মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

০৬ জুলাই, ২০২৩ ১২:২৭

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে চিকিৎসাসেবা এবং ডাক্তারের গুণাবলী

শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার ব্যাপারে ইসলাম মানুষকে জোর তাকীদ দিয়েছে। অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি নিজে অসুস্থ হলেও চিকিৎসা গ্রহণ করতেন। আর চিকিৎসার জন্য স্বভাবতই ডাক্তারদের শরণাপন্ন হতে হয়। তাই সমাজে ডাক্তারদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাছাড়া ডাক্তারি পেশা ও মানবিকতা একই সুতোয় গাঁথা। কারণ ডাক্তারগণ মানুষের যত বেশি সেবা করার সুযোগ পান, অন্য পেশাজীবীরা ততটা পান না। একজন আদর্শ ডাক্তার মানুষকে সুস্থ করে নিজের দ্বিগুণ দায়িত্ব হিসাবে দেখেন। একটি দায়িত্ব মানুষ হিসাবে, আরেকটি ডাক্তার হিসাবে। কাজেই একজন ডাক্তারকে আগে ভালো মানুষ হতে হয়, তাহলে তিনি পরবর্তীতে আদর্শ ডাক্তার হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।

আলোচ্য নিবন্ধে আমরা আদর্শ ডাক্তারের করণীয় ও গুণাবলী সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

উসামা ইবনে শারীক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর, কেননা আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি, শুধু বার্ধক্যরোগ ব্যতীত’।

চিকিৎসা যেহেতু অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া সম্ভব নয়, তাই প্রত্যেক এলাকায় প্রয়োজন মোতাবেক কিছু লোকের সাধারণ চিকিৎসাবিদ্যা অর্জন করা জরুরি। সুতরাং সমাজের মেধাবী, আদর্শবান এবং আগ্রহী সন্তানদেরকে এই চিকিৎসাবিদ্যায় অনুপ্রাণিত করা উচিত। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে ভুরি ভুরি ডাক্তারদের ভিড়েও আদর্শ ডাক্তারের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। অনেক শিক্ষার্থী সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে মেডিকেলে পড়াশোনা করলেও পরবর্তীতে আদর্শের পাটাতনে থিতু হতে পারে না। প্রতারণা, ধোঁকাবাজি ও লোভ-লালসার উন্মত্ত ঢেউয়ের উপর্যুপরি আঘাত তাদের মানবিকতা ও আদর্শের কিশতিকে টালমাটাল করে দেয়। ফলে তারা দিকভ্রান্ত হয়ে আদর্শ ও মানবিকতার সীমানা থেকে ছিটকে পড়ে যায় এবং জনজীবনের জন্য কোন উপকারী রসদের যোগান দিতে পারে না।

উপরন্তু এই অসাধু ডাক্তারদের অমানবিকতার কাছে মানবজীবন জিম্মি হয়ে পড়ে, কখনো তাদের হাতেই নিঃশেষ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যে সকল ডাক্তার লোভ-লালসা ও স্বার্থপরতা উপেক্ষা করে শক্ত হাতে দায়িত্বের হাল ধরে থাকেন, তারাই তাদের ত্যাগ, শ্রম ও সেবা দিয়ে মানবজীবনকে নিরাপদ রাখতে সচেষ্ট থাকেন। সমাজে তারাই আদর্শ ডাক্তার হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। তারাই হয়ে উঠেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সমাজের মানুষ আদর্শ ডাক্তারদের মাধ্যমেই চিকিৎসার মৌলিক অধিকার পেয়ে থাকে। তারা যেমন মানুষের অন্তরখোলা দোআ পেয়ে থাকেন, পাশাপাশি আল্লাহর পক্ষ থেকেও অঢেল পুরস্কার লাভে ধন্য হন।

চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। আদর্শ ডাক্তাররা চিকিৎসার মৌলিক অধিকার পূরণে মানব সমাজে প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং তাদের হাত ধরেই মানবতা যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকে। রাসূল (সা.) খুব সংক্ষেপে, কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা আমাদের শিখিয়ে গেছেন। আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন, বান্দা যখন কোন কাজ করে বা কোন বিষয় শিখে, তা যেন খুব ভালভাবে করে বা শিখে’।

এই হাদিসের মর্মার্থ হলো- একজন ছাত্র চিকিৎসা পেশা গ্রহণ করতে চাইলে, তার জন্য কর্তব্য হচ্ছে উক্ত পেশায় পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করা। কেউ ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে, উক্ত বিষয়ে সে যেন পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করে। আধা আধা শিখে কোন কাজ শুরু করা খুবই অন্যায়। একটি প্রবাদ বাক্য আছে, ‘অর্ধেক মোল্লা দ্বীনের জন্য হুমকি আর অর্ধেক ডাক্তার জীবনের জন্য হুমকি’। কারণ আমাদের দেশে এমন অনেক ভুয়া ডাক্তার আছে, যারা তাদের নামের পাশে এমন অনেক চটকদার ডিগ্রি উল্লেখ করেন, যেগুলো বাস্তবে নেই এবং দেশের আইনে যেগুলোর ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। এটা একদিকে সহজ-সরল রোগীদের বিভ্রান্ত করছে, অন্যদিকে দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখানো হচ্ছে। আবার অনেকেই বিশেষজ্ঞ না হয়েও ভিজিটিং কার্ড ও সাইনবোর্ডে নিজেকে বিশেষজ্ঞ দাবি করেন। এটাও একটা প্রতারণা ছাড়া কিছুই না।

কেউ কেউ ২/৪ মাসের প্রফেশনাল ট্রেনিংকে দিব্যি ডিগ্রি হিসাবে চালিয়ে দিচ্ছেন। কোন অশিক্ষিত লোকের আইন ভঙ্গ ও শিক্ষিত লোকের আইন ভঙ্গ কিন্তু এক নয়। শিক্ষিত মানুষের আইন ভঙ্গ অনেক গুরুতর অপরাধ। তাই ডাক্তারদের জন্য অবশ্য কর্তব্য হলো পূর্ণ দক্ষতা নিয়ে মানুষের সেবা করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চিকিৎসা বিদ্যা অর্জন না করেই চিকিৎসা করবে, সে (রোগীর জন্য) দায়ী থাকবে’।

কারণ চিকিৎসা শাস্ত্র ও অন্যান্য বিদ্যার মাঝে পার্থক্য হলো, এখানে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত। তাই চিকিৎসা শাস্ত্রের কোন অপূর্ণতা নিয়ে মানুষের সেবা করা মানে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করা। সনদ থাকার কারণে, ভুল চিকিৎসা করে মানুষ মারলে দুনিয়ার আদালতে হয়তো ছাড় পেয়ে যাবে, কিন্তু বিবেকের দংশন ও আখেরাতের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে কখনো মুক্তি পাবে না।

রোগীর প্রতি ডাক্তারের যে দায়িত্ব রয়েছে, এর অন্যতম হচ্ছে রোগীকে সম্মান করা। সম্মান করা মানে রোগীর অভিযোগ ও তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা। তার রোগ বা তাকে নিয়ে বিদ্রূপাত্মক কোন কথা না বলা। রোগীর প্রতি কোনরূপ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শন না করা। অনেক সময় রোগীর জ্ঞানগত যোগ্যতা বা সামাজিক অবস্থান নিচু হওয়ার কারণে অবজ্ঞা করা হয়, তাদেরকে সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং অধিক হক্বদার গরীব রোগীর চেয়ে সামান্য রোগের ধনী ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, যা আদৌ কাম্য নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোন মানুষের খারাপ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে’। পবিত্র কুরআনেও বলা হয়েছে, ‘আর অহংকার-বশে তুমি মানুষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না এবং জমিনে উদ্ধতভাবে চলাফেরা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক ও অহংকারীকে ভালবাসেন না’।

ডাক্তারের খোশকথা দ্বারা উৎফুল্ল হয়ে অনেক সময় রোগীরা প্রশান্তি অনুভব করে। এটাও তাদের ওপর চাপ কমাতে সহায়ক হয়। তাই একজন আদর্শ চিকিৎসক সর্বদা রোগীকে সম্মান দেখিয়ে হাসি মুখে কথা বলেন। এর মাধ্যমে তার ছওয়াবে পাল্লাও সমৃদ্ধ হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ভাল ভাল কথা বলাও ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত’।

ইঞ্জিনিয়ার বাড়ি বানাতে ভুল করলে তা সংশোধনের ব্যবস্থা আছে। বিচারক আদালতে রায় ভুল দিলে উচ্চ আদালতে তা সংশোধনের সুযোগ থাকে। কিন্তু চিকিৎসায় ভুল করলে তা সংশোধনের সুযোগ থাকে না বললেই চলে। তাই কোন অসম্পূর্ণতা নিয়ে রোগী দেখা ঠিক নয়। মানব সেবার নিয়তে চিকিৎসা সেবা দিলে এর দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টি মিলবে। তাই একজন আদর্শ ডাক্তারের উদ্দেশ্য থাকবে মানুষের কল্যাণ সাধন করা এবং সহানুভূতি নিয়ে রোগী দেখা। অর্থাৎ রোগী তার রোগের কারণে মানসিক ও শারীরিকভাবে যতটুকু পেরেশানিতে আছে, তা উপলব্ধি করার অনুভূতি ডাক্তারের মাঝে থাকা। একজন ডাক্তারের কাছে রোগী কী প্রত্যাশা করে, সে অনুযায়ী রোগীর প্রতি খেয়াল করা, মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনা ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো। এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহর নিকটে জবাবদিহি থেকে রক্ষা পেতে পারেন এবং নিজেকে তাঁর করুণা লাভের যোগ্য হিসাবেও প্রমাণিত করতে পারেন। কারণ রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া কর, আকাশের মালিক তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করবেন’।

অন্যত্র তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ আদম সন্তানকে ডাক দিয়ে বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার সেবা-যত্ন করনি। তখন সে বলবে, হে রব! আমি কীভাবে তোমার সেবা-শুশ্রূষা করব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, কিন্তু তুমি তো তার সেবা করনি। এটা কি জানতে না যে, যদি তুমি তার সেবা করতে, তাহলে তার কাছেই আমাকে পেয়ে যেতে’।

মহিলা রোগীর চিকিৎসা মহিলা ডাক্তার দ্বারা করাই উত্তম। তবে সংশ্লিষ্ট রোগের বিশেষজ্ঞ মহিলা ডাক্তার পাওয়া না গেলে বাধ্যগত অবস্থায় পুরুষ ডাক্তারও চিকিৎসা করতে পারবেন। সেখানে মহিলার কোন অভিভাবক তার সঙ্গে থাকবে। অনুরূপভাবে মহিলা ডাক্তারগণও প্রয়োজনে সতর্কতার সাথে পুরুষ রোগীর চিকিৎসা করতে পারবেন। তবে উভয়েই প্রয়োজনের বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে না এবং স্পর্শ করবে না।

আর চিকিৎসার প্রয়োজনে কারো সতর ও লজ্জাস্থান খোলার দরকার হলে শুধু প্রয়োজনীয় অংশ খোলার অনুমতি আছে, এর বেশি নয়। এক্ষেত্রে ডাক্তারদের জন্য জরুরি হলো দৃষ্টিকে সংযত রাখা ও সর্বাবস্থায় তাকওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

রোগীর অবস্থা বিবেচনায়, তার সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে ডাক্তারের ভূমিকা অগ্রগণ্য। সাধারণ মানুষের ভূমিকা এক্ষেত্রে অন্ধের মতো। তাই একজন ডাক্তারকে আমানতদারী রক্ষা করে চলতে হয়। নির্দিষ্ট রোগের ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা না থাকলে আমানতদারীর সঙ্গে তিনি রোগীকে অন্য ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দিবেন। এক্ষেত্রে অনধিকার চর্চা করবেন না। কেননা রোগী ডাক্তারের কাছে রোগ বিষয়ক পরামর্শের জন্য আসে। নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়, সে আমানতদার’। সুতরাং কোন কিছু ঠিক করে দেয়ার আগে, চিকিৎসা শাস্ত্রের আলোকে এর কার্যকারিতা ও প্রায়োগিক দিকগুলো ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে। অপ্রচলিত, অগ্রহণযোগ্য কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মানহীন কোম্পানির ওষুধ শুধু কমিশনের লোভে দিলে চিকিৎসা পেশার সঙ্গে এটা হবে এক ধরনের প্রতারণা।

ক. লিখিত চিকিৎসাপত্র দেয়া। লেখা হবে স্পষ্ট অক্ষরে। সেখানে ওষুধের পরিমাণ, ব্যবহারের পদ্ধতি, চিকিৎসা গ্রহণের সময় যেসব বিষয় পরিহার করে চলতে হবে ও ওষুধ ব্যবহারের ফলে সাময়িক যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে তা সুস্পষ্ট অক্ষরে লেখা থাকতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত খাঁটি মুমিন হতে পারে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে’।

খ. যে বিষয় নিয়ে পড়া-লেখা করা হয়েছে, অর্থাৎ চিকিৎসক যে বিষয়ে দক্ষ ঐ বিষয়ের কোন রোগী এলে চিকিৎসা দিতে কোন কার্পণ্য না করা। বরং সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা ব্যয় করা। যদি নিজের দ্বারা সম্ভব না হয়, তাহলে উপযুক্ত কোন হাসপাতালে স্থানান্তর করা। মনে রাখতে হবে, একজন মানুষের জীবনের মূল্য জগতের কোন বস্তু দ্বারা হতে পারে না। তাই অবহেলার কারণে রোগীর কোন ক্ষতি হলে ডাক্তার দায়ী হবেন এবং আল্লাহর কাছে তাকে জবাব দিতে হবে। ভাবতে হবে, আল্লাহ যেমন অনুগ্রহ করে আমাকে ডাক্তার বানিয়েছেন, আমারও কর্তব্য হলো মানুষের ওপর ইহসান করা।

গ. রোগীর সার্জারি বা অপারেশন উপযুক্ত স্থানে করা। অর্থাৎ অপারেশন থিয়েটারেই অপারেশন করা। এমন যেন না হয়, অপারেশনের জন্য পর্যাপ্ত যোগান নেই, তারপরও অপারেশন শুরু হয়ে গেল। এটা হবে মানুষ ও মানবতার প্রতি চরম অবহেলা।

ঘ. রিলিজ দেয়ার উপযুক্ত সময় আসার আগে রিলিজ না দেয়া। অনেক অসাধু বেসরকারি মেডিকেল কর্তৃপক্ষ টাকার নেশায় সময় পার হয়ে গেলেও রিলিজ দিতে চায় না। আবার অনেক সরকারি হাসপাতাল সময়ের আগেই বের করে দেয়। উভয়টাই রোগীর প্রতি অন্যায় ও চরম অবহেলা।

চিকিৎসা পেশাতে অন্যায় ও পাপ কাজের অনেক চোরাগলি আছে। সেগুলোর অন্যতম হলো- বাচ্চা নষ্ট করা, সার্জারির মাধ্যমে চেহারা বা দেহের আকৃতি পরিবর্তন করা প্রভৃতি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তাদের পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেব, তাদেরকে আদেশ দেব যেন তারা পশুর কর্ণ-ছেদন করে এবং তাদেরকে আদেশ করব যেন তারা আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করে। বস্তুত যে ব্যক্তি আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়’।

অত্র আয়াতে সৃষ্টির বিকৃতি বলতে আল্লাহর প্রাকৃতিক সৃষ্টির পরিবর্তন বুঝানো হয়েছে। পুরুষের স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা মহিলাদের গর্ভাশয় তুলে ফেলে তাদের সন্তান জন্মানোর যোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করাও এই পরিবর্তনের আওতায় পড়ে।
পাশাপাশি মেকআপের নামে ভ্রূর চুল চেঁছে নিজের আকৃতির পরিবর্তন করা, দাঁত সরু করা এবং চেহারা ও হাতে নকশা করা, উল্কি করা, ট্যাটু লাগানো ইত্যাদিও এর মধ্যে শামিল। এসবই হলো শয়তানী কার্যকলাপ, যা থেকে বিরত থাকা জরুরি।

আদর্শ ডাক্তারদের কাজের মাঝে এটাও অন্তর্ভুক্ত যে, তারা রোগ কমানোর জন্য গবেষণা ও চিন্তা-ভাবনা করবেন। মানুষের শিক্ষার কোন শেষ নেই। বিশেষ করে চিকিৎসার ময়দানে। প্রত্যেক দিন মানব দেহে নতুন নতুন রোগ দেখা দিচ্ছে। তাই প্রত্যেক ডাক্তারের কর্তব্য হচ্ছে নতুন নতুন বিষয় শেখার চেষ্টা করা। কোন কোন ডাক্তার রোগী দেখতেই ব্যস্ত থেকে সময় পার করে দেন। তারা শেখার সুযোগ পান না বা এর জন্য সময় দিতে চান না। এটা কোন সৃজনশীল ও আদর্শ ডাক্তারের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।

রোগী ধনী বা গরীব যাই হোন না কেন তারা অসহায়। আর চরম অসহায় এই মানুষদের পকেটের সব টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য কিছু ডাক্তার, ক্লিনিক, প্যাথলজি, রক্ত-বিক্রেতা ও নামে-বেনামে ওষুধ কোম্পানি মিলে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সারা দেশে তাদের লোভের জাল বিস্তার করে রেখেছে। ইথিকস বিসর্জন দেয়া বেনিয়া ডাক্তাররা রোগীকে কঠিন অসুখের ভয় দেখিয়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় ও ব্যয়বহুল টেস্ট করাতে বাধ্য করেন। পরে টেস্টের মোট টাকার অর্ধেক তিনি কমিশন পান সংশ্লিষ্ট প্যাথলজি থেকে। কমিশনের বাইরেও তিনি টেস্টের জন্য রোগী পাঠানোর নামে সংশ্লিষ্ট প্যাথলজি থেকে এককালীন সেলামী বাবদ মোটা টাকা পান। এছাড়া এরা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি থেকে তাদের দামী দামী ওষুধ রোগীর প্রেসক্রিপশনে লেখার জন্য মোটা অংকের সেলামী আদায় করেন। ওষুধ ও কোম্পানি যত ভালই হোক না কেন টাকা না দিলে এসব ডাক্তার সেই ওষুধ কোন দিন রোগীর প্রেসক্রিপশনে লেখেন না। যেখানে একটা বা দুইটা সাধারণ কম দামী ওষুধে রোগীর অসুখ সারতে পারে, সেখানে এসব ডাক্তাররা ওষুধ কোম্পানির সেলামী হালাল করতে রোগীকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অধিক সংখ্যক দামী ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। প্রয়োজন না থাকলেও শুধু ওষুধ কোম্পানির বিক্রি বাড়াতে এসব ডাক্তাররা অসহায় রোগীদের বেশি টাকার ওষুধ কিনতে বাধ্য করছেন। এসব ডাক্তাররা অসহায় মরণাপন্ন রোগীকে সুস্থ হবে না জেনেও ব্যয়বহুল বেসরকারি হাসপাতালে রেফার করেন স্রেফ কমিশনের জন্য। এরা কমিশনের জন্য রোগীকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রেখে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারে উৎসাহ দেন। রোগীর অপারেশন দরকার না হলেও স্রেফ টাকার জন্য রোগীকে জোর করে অপারেশন করান। সরকারি হাসপাতালে টেস্টের ব্যবস্থা থাকলেও কমিশনের লোভে একজন গরীব রোগীকে ব্যবসায়িক প্যাথলজিতে পাঠান। সর্বস্বান্ত করেও সুস্থ করতে না পারলে আরও বড় ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেন। সেখানেও রয়েছে কমিশন। বেশি টাকার এই অসংযত লোভ মানসিক অসুস্থতার একটি বড় লক্ষণ।

আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব যাদের হাতে, সেই ডাক্তাররাই যদি এমন একটা রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ থাকেন, তবে আমরা কার কাছে চিকিৎসা নেব? এই মানসিক রোগাক্রান্ত ডাক্তারদের কাছে শারীরিক রোগের সুপরামর্শ পাওয়া দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।

আমরা সেই সকল ডিগ্রিধারী অসাধু ডাক্তারদের বলতে চাই, সাবধান! আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহর ওয়াস্তে মানুষের সাথে প্রতারণা করে নিজেদের আখেরাত ধ্বংস করবেন না। দয়া করে অমানবিক হবেন না। কোনরূপ অবহেলা ও লালসার কারণে যদি কোন রোগীর সামান্যতম ক্ষতি হয়, তাহলে এর হিসাব অবশ্যই আপনাকে আল্লাহর সামনে দিতে হবে। ডাকাতের হত্যা করা আর ডাক্তারের হত্যার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ জীবনের বদলে জীবন অথবা জনপদে অনর্থ সৃষ্টি করা ব্যতীত কাউকে হত্যা করে, সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করে। আর যে ব্যক্তি কারো জীবন রক্ষা করে, সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করে’।

আমাদের সবাইকে একদিন মরতে হবে। ক্ষণস্থায়ী এই পার্থিব জীবনে আমরা কয়দিন আর বাঁচব? তাই আসুন! নিজেরদেরকে সংশোধন করে আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখের জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করি। আল্লাহ যেমন আমাদেরকে সর্বদা তাঁর দয়ার চাদরে আবৃত রাখেন, আমরাও সাধ্যানুযায়ী তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি দয়া প্রদর্শনে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন।

ডাক্তারগণ দাওয়াতি ময়দানে অবদান রাখতে পারেন। সাধারণ দাঈর চেয়ে ডাক্তারদের দাওয়াতের প্রভাব কোন অংশে কম নয়; বরং কোন কোন ক্ষেত্রে দাওয়াতের প্রভাব বিস্তারে ডাক্তাররা এগিয়ে থাকতে পারেন। কারণ সুস্থ অবস্থার চেয়ে রোগাক্রান্ত অবস্থায় মানুষের মন অধিক নরম থাকে এবং সৎ চিকিৎসকের যে কোন কথা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে। এই সুযোগে ডাক্তারগণ যদি চিকিৎসা পরামর্শের পাশাপাশি দ্বীনের কিছু কথা রোগীর সামনে উপস্থাপন করেন, তাহলে এটা রোগীর জীবনে মহৌষধের মত কাজ করতে পারে। সেকারণ ডাক্তারি বিদ্যার পাশাপাশি দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান রাখা চিকিৎসকদের জন্যও জরুরি। এতে তারা মানব সেবার পাশাপাশি দাওয়াতি অঙ্গনে নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মানুষদের কাতারে শামিল করতে পারেন।
তারা মানবতার কল্যাণকামী শিক্ষক হয়ে একই সাথে আল্লাহর দয়া এবং ফেরেশতামণ্ডলী ও আল্লাহর সকল সৃষ্টির দোআ লাভে ধন্য হতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দেয়, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন এবং তাঁর ফেরেশতামণ্ডলী, আকাশসমূহ ও জমিসমূহের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তে পিঁপড়া ও পানির মাছ পর্যন্ত তার জন্য দোআ করে’।

শিরক-বিদ‘আত ও ভ্রান্ত আকিদায় নিমজ্জিত এই সমাজের মানুষকে নির্ভেজাল তাওহিদের শিক্ষা দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। ডাক্তারগণ এই ব্যাপারে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। ডাক্তারদের মনে রাখতে হবে যে, তিনি ডাক্তার হওয়ার আগে তার পরিচয় তিনি একজন মুসলিম। আর যে কোন পেশার একজন আদর্শ মুসলিমের করণীয় হলো সাধ্যানুযায়ী আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া। তাই রোগীর সাথে আলাপচারিতার ফাঁকে ফাঁকে তার আকিদা সংশোধন করে দেওয়া ডাক্তারের কর্তব্য। আর রোগী যদি অমুসলিম হয়, তাহলে তাকে ইসলামরে দাওয়াত দিবেন। আল্লাহর রাসূল (সা.) তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় চাচা আবু ত্বালেবের মৃত্যু শয্যায় ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন।

আনাস (রা.) বলেন, মদিনার এক ইহুদি বালক রাসূল (সা.)-এর খেদমত করতেন। সে একবার অসুস্থ হলে নবী করীম (সা.) তাকে দেখতে গেলেন। তিনি বালকটির মাথায় হাত রেখে বললেন, ‘তুমি ইসলাম গ্রহণ কর’। সে তার পাশে অবস্থানরত পিতার দিকে তাকাল। পিতা তাকে বলল, ‘আবুল ক্বাসেমের (রাসূল (সা.)-এর উপনাম) কথা মেনে নাও’। তখন সে ইসলাম গ্রহণ করল। রাসূলুল্লাহ (সা.) সেখান থেকে বের হওয়ার সময় বললেন, ‘সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি তাকে আমার মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন’। হতে পারে আদর্শ মুসলিম ডাক্তারের কোন এক দাওয়াতে আল্লাহ তাঁর কোন পথভ্রষ্ট বান্দাকে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দিতে পারেন। ডাক্তারের জীবনে এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। আর এটাই হতে পারে আখেরাতে তার নাজাতের ওসিলা। ডাক্তাররা শুধু একনিষ্ঠভাবে দাওয়াত দিবেন, আর হেদায়াত দেওয়ার মালিক হচ্ছেন আল্লাহ।

মুসলমানরা রোগে-শোকে এবং হর্ষ-বিষাদে একমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভরশীল থাকেন। তাই ডাক্তাররা রোগীকে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হতে অনুপ্রাণিত করবেন যে, তার এই রোগ আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে এবং একমাত্র তিনিই এই রোগের আরোগ্য দাতা। ডাক্তাররা রোগ সারানোর কোন ক্ষমতা রাখেন না, তারা শুধু রোগীর চিকিৎসা-সেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন এবং আল্লাহর হুকুমে সেই চিকিৎসা কার্যকর হয় অথবা অকার্যকর হয়। তাহলে রোগী ডাক্তার ও ঔষধের উপর ভরসা না করে আল্লাহর উপর ভরসা করবে, যা প্রকৃত মুসলিমের জন্য অবশ্য করণীয়। যেমন ইবরাহীম (আ.) অসুস্থ হয়ে বলেছিলেন, ‘যখন আমি পীড়িত হই, তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন’। আর যেহেতু রোগ আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে থাকে, সেহেতু রোগী যেন রোগের ব্যাপারে হতাশ হয়ে রোগকে গালি না দেয় এবং রোগের কষ্টে মৃত্যু কামনা না করে এই মর্মে ডাক্তারগণ রোগীদেরকে অভয় দিবেন এবং আরোগ্য লাভের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোআ করার ব্যাপারে তাদেরকে উৎসাহিত করবেন।

অনেক রোগী আছেন, যারা দ্বীনের বিধান সঠিকভাবে পালন করেন না। অসুস্থ হলে তাদের হৃদয়ে অনুতাপের অনুভূতি জাগ্রত হয়। তখন তাদের হৃদয় আল্লাহর দিকে রুজূ হয় এবং দাওয়াত গ্রহণের উপযোগী হয়ে উঠে। আর সেই অনুতপ্ত হৃদয়ে ডাক্তাররা আল্লাহভীতির বীজ বপন করতে পারেন। অনেকেই রোগাক্রান্ত হয়েও ইবাদতের বিধি-বিধান না জানার কারণে ইবাদত থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। যেমন অনেক রোগী অসুস্থতার দোহাই দিয়ে সালাত আদায় করেন না, আবার কেউ হাসপাতালে বেডে বসে গান শোনে-টিভি দেখে সময় কাটান। তাই সালাতের আবশ্যকতা, সালাত পরিত্যাগের পরিণতি, অসুস্থাবস্থায় ওজু, গোসল, তায়াম্মুম এবং অক্ষম অবস্থায় বসে বা শুয়ে থেকে সালাত আদায়ের পদ্ধতি ও বিধানগুলো ডাক্তারদের মাধ্যমে শিখলে রোগীরা বেশি প্রভাবিত হন। কোন কোন রোগীর জীবনে ডাক্তারদের দাওয়াতের প্রভাব আজীবন থেকে যায়। তাই ডাক্তারদেরকে চিকিৎসা বিদ্যা চর্চার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় শারঈ জ্ঞান চর্চার প্রতিও মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। এজন্য মেডিকেলের সিলেবাসগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক।

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মৃত্যু পথযাত্রীকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই) তালকিন দাও (পাঠ করাও)। তিনি বলেন, ‘যার শেষ বাক্য হবে ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। ডাক্তারগণ মৃত্যুর পথযাত্রীদেরকে কালেমার তালকিন (পড়ানো) দেওয়ার বেশি সুযোগ পান। সুতরাং হসপিটালের বেডে বা অপারেশন থিয়েটারে মরণাপন্ন রোগীকে কালেমার তালকিন দেওয়া ডাক্তারের অন্যতম কর্তব্য।

দ্বীনদার ডাক্তারদের অন্যতম করণীয় হলো তাদের মেডিকেল, হসপিটাল, ক্লিনিক এবং চেম্বারগুলোতে দ্বীনি পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। সহকারী ডাক্তার, নার্স ও সহকর্মীদের মাঝে হালাল-হারাম, ডাক্তারি পেশার খেয়ানত, পর্দা-পুশিদা প্রভৃতি বিষয়ে দাওয়াত দানে সদা তৎপর থাকা। কোন মেডিকেল, হসপিটাল বা ক্লিনিকের পরিবেশ যদি অনুকূলে নাও থাকে, তবুও আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্যের সাথে নিজের দ্বীনি দায়িত্ব পালন করা। অনেকেই দূষিত পরিবেশের দোহাই দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন, এটা আদৌ কাম্য নয়।

আবার কোন কোন অপরিণামদর্শী আলেম ডাক্তারদেরকে এই পেশায় নিরুৎসাহিত করেন এবং নারীদের জন্য হারাম হওয়ার ফতোয়া দেন। এই ব্যাপারে শায়খ উছায়মীন (রহ.)-এর কথাটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ডাক্তারদেরকে চিকিৎসাবিদ্যা ছেড়ে দিতে বলি, ভাল লোকেরা এই জ্ঞান অর্জন না করে এবং বলে যে, আমরা কীভাবে চিকিৎসাবিদ্যা অর্জন করব, অথচ আমাদের পাশে থাকে মহিলা নার্স, শিক্ষার্থী ও ইন্টার্র্নি ডাক্তার? আমরা বলব, আপনি যদি এই চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা করা থেকে বিরত থাকেন, তাহলে এ বিদ্যার ময়দান কি খালি থাকবে? অচিরেই খারাপ লোকগুলো এ ময়দান দখল করে নেবে এবং জমিনে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেবে। সুতরাং দ্বীনদার ডাক্তারের কর্তব্য হলো তার কর্মক্ষেত্রে যদি কলুষিত পরিবেশ থাকে, তাহলে প্রথমে ব্যক্তি পর্যায়ে দাওয়াতের মাধ্যমে সাধ্যমত তিনি তার দ্বীনি দায়িত্ব পালন করতে থাকবেন।

দ্বীন বিমুখ, আত্মহারা ও অসাধু ডাক্তারদেরকে সঠিক পথে আনার জন্য দ্বীনদার ডাক্তারদেরকেই আগে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সাধারণত আলেমগণের দাওয়াত অধিকাংশ সময় তাদের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে না। তাই মৌখিকভাবে হোক এবং বইপত্র বা অন্য কোন মাধ্যমে হোক নিজেদের পরিমণ্ডলে সাধ্য অনুযায়ী দাওয়াতি কাজে আত্মনিয়োগ করা একজন আদর্শ ডাক্তারের ঈমানী দায়িত্ব।

চিকিৎসা পেশা একটি মহান পেশা। এই পেশায় মানব সেবার যত বেশি সুযোগ পাওয়া যায়, পৃথিবীর অন্য কোন পেশাতে সেটা পাওয়া যায় না। ডাক্তারগণ হলেন মানবতার খাদেম। তারা যদি আদর্শবান হন, তাহলে তাদের হাত ধরেই সমাজে মানবিকতার ভিত রচিত হবে এবং মনুষ্যত্বের নিশান উচ্চকিত হবে। পক্ষান্তরে তারা বিপথগামী হলে জনজীবনে নেমে আসবে অশান্তি ও দুর্ভোগের কালো মেঘ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত