সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ জুন, ২০১৬ ১২:৩৮

হবিগঞ্জের রাজাকার মহিবুরের মৃত্যুদণ্ড, অপর দুই ভাইয়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের রাজাকার মহিবুর রহমান বড় মিয়ার বিরুদ্ধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এছাড়া অপর দুই রাজাকার মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে  আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১ জুন) মানবতা বিরোধী অপরাধে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল এই রায় দেন। প্রথম অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এই এই শাস্তি দেয়া হয়। অন্যান্য অভিযোগে বিভিন্ন মেয়েয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।

রায়ে বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা চার অভিযোগের সবগুলোই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

এর মধ্যে প্রথম অভিযোগে হত্যার দায়ে মুহিবুরকে মৃত্যুদণ্ড ও তার দুই ভাইকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন অভিযোগে আসামিদের প্রত্যেকের ৩৭ বছর করে সাজার আদেশ দিয়েছে আদালত।

রায়ে বলা হয়েছে, সরকার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা গুলি করে মুহিবুর রহমানের দণ্ড কার্যকর করতে পারবে।

তিন আসামি বানিয়াচং উপজেলার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া এবং আব্দুর রাজ্জাক রায়ের সময় কাঠগড়াতেই উপস্থিত ছিলেন।

তারা তিনজনই একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।

সে সময় হবিগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে তারা যেসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটান, তা এ মামলার বিচারে উঠে এসেছে।

২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই তিনজনসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করেন। পরে মামলাটি ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের এক আবেদনে গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-২ (বর্তমানে কেবল ট্রাইব্যুনাল-১ চলমান, এবং সব মামলা একটি ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর) দুই সহোদরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর ওইদিন রাতেই বানিয়াচং থেকে তাদের গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

অন্যদিকে ১৭ মে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দুই দিন পর ১৯ মে মহিবুর-মুজিবুরের চাচাতো ভাই রাজ্জাককে মৌলভীবাজারের আথানগিরি পাহাড় থেকে গ্রেফতার করা হয়। একইদিন ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে আসামি করে অভিযোগপত্রও দেয় প্রসিকিউশন।

গতবছর ২৯ সেপ্টেম্বর যুদ্ধাপরাধের চার ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে এই তিন ভাইয়ের বিচার শুরু করে আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২১ অক্টোবর।


চার অভিযোগ
অভিযোগ ১: বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে লাশ গুম করে আসামিরা।

অভিযোগ ২: আসামিরা পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেজর জেনারেল এমএ রবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে।

অভিযোগ ৩: একই দিন খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় আসামিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করে। পরে আল্লাত মিয়ার বোন বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

অভিযোগ ৪: একাত্তর সালের ভাদ্র মাসের যে কোনো একদিন আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালায় আসামিরা। ওই নির্যাতনে পঙ্গু হন আনছার আলী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত