ডা. জাহিদুর রহমান

১৫ মার্চ, ২০২০ ১২:২১

করোনাভাইরাস মোকাবেলা: একদিনের এই অভিজ্ঞতাকে মিথ্যা প্রমাণ করুন

ইতালিকে বলা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাসের নতুন এপিসেন্টার। গত ৩ দিনের দেশটিতে নতুন করে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৪৯৭, ২৫৪৭ এবং ২৬৫১ জন। এবং মৃত্যু সংখ্যা যথাক্রমে ১৭৫, ২৫০ এবং ১৮৯ জন। শুধুমাত্র ইতালি থেকেই কমপক্ষে ২৭টি দেশে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ইতালি থেকে গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বিভিন্ন ফ্লাইটে কমপক্ষে ৪০০ জন প্রবাসী বাংলাদেশে ফিরেছেন। এবং তাদের সবাইকে হোম কোয়ারাইন্টাইনের নির্দেশনা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, গত কয়েকদিন থেকেই সাংবাদিকরা হোম কোয়ারাইন্টাইনে থাকতে বলা মানুষদের রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে আবিষ্কার করছেন।

গতকাল দিনভর ইতালি ফেরত ১৪২ জন প্রবাসীকে কোয়ারাইন্টাইন করা নিয়ে যে রকম অদক্ষতা, আন্তরিকতার অভাব এবং বিশৃঙ্খলা দেখা গেল, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। দায়িত্বশীল পদে থাকা মানুষজন একটি বৈশ্বিক মহামারী সম্পর্কে কীভাবে এত উদাসীন হন? একজনের সাথে আরেকজনের কথাবার্তার বিন্দুমাত্র মিল নেই।

যারা সেনাবাহিনী নামিয়েও দেড়শ মানুষকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে কোয়ারাইন্টাইন করে রাখতে পারেন না, তারা কীভাবে হাজার হাজার মানুষের হোম কোয়ারাইন্টাইন তদারকি করবেন?

একজন হাসিমুখে বলে দিলেন, "ইতালি থেকে এতজন আসবে, সেটি আমরা ফেসবুকে শুনেছি। এক রাতের মধ্যে আয়োজন করার কারণে এই বিশৃঙ্খলা হয়েছে"। তাহলে প্রতিদিন যে বলা হয়, "আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত", সেটার অর্থ কী? একদিনের মধ্যে একটি বিষয়ে কতবার সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়? একদিন আগেই মানুষজনকে সেলফ কোয়ারাইন্টাইনে না থাকলে জেল জরিমানার ভয় দেখালেন, আবার সামান্য হট্টগোলেই নিজেদের অবস্থান থেকে সড়ে আসলেন?

দেড়শ মানুষের একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করতেও আপনাদের আরেক মন্ত্রণালয়ের কাছে হাত পাতা লাগে? এত কৃচ্ছ্বতা সাধনে অভ্যস্ত হলে আবজাল-রুবিনারা হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করে কীভাবে? মুখে বলছেন, "আরও ৫৪ জন প্রবাসীকে আশকনা নয়, গাজীপুর স্থানান্তর করা হবে, অথচ তখনই আপনার চোখের সামনে দিয়ে সেই ৫৪ জন আশকনা হাজী ক্যাম্পে প্রবেশ করল! ফেসবুকে জানিয়ে দিলেন, সবাইকে প্লেন থেকে কোয়ারাইন্টাইনের সব শর্ত মেনে নিয়ে আসা হয়েছে, অথচ টিভি রিপোর্টে দেখা গেল ১৪২ জনের মধ্যে বিজনেস ক্লাসের ২৫ জন যাত্রী এয়ারপোর্ট থেকেই হাওয়া হয়ে গিয়েছেন! এতদিন নিজেরাই ফেস মাস্ক পড়তে নিরুৎসাহিত করলেন, আবার আপনারাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফেস মাস্ক বানানোর ভিডিও বানালেন। হোম কোয়ারাইন্টাইন নিয়ে কবে ভিডিও বানাবেন?

সময় থাকতে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ হ্রাস করতে বর্তমানে যতজনকে হোম কোয়ারাইন্টাইনে রাখা হয়েছে, তাদের সবাইকে একটি বা কয়েকটি সরকারি স্থাপনায় বাধ্যতামূলক কোয়ারাইন্টাইন করুন। তাদের জন্য WHO এর গাইডলাইন অনুযায়ী সব ধরণের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করুন, যেগুলোর কোনটিই ব্যয়বহুল না।

সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্সসহ সব স্টাফদের জন্য পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুপমেন্ট সরবরাহ করুন, গাইডলাইন অনুযায়ী এটিপিক্যাল নিউমোনিয়ার রোগীদের নভেল করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করুন।

আমরা না হয় চুনোপুঁটি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন সিনিয়র অধ্যাপকের মতামতকেও আপনারা মূল্যায়ন করবেন না? অন্ধ হলেই কি প্রলয় বন্ধ থাকে? গতকালকের একটি ঘটনাতেই আপনারা কেমন "প্রস্তুত" সেটি আমাদের জানা হয়ে গিয়েছে। দয়া করে আমাদের ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করুন।
ডা. জাহিদুর রহমান: ভাইরোলজিস্ট, সহকারী অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত