়েছে। বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে রেজিস্ট্রার দপ্তরে আপিল পেশ করলে, যথাযথ পদ্ধতি মেনে তা দ্রুততম সময়ে খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
আপনার মন্তব্য