ফারজানা কবীর খান (স্নিগ্ধা)

১৩ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:১১

'পা বাঁধা ওড়নায় রুনীর ডিএনএ' সংবাদ প্রসঙ্গে

 

আজকের (১২ এপ্রিল) যুগান্তর পত্রিকায় ''পা বাঁধা ওড়নায় রুনীর ডিএনএ!'' সংবাদ শিরোনামে অপ্রাসংগিকভাবে আমার নাম ব্যবহার করার বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য:

প্রথমেই আমি আপনাদের জন্য আমার নামসহ প্রকাশিত সংবাদের অংশটুকু তুলে ধরছি।
''সেই সাংবাদিক যা বললেন : সাংবাদিক সাগর জার্মানিতে থাকাবস্থায় (২০০৮-১১) ঢাকার অপর এক নারী সাংবাদিক সেখানে রেডিও ডয়েস এ ভেলে চাকরি নেন। তিনি সেখানে নয় মাস ছিলেন। বেশকিছু তথ্য যাচাইয়ের জন্য যুগান্তর অনুসন্ধানী টিম ওই নারী সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়। ২০ মার্চ তার কর্মস্থলে গিয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাগর ও আরাফাত ভাই আগে থেকেই সেখানে কর্মরত ছিলেন।

এর আগে সাগর ভাই ইত্তেফাকে আমার সহকর্মী ছিলেন। জার্মানি থেকে দেশে ফেরার পর রুনী আপার সঙ্গে আমার অনেকবার দেখা হয়েছে। তিনি আমার সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করেছেন।’ তিনি বলেন, আসলে জার্মানিতে থাকাবস্থায় স্নিগ্ধা নামের বাঙালি এক মেয়ে রুনী আপার কান ভারি করত।’'

এখানে বক্তব্যদানকারী সাংবাদিকের নাম গোপন রাখা হয়েছে, অথচ কোনরকম তথ্য প্রমাণ ছাড়া এবং আমার অনুমতি না নিয়ে সংবাদটিতে আমার নাম ছাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এখান থেকে আমার এবং যে কোন সচেতন পাঠকের মনে কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হয়। যা আমি পত্রিকার সম্পাদক, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক এবং সচেতন পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

১) সাগর-রুনির হত্যাকান্ড বাঙলাদশে একটি বহুল আলোচিত ঘটনা। এরকম একটি আলোচিত হত্যাকান্ড সম্পর্কিত খবরে বক্তব্যদানকারী সেই নারী সাংবাদিকের নাম কেন গোপন রাখা হলো, যিনি সাগর-রুনির কিছু পারিবারিক বা ব্যাক্তিগত বিষয় সম্পর্কে জানেন, যে বিষয়টি দিয়ে রুনির কান ভারী করা সম্ভব?

২) সাগর-রুনি খুন হয়েছিলেন ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীর ১১ তারিখে। সেই হত্যাকান্ডটি এখনো তদন্তাধীন। তিন বছরের বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পর সেই নাম গোপনকারী নারী সাংবাদিকের কেন মনে হলো যে, রুনির কান ভারির করার মতো বিষয়টি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত? আর আমার দ্বারা রুনির কান ভারি করার বিষয়টি তিনি নিশ্চয়ই মেহেরুন রুনি বা সাগর সারোয়ারের কাছ থেকেই শুনেছিলেন, যা এ দুজনের হত্যাকান্ডে প্রভাব রেখেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি গত তিন বছর ২ মাস কেন চুপ করে ছিলেন? কেন তিনি সাগর-রুনি খুন হবার সঙ্গে সঙ্গে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে আমার দ্বারা কান ভারি করার গোপন তথ্যটি সরবরাহ করেননি? সেই কান ভারি করা ঘটনার সঙ্গে সেই নাম গোপন করা সাংবাদিক কি নিজে জড়িত? তা না হলে তিনি তিন বছরেও বেশি সময় ধরে অন্যের কান ভারি করার গল্প কিভাবে মনে রাখলেন?

৩) সংবাদটিতে আমাকে একজন বাঙালি মেয়ে হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ আমি সাগর সারোয়ারের সহকর্মী ছিলাম, এবং আমি আর আমার স্বামী সাগর-রুনি পরিবারের একমাত্র বাঙলাদেশী প্রতিবেশী এবং সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলাম। সেটা এই সংবাদে উল্ল্যেখ করা হয়নি কেন?

৪) সাগর-রুনি হত্যার তিন বছরেরও বেশি সময় পার হবার পর, খুনের রহস্য উদঘাটন করতে তদন্ত কর্মকর্তারা যেখানে ব্যর্থ, সেখানে সাগর-রুনির জীবনের ব্যাক্তিগত বিষয়কে জড়িয়ে খুনের ঘটনাকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে নাম গোপন করা এ নারী সাংবাদিক এবং যুগান্তর পত্রিকা কি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে? তা না হলে, সে নারী সাংবাদিকের নাম গোপন রেখে আমার নাম প্রকাশ করা হলো কেন? এবং কান ভারী করার বিষয়টি উল্লেখ করা হলো না কেন?

আরো প্রশ্ন জাগে, রুনির কান ভারী করার মতো সাগরের জীবনে কি এমন ঘটেছিল, যার কারণে সাগর-রুনির মতো সাংবাদিক দম্পতিকে নৃশংসভাবে খুন হতে হলো? সে বিষয়টি যে আমি জানতাম, তা সেই নারী সাংবাদিক কিভাবে জানলেন? সাগর সারোয়ার কাজ করতেন বাঙলাদেশী সহকর্মীদের সঙ্গে, এবং চলাফেরা করতেন জার্মানির বাঙালি সমাজের সঙ্গে। রুনির কান ভারি করার মতো, এবং সাগর-রুনি দম্পতিকে খুন হতে হয়, তাদের সেই গোপন বা পারিবারিক বিষয়টি কি তার সহকর্মীরা বা বাঙালি সমাজের আর কেউ জানতেন?

নাম গোপন করা সেই নারী সাংবাদিকের নাম প্রকাশ করা সহ উপরের প্রশ্নগুলোর জবাব দেবার জন্য যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক এবং প্রকাশিত সংবাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের কাছে দাবী জানাচ্ছি।

আর যদি আমার প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকতার নামে তথ্য প্রমাণ ছাড়া, কারো শোনা কথা ছাপিয়ে, আমাকে বিব্রত করার মতো নোংরামি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের ক্ষমা চাইতে অনুরোধ করছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত