তানিয়া সুলতানা

২৩ জুন, ২০২০ ১৪:০৩

পোশাকখাতে নারীশ্রমিক হ্রাস নিয়ে কিছু কথা

পোশাকশিল্পে আপাতদৃষ্টিতে নারীশ্রমিক অনেক বেশি মনে হলেও এ সংখ্যা আসলে ক্রমহ্রাসমান। বাংলাদেশে ৬০-৭০ এর দশকে এ শিল্পের বিকাশটা নারীশ্রমিকদের হাত ধরেই শুরু। শুরুর দিকে যদি ধরি, এ শিল্পে ৯০%-ই ছিলো নারীশ্রমিক। কিন্তু এখন চিত্রটা ভিন্ন। বর্তমানে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ যদি দেখি তাহলে দেখবো দিন দিন নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর অনুপাতটা কমছে। গত ৪ বছরে যা কমে দাঁড়িয়েছে ১০.৬৮%। এই যে এ কমে যাওয়ার প্রবণতা সেটা কী জন্য- এর উত্তর যা সেটি হলো নারীদের জীবন মান বেড়েছে যেহেতু জিডিপি বাড়ছে, বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এমন। কিন্তু না জীবনমান বাড়েনি, কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়নি। কারণ জীবনমান বাড়লে বা কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে ৮-৯ হাজার টাকা মজুরি দিয়েও হাজার হাজার শ্রমিক মিলতো না পোশাক কারখানার মালিকদের।

২০১৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কেয়ারের সহযোগিতায় ১টি জরিপ করা হয়েছিলো নারী পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে সেখানে দেখানো হয়েছে যে ১৩% নারী যৌন হয়রানির শিকার, ২০% শারীরিক নির্যাতনের শিকার, ৭১% মানসিক নির্যাতনের শিকার। এ নির্যাতনের শীর্ষে রয়েছে সুপারভাইজার। তাদের অভিযোগ করারও সুযোগ কম, কারণ অভিযোগ করলে চাকরিচ্যুত হবার ভয় থাকে। এ সব থেকে এ বিষয়টা পরিস্কারভাবে বুঝা যায় যে নারী কর্মীরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার এ সেক্টরে যার জন্য নারী কর্মীর সংখ্যা দিন দিন কমছে।

তাছাড়া আরও কিছু বিষয় যেমন- মাতৃত্বকালীন ছুটি, কর্মঘণ্টা, বেতন ভাতা সব মিলে একধরনের কাজ করার প্রতিকূল পরিবেশ পোশাকশিল্পে নারীদের জন্য। কমবেশি সব খাতে মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান করা হয় কিন্তু পোশাকখাতে এ সুবিধা নেই। মাতৃত্বকালীন ছুটি না শুধু সে সময়টা থেকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয় বাধ্য হয়ে। কারণ অন্যান্য সেক্টরে তুলনায় এখানে কর্মঘণ্টা অনেক বেশি। ৫০% এর বেশি কারখানায় ৯-১০ কর্মঘণ্টার পরও ওভারটাইম বাধ্যতামূলক অনেক কারখানায়। সাপ্তাহিক ছুটি নেই ২৫% এর ও বেশি কারখানাগুলোতে।

নারীদের ক্ষেত্রে সংসার সামলে ১২ ঘণ্টা কাজের পর বিশ্রামের কোন সুযোগ নেই। সন্তান লালন-পালন করে চাকরি করারও সুযোগ থাকে না। যদি কারখানাগুলোতে কর্মীদের বাচ্চা লালন পালনের জন্য ডে কেয়ার থাকতো তাহলে হয়তো বা তারা কাজ করতে পারতো। একজন নারী পোশাকশ্রমিক সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে বিয়ে করে যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আরেকজন পোশাকশ্রমিকেই। ফলে খরচ মেটাতে ১ জনের আয়ে সংসার চলে না। পরবর্তীতে সন্তান নিলে ছেলে বা মেয়ের গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মার কাছে সন্তানকে রেখে কাজ করতে হয়। সেখানে নারীদের মানসিকভাবে অস্থিরতা বোধ করে সারাক্ষণ সন্তানের জন্য। এছাড়া শিশুটিও বাবা-মা ছাড়া অসহায়ভাবে বেড়ে উঠে।

এ বিষয়গুলো ছাড়াও যে সমস্যাটা নারী পোশাকশ্রমিকদের পোহাতে হয় তা হলো রাতে কাজ করা। বেশিরভাগ কারখানায় এটাও একটি সমস্যা নারীদের জন্য। তাদের নিরাপত্তার কথা ভাবা হয় না কারখানাগুলোতে। এসব সমস্যার জন্য দিন দিন এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ কমছে। এ খাত বিশাল নারী সমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যে অবদান রেখেছে তেমনটা অবদান রাখতে পারলে নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখবে। তাই নারীবান্ধব করে কর্মের সৃষ্টি করতে পারলে পোশাকখাতকে এগিয়ে নিতে যেতে সহায়তা করবে নারীরা।

তানিয়া সুলতানা: কবি

আপনার মন্তব্য

আলোচিত