মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা

২৮ মার্চ, ২০২০ ১৮:৩৬

করোনায় করো না প্রতারণা

বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও ভয়াবহ মানবিক সংকটে। মানুষের জীবনহানির শঙ্কার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে চারপাশে উৎকণ্ঠা,অনিশ্চয়তা। চিকিৎসার অনিশ্চয়তা ও অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থায় সামান্য এ কদিনেই জনজীবন বিপর্যস্ত। এরই মাঝে যখন আশা জাগানিয়া মানবিক খবরগুলো চোখে পড়ে তখন মনের অজান্তেই দেহের ও মনের জোর বৃদ্ধি পায়। মানবিকতার পরশে সকল অন্ধকার ভেদ করে আলো আসবেই এমন প্রত্যাশা দৃঢ় হয়। আমরা একটি আলোকিত ভোরের অপেক্ষা করছি।

মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখাটা এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু অমানবিক নেতিবাচক খবরের দাপটে ইতিবাচক মানবিক খবরগুলো দেহ ও মনকে প্রশান্ত রাখতে পারছে না। অথচ করোনাভাইরাস নামক হিংস্র এই ভাইরাসের থাবা থেকে রক্ষা পেতে মানুষের শারীরিক ও মানসিক শক্তি সবচেয়ে বেশি জরুরি। সম্প্রতি সরকার এই ভাইরাসকে সংক্রামক ব্যাধি ঘোষণা করে শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও মানুষের সচেতনতাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অঘোষিত লক ডাউনের মধ্য দিয়ে মানুষকে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক এসব কার্যক্রম যতটুকু মানবিক ও দায়িত্বশীল হওয়ার কথা হচ্ছে তার উল্টো। দুর্যোগকালীন সময়ে যেখানে মানুষকে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করার কথ সেখানে মানুষকে অপমান, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও নির্যাতন করা হচ্ছে। এখনই এর লাগাম টেনে ধরতে হবে। বাবার বয়সী একজন বয়স্ক মানুষকে যখন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রকাশ্যে অপমান করে আবার ছবি তুলে প্রদর্শন করে তখন লজ্জা আর অপমানে গোটা বাংলাদেশই যেন কানধরে আছে বলে অনুভব হয়। প্রকাশ্যে রাস্তায় তুচ্ছ কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানুষদের শুধু অপমান নয় অমানবিক নির্যাতন করছে। মানবিকতা আর সচেতনতা চর্চার নামে আমরা বর্বরতা দেখতে চাই না। ইজ্জত নিয়ে মরার মাঝে যে আত্মতৃপ্তি থাকে অসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার মাঝে সেই মর্যাদা থাকে না। কারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করাচ্ছে। মানবিক সংকটের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনযাপন খুবই কঠিন। নিম্ন আয়ের মানুষ পেটের তাগিদে স্বেচ্ছা বন্দিত্ব না মানলে এভাবে নির্যাতন করতে হবে এমন কোনো রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রশাসনের অতি উৎসাহী বিকারগ্রস্তদের তাণ্ডব বন্ধ করতে হবে। সরকারের মানবিক কর্মসূচিকে দানবীয় রূপদান থেকে বিরত থাকুন।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগি সন্দেহে ভাড়া বাড়ি থেকে অসুস্থ মানুষকে বের করে দেয়া, করোনায় মৃতদের কবরস্থানে যাতে দাফন না করা হয় তার জন্যও দাবি ওঠছে। গাড়ি চালকের চিকিৎসায় বাধা দিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা, করোনা রোগি বা মরদেহ বহনের অভিযোগে ট্রলারে হামলা করা,সচেতনতার জন্য পুলিশ গেলে সম্মিলিতভাবে পুলিশের উপর হামলা, খেটে খাওয়া মানুষকে অপমান করা, সাধারণ মানুষকে কান ধরে উঠবস করানোর ছবি, ভিডিও। এগুলো কোনক্রমেই দুর্যোগকালীন মানবিকতা প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম হতে পারে না। অবশ্য সুখের বিষয় আইজিপি মহোদয় দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিনয়ী, সহিষ্ণু ও পেশাদার আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও শারীরিক দূরত্ব সম্পর্কে মানুষ এখন সচেতন হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কেও মানুষ ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। দয়া করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কে এখন আর মানুষকে শায়েস্তা করতে ব্যস্ত না রেখে বাজার ব্যবস্থা মনিটরিংয়ের কাজে ব্যবহার করুন।নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। একই বাজারে একেক দোকান একেক রকম দাম নির্ধারণ করছে। বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে যতবেশি প্রশাসন তৎপর হবে ততবেশি জনগণ উপকৃত হবে। করোনার প্রভাব বাংলাদেশের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সপ্তাহ,দুই সপ্তাহ পর মারাত্মক আকার ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনিক সেবা,স্বাস্থ্যসেবা,বাজার নিয়ন্ত্রণসহ মানুষের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ না করলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বাংলাদেশ।

আশার কথা সরকারি উদ্যোগ সমন্বিতভাবে কাজ করতে শুরু করেছে। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষদের মধ্যে চাল,ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। নভেল করোনা টেস্টিং কিট, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় পিপিইর ব্যবস্থা হয়েছে। কোভিড-১৯ টেস্ট করার জন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে ল্যাব চালু হচ্ছে। ঢাকায় টেস্টিং ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।চিকিৎসকদের আস্থার সংকট দূর হচ্ছে। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে মানবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী আকিজ গ্রুপ কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসায় তেজগাঁওয়ে ৩০১ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু করছে। দু সপ্তাহের মধ্যেই তারা রোগিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে সক্ষম হবে।

আমরা এসব আশা জাগানিয়া খবরগুলোই দেখতে চাই।সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই জনসন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী দুর্যোগকালীন সময়ে মনুষ্যত্বের পরিচয় দিতে হবে। মানবিকতার আলোয় আলোকিত হোক চারপাশ।কেটে যাক অন্ধকার। জাগ্রত হোক শুভবোধ। বিকশিত হোক মূল্যবোধ।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত