সারওয়ার খান

০১ জুন, ২০২০ ২২:০২

মানুষ মারা ভাইরাসে মানুষ বাঁচানোর বার্তা এলো কি?

স্বাধীন মানুষ আর কত বন্দিত্ব মেনে নিতে পারে এই জীবনে। ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে কাটানো জীবনে ছন্দ ও সুর সবই কেমন যেন বেসুরো হয়ে যায়। জীবন ও জীবিকা যেখানে প্রশ্নের সম্মুখীন সেখানে মুক্তির আস্বাদ পাওয়ার জন্য মানুষ ‘জেনে-শুনে বিষ পান’ করার মতো ঘরের বাইরে যাবার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেছে আজ।

আমার মা ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকা থেকে ফিনল্যান্ডে (হেলসিংকি) বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়ে গেলেন। ওনার দেশে ফিরে আসার কথা ছিল মে ১৩,২০২০ তারিখে, কিন্তু ২০ মার্চ বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সকল দেশের সাথে চলতে থাকা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলি অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করে দিল– ফলে ওনার আর দেশে ফিরে আসা হলো না। এখন এই অভিনব লকডাউন পরিস্থিতিতে কেউই এই বন্দিত্ব কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না– দম বন্ধ অবস্থা ওদের।

বিজ্ঞাপন

সতর্কতার সাথে বউ বাচ্চাদের দুই-তিনবার বাইরে থেকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্ত বায়ু সেবনের অনুমতি দিয়েছি। আমার কন্যা ইনায়া পাগলপারা হয়ে উঠলেও আমি তাকে এখনও বাইরে যেতে দেইনি কারণ এ রোগের অন্ধি-সন্ধি নিয়ে ডাক্তার, বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানীদের মধ্যে মনে হয় এখনো অনেক অজ্ঞতা রয়ে গেছে। ফলে একমাস আগে আমাদের যেসব কথা বলা হয়েছিল এ রোগ হওয়ার এবং ছড়ানোর ঝুঁকির কারণগুলি সে সবের অনেক কিছুই আজ আর টিকছে না। ফলে গতকালের ‘সত্য’ আজ আর ‘সত্য’ থাকছে না। এ এক অদ্ভুত গোলক-ধাঁধায় পড়ে গেছে মানব জাতি। সবাই বড় অসহায় বোধ করছে।

জীবন না জীবিকা বাঁচাতে হবে এই নিয়ে রাজনীতিক ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে। এখানে-ওখানে, দেশে দেশে রাজনীতিকরা নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জীবনের উপর জীবিকার প্রাধান্য দিয়ে ‘সব কুছ ঠিক হ্যায়’ বলে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক অবস্থানকালীন সময়ের মতো সবকিছু খুলে দিয়ে যেন মৃত্যুফাঁদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আবার বিজ্ঞান বলছে ‘বাবা! আর ক’টা দিন সবুর করো, রসুন বুনেছি’ – মানে এই ভ্যাক্সিন এলো বলে! তবে সে দিল্লি বহুত দুরস্ত। এখনো বছর খানেকের মামলা বলেই মনে হচ্ছে।

সাধারণ মানুষ, বিজ্ঞানী, রাজনীতিক সকলেই যেন দিশেহারা আজ। এখন যে যার মতো ব্যাখ্যা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সুযোগ নিচ্ছে কিন্তু মানুষ বাঁচানোর উদ্যোগ-আয়োজনের আলোকরশ্মি তো দেখা যাচ্ছে না এখনো!

ভাল হয়ে উঠুক পৃথিবী।

সারওয়ার খান: প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শাবিপ্রবি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত