শাবি প্রতিনিধি

২৮ নভেম্বর, ২০১৬ ২২:১১

ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি : অপরাধীদের বাঁচাতে মরিয়া শাবি প্রশাসন ও পুলিশ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির চক্রান্তের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শাবি ছাত্রলীগের এক কর্মী আটক হওয়ায় মূল অপরাধীদের বাঁচাতে পুলিশ মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরও পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে এর ব্যাখ্যা চান।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব থাকায় মুল-হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বাঁচাতে দুর্বল আইনে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের অভিযোগ করেছেন স্বয়ং শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।

জালিয়াতকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করলেও ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও কোন মামলা করেনি শাবি প্রশাসন।

এ বিষয়ে শাবির রেজিস্টার ইশাফাকুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেই বাদী হয়ে হয়ে রোববার সকালে মামলা করেছেন বলে দাবি করেন। তবে মামলার কপি দেখতে চাওয়া হলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও তারা মামলা করতে অপারগতা প্রকাশ করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ধরনের মামলা করেননি বলে তিনি জানান।

এদিকে, ওসি আখতার হল থেকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করলেও ড. রাশেদ তালুকদার হল থেকে আটকের বিষয় স্বীকার করেন। অথচ ২১০ নং কক্ষ থেকে আল আমিনকে আটক করা হয় বলে হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দাবি করে আসছেন। ওই কক্ষটি ছাত্রলীগ সহসভাপতি অঞ্জন রায় সমর্থিত সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘটনার পর নজরুল আটক ওমর ফারুক বাপ্পীকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন বলেও অভিযোগ উঠে। কিন্তু শেষে আল আমিন এবং অন্যান্যরা ধরা পড়ায় বিপাকে পড়ে যান নজরুল। এরপর থেকে নজরুল ঘটনা ধামাচাপা দিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেন এবং জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন এর কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। ফলে এ ঘটনায় ওসি আখতারের দিকেই এখন অভিযোগের তীর।

আল আমিনকে আটকের পর থেকে ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলামকে জালালাবাদ থানায় অবস্থান করতে দেখা গেছে। পরীক্ষার আগের রাত (২৫ নভেম্বর) থেকে জালালাবাদ থানায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন নজরুল। শনিবার এবং রোববার তাকে ওসি আখতার হোসেনের কক্ষে অবস্থান করতে দেখা যায়।

এদিকে জালিয়াত চক্রকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা জানতে সাংবাদিকের কাছে ফোন দিয়ে জানতে চান প্রক্টর। সাংবাদিকরা অভিযোগ করে বলেন, প্রক্টর মহোদয় জোর করে সংবাদের সোর্সের নাম জানার চেষ্টা করেন। বিষয়টি স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার পাল্টা প্রশ্ন করেন, নিউজের সোর্স আমি জানতে চাইব না?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাবি ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি জানান, নজরুল ইসলামের চাপে পড়ে তিনি বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেন।

এদিকে ফেসবুকে শাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ লিখেন, গত ২৬ নভেম্বর (শনিবার) শাবির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু শাবির ছাত্র হিসেবে মনের মাঝে অজানা ভয়ের ধাক্কা লাগে, যখন শুনি জালিয়াতির মাধ্যমে একদল প্রতারক চক্র শাবিপ্রবিতে অনৈতিকভাবে ভর্তির চেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রতারকচক্রের রাঘব বোয়ালরা কোথায়? আটককৃত প্রতারকদের বিরুদ্ধে বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা না দিয়ে পুরনো আইনে মামলা কেন? যদি তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা হতো, তাহলে শাস্তি বেশি হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন বাদী হয়ে মামলা করে নাই? সেই প্রশ্নও মনে জাগে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত