মাসকাওয়াথ আহসান

২৮ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৮:৩৫

গোস্বা নিবারণী পার্ক

রম্য

ক্রোধ প্রশমনে ঢাকায় তৈরি হচ্ছে পার্ক। নাগরিক জীবনের বিষণ্ণতা, ফেসবুকে একের পর এক ইস্যুতে দুটি পক্ষে বিভাজিত হয়ে ২৪/৭ রাগে উন্মত্ত হয়ে ঝগড়া করে, পুরবাসী যখন নৈরাশ্যের মাঝে বিলীন; তখন রাগ কমিয়ে মানসিক সুস্থতা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা থাকছে এই পার্কে।

ঢাকায় ওসমানী উদ্যানের ২৯ একর জায়গার ওপর প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই পার্ক নির্মাণ করা হবে। গতকাল শনিবার এই পার্কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন।

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানসিক স্বাস্থ্যবিদ বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মেট্রোপলিটানগুলোতে যাপিত জীবন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শো-অফ নির্ভর প্রতিযোগিতামূলক জীবন বাস্তবতায় বিপর্যস্ত হয়ে প্রতি দশজনে চারজন মানুষ কোন না কোন মানসিক রোগের স্বীকার। এই গোস্বা নিবারণী পার্ক মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য তাই খুবই শুভ উদ্যোগ।

উদ্বোধনী বক্তৃতায় মেয়র বলেন, ‘নাগরিকদের মধ্যে অনেক সময় মান, অভিমান, গোস্বা হয়ে থাকে। এই পার্কে যখন মানুষ আসবে স্বাভাবিকভাবে তাদের ভালো লাগবে, উৎফুল্ল লাগবে। এখানে জলের আধার আছে, চা, কফি, স্যান্ডউইচ খাওয়া ও হারানো দিনের গান শোনার ব্যবস্থা থাকবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এখানে এলে মানুষের গোস্বা নিবারণ হয়ে যাবে। এই চিন্তা থেকেই এটি গোস্বা নিবারণী পার্ক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভাষাবিজ্ঞানী বলেছেন, "অভিমান" শব্দটি পৃথিবীর আর কোন অঞ্চলের ভাষার অভিধানে নাই। কোন বিষয়ে তড়াক করে রেগে গিয়ে দুটি গালাগাল করার পরেও যেসব মানুষের রাগ প্রশমিত হয়না; তাদের ভেতরে রাগ গনগনে লোহার মত যখন ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকে; রাগের সেই দ্বিতীয় ধাপটিকেই অভিমান বলে। এই সর্বনাশা "অভিমান" শব্দটি আমাদের মানস মানচিত্রটিকে হিংস্র করে তুলেছে ক্রমশ। তাই এই গোস্বা নিবারণী পার্ক ছিলো সময়ের দাবী।

পুরো পার্কের চারদিক খোলা থাকবে। নানা চিন্তার মানুষ চারদিক থেকে এসে যাতে শান্তি সম্মিলনে যোগ দিতে পারে। মানুষ যে একপেশে চিন্তার বোঝা বয়ে বয়ে মানসিক সংকীর্ণতায় ভুগছে; সেখানে চিন্তার চারদিক খুলে দিয়ে সত্যিকার কসমোপলিটান নাগরিক হয়ে ওঠার সুযোগ প্রশস্ত করবে এই পার্ক। মেয়র বলেন, ‘এই পার্কে জলের আধার, মিউজিক সিস্টেম, বসার জন্য আলাদা জোন, শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, পুরোনো দিনের গান শোনার ব্যবস্থা, বড় স্ক্রিনে টিভি দেখার সুবিধা থাকবে।’

এ উদ্যোগ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, এ ধরণের রাগ কমানোর পার্ক দেশের প্রতিটি উপজেলাতেই প্রয়োজন। ক্ষমতার দম্ভের ক্রোধ প্রশমন ও ক্ষমতাহীনতার হতাশা জনিত রাগ কমানো; এ'দুটোই আজকের দিনে সবচেয়ে জরুরী। বিশেষ করে ছাত্র সংগঠনগুলোর যখন রেগে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের কলাপসিবল গেট ভাঙার ইচ্ছা হবে; তখন তারা গোস্বা নিবারণী পার্কে গিয়ে পনেরো মিনিট কাটিয়ে এসে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নিতে পারবে। আবার প্রতিবাদী ছাত্রদের প্রতিহত করতে প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য মনটা উদ্ধারকারী জাহাজ এমভি রুস্তমের মতো রাগী পালোয়ান হয়ে ওঠা মাত্র "গোস্বা নিবারণী পার্কে" গিয়ে পালোয়ানি প্রশমন করতে পারবে ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠন।

ফেসবুকে নানা কট্টর চিন্তার ঘৃণাজীবী মানুষদের পট করে রেগে গালি দেয়া বা ট্যাগিং করার যে স্টেরিওটাইপ আজকের মেট্রোপলিটানকে অজো-পাড়া গাঁর কাচারি বাড়ি বা শালিশকেন্দ্র করে তুলেছে; গোস্বা নিবারণী পার্ক সেই কলতলা কালচার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে মুক্ত করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজ বিজ্ঞানী।

গোস্বা নিবারণী পার্ক বিষয়ে এতো ইতিবাচক কথা বলার পরেও বিশেষজ্ঞরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়েছেন কেন! এ প্রশ্নে উত্তরে সবাই বলেছেন, আগে পার্কটা প্রতিষ্ঠিত হোক, মানুষ সেখানে হারানো দিনের গান শুনে রাগ কমাক; তারপর না হয় নাম প্রকাশ করা যাবে। এক্ষুণি উত্তপ্ত কড়াই সমাজে কোন ঝুঁকি নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

  • [প্রতিবেদনে উল্লেখিত ব্যক্তি, স্থান, কাল সহ সামগ্রিক বিষয় কাল্পনিক। জীবিত অথবা মৃত কারও সঙ্গে মিল পাওয়া কাকতাল, এসম্পর্কে সিলেটটুডে কোন দায় নেবে না]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত