সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৯:৩২

দায় স্বীকার: নিজের বক্তব্য থেকে সরে গেলেন খন্দকার মাহবুব

যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকারমূলক বক্তব্য থেকে এবার সরে গিয়ে অস্বীকার করছেন তার আইনজীবি খন্দকার মাহবুব হোসেন।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান। এর আগে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনেও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন নিজামীর আইনজীবী এস এম শাহজাহান।

শুনানিতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ স্বীকার করে তাকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমানোর আবেদন করেছিলেন নিজামীর প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান।

এরপর এর্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, একাত্তর মুক্তিযুদ্ধের সময় করা মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন স্বীকার করেন নি আর কোন যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধের মামলায় এটাই প্রথম।

দিনের শুনানি শেষে মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের আরও বলেন, “উনারা (আসামিপক্ষ) যে সাবমিশন করেছেন, আমি যা বুঝেছি, তাতে আমার মনে হল, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তাদের শীর্ষ আইনজীবীরা এই প্রথম তাদের অভিযুক্ত একজন নেতা যে অপরাধী, তা তারা স্বীকার করে নিলেন এবং স্বীকার করে নিয়ে শুধু মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আবেদন করলেন।”

খন্দকার মাহবুবদের এমন স্বীকারোক্তি লঘু দণ্ড প্রার্থনার পর নানামূখি আলোচনার পর বিকেলে নিজেদের দেওয়া বক্তব্য থেকে সরে আসেন যুদ্ধাপরাধী নিজামীর এ আইনজীবি। অপরাধ প্রমাণিত হলে বয়স বিবেচনায় মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমানোর আবেদন করলেও শুনানিতে অপরাধ স্বীকার করেননি বলে দাবি করেছেন তিনি।

বুধবার আপিল শুনানির নবম দিনে নিজামীর আইনজীবীরা তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল আগামী ৭ ডিসেম্বর আদালতের সামনে যুক্তি তুলে ধরবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব বলেন, “অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেবের যে বক্তব্য আমি টিভিতে শুনলাম, তা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং ফৌজদারী আইন সম্পর্কে অজ্ঞতাপূর্ণ।”

নিজামীর আইনজীবীর দাবি, আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করেছে তাতে জামায়াত আমিরের অপরাধ ‘প্রমাণিত হয় না’।

“শেষ প্রান্তে বলেছি, অনেকগুলো অভিযোগের কোনোটিতে যদি মনে হয়, অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে, সেক্ষেত্রেও আসামির বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে তিনি লঘু দণ্ড পাওয়ার যোগ্য।”

জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামী একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আল বদর বাহিনীর প্রধান।

বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গতবছর ২৯ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।

দিনের শুনানির পর অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, “জামায়াতের মামলার ব্যাপারে… আসামিপক্ষের আইনজীবীদের থেকে দোষ স্বীকার করে নেওয়ার ব্যাপারে এ ধরনের স্পষ্ট বক্তব্য আমি এই প্রথম দেখলাম।”

তবে তা অস্বীকার করে খন্দকার মাহবুব বলেন, “প্রশ্নই আসে না। তাহলে মামলা করলাম কী করে?”

৭২ বছর বয়সী নিজামী চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলারও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ২০০১-২০০৬ সালের বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের সময় বাংলাদেশের মন্ত্রী ছিলেন তিনি।

২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় গ্রেপ্তারের পর ওই বছরের ২ অগাস্ট নিজামীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত