মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

২৭ জুন, ২০২৩ ১২:৩৮

আরাফাহ দিবস: গুরুত্ব ও ফযিলত

আরাফাহ দিবসের আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পবিত্র হজের শুরু হয়। ছবি: রয়টার্স

যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাহ ময়দানে চিহ্নিত সীমানার মধ্যে অবস্থান করা হজ্জের প্রধান রোকন। এই দিনকেই আরাফার দিন বলা হয়।

এ দিনটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও মর্যাদাপূর্ণ। এ দিনের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে নিম্নে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করা হলো।

আরাফাহ দিবসের মর্যাদা
এ দিবসটি অনেক ফযিলত সম্পন্ন দিবসের চেয়ে অধিক মর্যাদার অধিকারী। যে সকল কারণে এ দিবসটির এত মর্যাদা তার কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

১. এ দিন ইসলাম ধর্মের পূর্ণতা লাভ ও বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির দিন।

হাদিসে এসেছে- ‘তারিক বিন শিহাব (রহ.) হ’তে বর্ণিত, এক ইহুদি লোক ওমরকে (রা.) বলল, হে আমিরুল মুমিনিন! আপনাদের কিতাবে আপনারা এমন একটি আয়াত তেলাওয়াত করে থাকেন যদি সে আয়াতটি আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হতো তাহলে আমরা সে দিনটিকে ঈদ হিসাবে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন, সে আয়াত কোনটি? লোকটি বলল, আয়াতটি হলো- আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন বিধান হিসাবে মনোনীত করলাম’! ওমর (রা.) এ কথা শুনে বললেন, আমি অবশ্যই জানি কখন তা অবতীর্ণ হয়েছে ও কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) কোথায় ছিলেন। সে দিনটি হলো জুমার দিন। তিনি সে দিন আরাফার ময়দানে দাঁড়িয়ে ছিলেন’।

২. এ দিন হলো ঈদের দিন সমূহের একটি দিন। আবু উমামাহ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফাহ দিবস, কোরবানির দিন ও আইয়ামে তাশরিক (কোরবানি পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলামের অনুসারীদের ঈদের দিন। আর এ দিনগুলো খাওয়া-দাওয়ার দিন’।

ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে আবাস (রা.) বলেন, সূরা মায়েদার এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে দু’টো ঈদের দিনে। তা হলো জুম্যার দিন ও আরাফাহর দিন।

আরাফাহ দিবসের ফযিলত:

আরাফাহ দিবসের বিভিন্ন ফযিলত রয়েছে। যেমন-

১. আরাফাহ দিবসের সিয়াম দু’বছরের গুনাহের কাফফারা
আরাফার দিন সিয়াম পালন করলে এক বছর পূর্বের এবং এক বছর পরের গুনাহ মাফ হয়। আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে আরাফাহ দিবসের সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আরাফার দিনের সিয়াম, আমি মনে করি বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে’।

উল্লেখ্য যে, আরাফার দিনে সিয়াম পালন করবেন তারাই যারা হজ্জব্রত পালন করেন না। অর্থাৎ আরাফাহ ময়দানের বাইরে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মুসলিম এই সিয়াম পালন করবেন।

২. আরাফার দিন গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের দিন
এ দিনে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে অধিক সংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করে দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিন আল্লাহ রাববুল আলামিন তাঁর বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, তোমরা কি বলতে পার আমার এ বান্দারা আমার কাছে কি চায়’? ইমাম নববী (রহ.) বলেন, এ হাদিসটি আরাফাহ দিবসের ফযিলতের একটি স্পষ্ট প্রমাণ।

ইবনে আব্দুল বার্র (রহ.) বলেন, এ দিনে মুমিন বান্দারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হন। কেননা আল্লাহ রাববুল আলামিন গুনাহগারদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন না। তবে তওবা করার মাধ্যমে ক্ষমা-প্রাপ্তির পরই তা সম্ভব।

হাদিসে এসেছে- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলে কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যখন আরাফার দিন হয়, তখন আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন। অতঃপর তিনি আরাফায় অবস্থানকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকটে গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, আমার এ সকল বান্দাদের দিকে চেয়ে দেখ। তারা এলোমেলো কেশ ও ধূলায় ধূসরিত হয়ে আমার কাছে এসেছে’।

৩. অধিক পরিমাণে যিকর ও দোআ করার উপযুক্ত সময়
নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে উত্তম দোআ হলো আরাফাহ দিবসের দোআ। আর সর্বশ্রেষ্ঠ কথা যা আমি বলি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ বলেছেন তা হলো- আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন মাবুদ নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য এবং তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান’।

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্দুল বার্র (রহ.) বলেন, এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আরাফাহ দিবসের দো‘আ নিশ্চিতভাবে কবুল হবে। আর সর্বোত্তম যিকর হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।

ইমাম খাত্ত্বাবী (রহ.) বলেন, এ হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, দোআ করার সাথে সাথে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তাঁর মহত্বের ঘোষণা করা উচিত।

অতএব, আরাফাহ দিবসের গুরুত্ব ও ফযিলত অনুধাবন করত এ দিবসে সিয়াম পালনে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। তাছাড়া যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকে ইবাদতের ফযিলতও অত্যধিক। সে ব্যাপারেও আমাদেরকে যত্নবান হতে হবে।

আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন-আমিন!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত