মোনাজ হক

০৬ নভেম্বর, ২০১৬ ১৪:৫৯

কাবা শরীফের ফটোশপ ও বাঙালি সেন্টিমেন্ট

রবিবারের ভাবনা

বিবর্তনবাদের দর্শন ও তথ্য অনুযায়ী মানবজাতির বয়স কম পক্ষে ১ মিলিয়ন বৎসর, আর ধর্মমতে মানবজাতি তখন থেকেই পৃথিবীতে বসবাস করছে যখন থেকে আদম/হওয়া পৃথিবীতে অবতীর্ণ হলো, সে হিসেবে মানব জাতির বয়স ১৩ বিলিয়ন বৎসর।
ঈশ্বর ছয় দিনে এই বিশ্ব ভ্রম্মান্ড সৃষ্টি করেন এবং বাকি একটি দিনে অর্থাৎ সপ্তম দিনে ঈশ্বর প্রথম মানব আদম ও ইভ এবং ইডেন উদ্যানে সব প্রাণী সৃষ্টি করেন কিন্তু আদম ও ইভকে গন্দম ফল খেতে নিষেধ করেন সৃষ্টিকর্তা - কোনো এক দিন আদম ও ইভ গন্দম ফল খাওয়ার পরে স্বর্গের ইডেন উদ্যানে থেকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়। ক্রমে আদম ও ইভ থেকেই জাতি-গোষ্ঠী- দেশ-সমাজ তৈরি হয়।

তারপর আসে ধর্ম যা মানুষকে এই বিশ্ব ভ্রম্মান্ডের সৃষ্টিরহস্যের ব্যাখ্যা দেয় প্রতিটি ধর্মই তাদের নিজেদের মতো করে। আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব ভ্রম্মান্ডের জাতি-গোষ্ঠী- দেশ-সমাজ কে জানতে আমরা এক দেশ থেকে আর একদেশে ঘুরে ফিরে নিজের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি, অন্যমানুষের সাথে তা শেয়ার করি

সম্প্রতি দুটি ঘটনা ও ফেসবুকে ছবি আপলোড নিয়েই আজকে আমার রবিবারের ভাবনা।

যে কথা শুরুতেই বলছিলাম মানবজাতির বয়স কম পক্ষে ১ মিলিয়ন বৎসর বিবর্তনবাদীরা বলেন। ধর্ম এসেছে তার ও অনেক পরে, আব্রাহাম বা ইব্রাহিম (স:) কে বলা হয় ৩ টি বৃহৎ ধর্মের প্রবক্তা, জুডাইসম. ক্রিস্টিয়ানিটি এবং ইসলাম।

আব্রাহাম এর জন্ম খ্রিস্ট জন্মের ও ১৮০০ বছর আগে প্রাচীন ব্যাবিলনের উর কাশদীম শহরে। সে সময়ের ব্যাবিলন এর রাজা নমরুদ যখন জানতে পারলো যে তারই রাজ্যে এক শিশুর জন্ম হয়েছে সে একদিন ব্যাবিলনের সিংহাসন দখল করবে, তখন থেকেই আব্রাহামকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায় আব্রাহামের জীবনে শুরু হয় এক্সডুস (পালিয়ে দাঁড়ানো) তিনি ব্যাবিলন (ইরাক) থেকে, সিরিয়া হয়ে মিশরের পথে কোনো এক সময় মক্কায় আসেন এবং মিশর থেকে ক্যানান (ইসরায়েল এর সাবেক নাম) যাত্রা করেন।

ঐতিহাসিকরা আরো বলেন আব্রাহাম ই কাবা (চৌকস ঘর) নির্মাণ করেন। প্রথম দিকে কাবায় পৌত্তলিক পূজা হলেও, পরবর্তীতে হাজরাত মুহাম্মদ (স:) এর নেতৃত্বে যখন ইসলাম আরব ভূখণ্ডে বিস্তার লাভ করে তখন থেকেই কাবার পবিত্রতা রক্ষা করে আসছেন মক্কার মুসলমানরা। সেখান থেকে দেখতে গেলে সেই পবিত্র কাবা শরীফের ফটো বিকৃত করে FB তে ফটোশপ করে ছবি পোস্ট করা একটা গর্হিত কাজ।

বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো গত এক সপ্তাহ ধরে হচ্ছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়, কাবা শরীফের ফটোশপ করে পোস্ট করার ফলে হিন্দু বাড়িঘর লুট পাট ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা। যে ব্যক্তি এই ফটোশপটি করেছে তাকে পুলিশ ধরেছে তার বিচার হবে, কিন্তু সেটা নিয়ে এতটা বাড়াবাড়ির কি কোনো যুক্তি আছে?

একজন ফটোশপ করে ছবি পোস্ট করেছে বলেই কি আবার কাবা শরীফে পৌত্তলিক পূজা ফিরে আসবে? একজন ফটোশপ করে ছবি পোস্ট করেছে বলেই কি আবার কাবা শরীফে পৌত্তলিক পূজা ফিরে আসবে?

তাতো নয়, কাবা শরীফ মক্কা নগরীতেই থাকবে আর কখনো সেখানে পৌত্তলিক পূজা হবে না, বিগত ১৪ শত বছরেও যা হয়নি তা এখনো হবে না, বরং প্রতি বছর হজ যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে এই সত্যিটি উপলব্ধি করতে পারলেই বাঙালিরা হয়তো এতটা সেন্টিমেন্টাল হতো না।

  • মোনাজ হক : সম্পাদক, আজকের সময়, বার্লিন, জার্মানি।
  • এবিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত