শ্রীপদ দাস

০৫ মে, ২০২০ ২১:৫৮

ডিজিটাল মগজধোলাই

কাউকে বার বার বোঝাতে বোঝাতে কোন কিছুতে সত্য হিসেবে বিশ্বাস করানোকে বলে ব্রেনওয়াশ বা মগজধোলাই। মূলত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য এই ব্রেনওয়াশ করা হয়। এই ব্রেনওয়াশ করা মানুষগুলোকে দিয়েই মূলত স্লিপার সেল গঠন করা হয়।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওইদিন সকাল সাড়ে বেলা ১১টা থেকে ১১:৩০ এর মধ্যে মধ্যে দেশের ৬৩ জেলার প্রেসক্লাব, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ঢাকার ৩৪টিসহ সাড়ে ৪শ’ স্পটে প্রায় ৫শ’ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। পরবর্তীতে এই দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এই ঘটনার পর ধারণা করা হতো মাদ্রাসা পড়ুয়া অসহায়, গরীব ছেলেদেরকেই শুধু ব্রেনওয়াশ করে জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত করা হয়। তারেক মাসুদের 'রানওয়ে' চলচ্চিত্রে এরকমই এক গল্প আমরা দেখতে পাই।

পরবর্তীতে ১ জুলাই ২০১৬ সালে ঘটা গুলশানের হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডি জঙ্গি চরিত্রের ধারণা পাল্টে দেয় সকলের। এখানে দেখা যায় যারা এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটায় তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া!

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আইএস বধূ শামীমা যৌনদাসী হিসেবে আইএসে কাজ করে ফিরে এসে পুনরায় ব্রিটেনে থাকার জন্য মামলা করে এবং সে মামলায় হেরে যায়। এরপর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও জানান তাকে বাংলাদেশেও জায়গা দেয়া হবে না। এতকিছুর পরো শামীমা জানায় সে তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত নয়!

২৫ মার্চ ২০২০ আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে শিখদের উপসনালয় গুরুদুয়ারা হার রাই সাহিবে আইএসের নৃশংস আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ২৫ জন প্রাণ হারান। এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ তানভীর নামের আরেক বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে আফগানিস্তানের গোয়েন্দারা।

প্রশ্ন হলো- এই বাংলাদেশি ছেলেমেয়েদের এরা কীভাবে খুঁজে পায়? কীভাবেই বা তাদের ব্রেনওয়াশ করে? উত্তর খুঁজতে গেলে অনলাইন প্লাটফর্মকেই যথাযোগ্য মনে হয়।

এই অনলাইন প্লাটফর্ম বর্তমানে খুব সহজ মাধ্যম যোগাযোগের ক্ষেত্রে। শুধু জঙ্গি কার্যক্রম নয়, অন্য যেকোন রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও অনলাইন প্লাটফর্ম বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আমাদের দেশের বর্তমান রাজনীতি একটু গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামি দলগুলোকে ভয় পায়। এজন্য তারা ইসলামি দল এবং তাদের নেতাদের কৌশলে বিভিন্নভাবে খুশি রাখে।

বিজ্ঞাপন

মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশে ধর্ম খুব সেনসেটিভ একটা জায়গা। এই জায়গায় মানুষের দুর্বলতা খুব বেশি কাজ করে। এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে একটা গোষ্ঠী সরকারের বিরোধিতা করে। তারা বিভিন্ন ধরনের ফেইক নিউজ দিয়ে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করে। বিভ্রান্ত শব্দটা না বলে যদি বলি ব্রেনওয়াশ করে, তবেও কথাটা মিথ্যে হবে না। এর উদাহরণ হিসেবে দেখতে চাইলে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়মিত ব্যবহার করে এরকম সাধারণ যেকারো সাথে কথা বললেই তা বুঝা যাবে। আপনি হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার পছন্দের ভালো পেজ, গ্রুপ বা ভিডিও চ্যানেল সাবসক্রাইব করেন, তাই এসব বিভ্রান্তিকর পেজ, গ্রুপ বা ভিডিও চ্যানেল সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই। সম্পূর্ণ নতুন একটি আইডি থেকে এসব বিভ্রান্তিকর পেজ, গ্রুপ বা ভিডিও চ্যানেল সাবসক্রাইব করে এক সপ্তাহ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলেই বুঝা যাবে আসল রহস্য। একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব বিভ্রান্তিকর পেজ, গ্রুপ বা ভিডিও চ্যানেলের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফেইক নিউজ ধরা সম্ভব নয়। এমনকি শিক্ষিত প্রবীণ অনেকের ক্ষেত্রেও এই ভুল করতে দেখা যায়।

এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফেইক নিউজ আর বিভ্রান্তিকর লেখার মধ্যমে যে ডিজিটাল ব্রেনওয়াশ করা হয়, এর ভবিষ্যৎ কী? এর মাধ্যমে কী কী হতে পারে সেটা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। এসব ফেইক নিউজ নিয়ে বর্তমানে পুরা বিশ্বই চিন্তিত। এর ফায়দা নিয়ে কোন অশুভ শক্তি যাতে জয় লাভ করতে না পারে সেজন্য আমাদের এখনি সচেতন হওয়া দরকার।

শ্রীপদ দাস: প্যারিস, ফ্রান্স

আপনার মন্তব্য

আলোচিত