নিজস্ব প্রতিবেদক

০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৫:০৮

‘গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির’ দাবিতে ডোমারে যুদ্ধদলিলের প্রচারণা

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।

যুদ্ধদলিল ডটকম নামের এক ওয়েবসাইটের উদ্যোগে এ সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়।

সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবায় চালিত যুদ্ধদলিল প্রকল্পের সদস্যগণ দেশব্যাপী এই সাইনবোর্ড স্থাপন করে যাচ্ছে।

'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র থেকে বলছি'-এর প্রকল্প পরিচালক মো. নাজমুল হাসান বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ লোককে পাকিস্তান নির্বিচারে হত্যা করলেও এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অদ্যাবধি মেলেনি। আমাদের যুদ্ধদলিল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমরা অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রচারের পাশাপাশি অফলাইনে দেশের উপজেলা পর্যায়েও গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের প্রচারণা চালাচ্ছি।

নীলফামারীতে সাইনবোর্ড স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একাত্তরে সৈয়দপুরে গণহত্যা হয়েছিল। ডোমারে এসেছিল জেনারেল নিয়াজী। দিয়েছিল বক্তৃতা। বলেছিল, রাজাকাররা পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষার জন্য মূল্যবান প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রত্যেক মুসলমান ইসলাম ও তার মাতৃভূমির জন্য একজন নিবেদিত মুজাহিদ। আমরা সেই এলাকায় সাইনবোর্ড স্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধের সেই ইতিহাসকে সামনে আনার চেষ্টা করেছি।

গণহত্যার দলিলপত্রে মুদ্রিত সুরাইয়া বেগমের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, "পাক বাহিনী যখন আমার বাসায় আসে, তখন আমার স্বামীর গলায় পবিত্র কোরান শরীফ ঝোলানো। বাচ্চা কোলে। কোরান শরীফ ছুঁড়ে ফেলে তারা বললো, কেয়া তুম জয় বাংলা বোলতা? তোম আওয়ামী লীগকে সাথ হ্যায়?

এই বলে তারা আমার স্বামী, তার ভাই, ভাগ্নে ও বাসার মালী রুহুল আমীনকে ধরে নিয়ে যায়। ছোট মেয়েটি তখন তার আব্বুর গায়ের সাথে মিশে ছিল। নামতে চায় না। কিছুতেই সে তার আব্বুকে ছাড়বে না। আমি তাকে জোর করে নামালাম তার আব্বুর কোল থেকে।

সুরাইয়া বেগম আরও বলেন, বাসা থেকে ওদেরকে নিয়ে বেরুবার পাঁচ মিনিট পর আমি কয়েকটা গুলির শব্দ শুনেছি। হয়তো এই গুলিতে ওদের সবাইকে এক সাথে হত্যা করা হলো।

হানাদার সৈন্য বাহিনী পরদিন আমাদের সৈয়দপুর টেকনিক্যাল স্কুলে নিয়ে গেলো। সেখানে শুধু মহিলা আর মহিলা। কমপক্ষে ৬০০ থেকে ৭০০। সবাই এক একটি সকরুন কাহিনীর প্রতিকৃতি, জীবন্ত সাক্ষী..."

নীলফামারী জেলার ডোমারের বোড়াগাড়ি সেতু, মোটুকপুর উচ্চ বিদ্যালয়, উপজেলা পরিষদ ভবন, ডোমার সরকারি কলেজ মাঠ, আন্ধারুর মোড়, ডোমার বহুমুখী স্কুল গেইট, উপজেলা পরিষদ ভবন, কলেজ পাড়া, বিএম কলেজ মোড়, বোড়াগাড়ির ১০টি স্থানে এই সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত