সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ মার্চ, ২০২১ ০০:১৬

কবরে লুকিয়েও আত্মরক্ষা করতে পারবেন না: প্রধানমন্ত্রীকে জাফরউল্লাহ

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুকরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে কর্মসূচিতে এসে এ কথা বলেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। জাতির পিতার উক্তিটি উল্লেখ তিনি বলেন, ‘আপনাকে আপনার পিতার বাণীটাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আর দাবায়া রাখতে পারবা না।’

কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে হত্যা দাবি করে এর বিচার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বুধবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশ শেষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করা হয়। এটি রাজধানীর শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এলে আটকে দেয় পুলিশ।

সেখানে জাফরউল্লাহ বলেন, ‘২৬ মার্চের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না করলে সকল ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাবে নাগরিক সমাজ।’

তিনি বলেন, ‘চারদিকে তাকিয়ে দেখেন, ক্রমেই আস্তে আস্তে জনগণ জাগছে। আজকে মোশতাক আত্মদান করেছেন। আর এতে বিচারপতির মনে একটু সাহস সঞ্চার হয়েছে। তিনি আজকে কিশোরকে বেইল দিয়েছেন। আমি খুব খুশি হয়েছি। ওনার বিবেকে নাড়া লেগেছে। ওনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরের জামিনের বিষয়ে বিচারকের রায়কে অসম্পূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওনার এই রায় পরিপূর্ণ নয়। যারা সংবিধান ভঙ্গ করেছেন সেই র‌্যাব পুলিশ সরকারের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করার নির্দেশ দেননি। এটা ওনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিশোরের মুক্তিতে আমি আনন্দিত হতে পারছি না। তার পায়ে ঘা হয়েছে। সেটা কেটে ফেলা লাগতে পারে। মোশতাক মারা যাওয়ার আগে বলে গেছিলো আমাকে নয় কিশোরের ব্যবস্থা করুন।’

প্রধানমন্ত্রীকে লুকোচুরি করছেন অভিযোগ করে জাফরুউল্লাহ, ‘লুকোচুরি বন্ধ করুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনার পিতা কোনো সময়ে সত্যের সঙ্গে দাঁড়াতে ভয় পাননি। কোনো লুকোচুরি নয়, এটাকে বাতিল করে দিতে হবে। তা না হলে আপনারা জীবিত অবস্থায় কবরে লুকিয়েও আত্মরক্ষা করতে পারবেন না।’

আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমার কথা আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। যদি আপনি আমার কথায় মনক্ষুন্ন হয়েছেন তবে আপনার পিতার মতো সাহস থাকলে আমার নামে একটা মানহানীর মামলা করে দেন। তবে পাঁচ হাজার টাকা কোর্ট ফি দিতে ভুলবেন না।’

পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি আপনারা কত লক্ষ টাকা দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেছেন। কিন্তু আজ আমাদের কারো হাতে ইটা নাই, পাথর নাই, লাঠি নাই। আমরা নিরস্ত্র, আমরা সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতে চাই। আপনারা আমাদের নিরাপত্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছে দেবেন। কারণ, আপনার বেতন আসে আমাদের টাকায়।’

নাগরিক সমাবেশে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বক্তব্য দেয়ার কথা থাকলেও তাঁরা উপস্থিত হতে পারেননি। তাদের দেওয়া একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়।

কামাল হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সরকারের অত্যাচার ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। এই কালো আইনিটির অপব্যবহারের চরম বহিঃপ্রকাশ লেখক মুশতাকের মৃত্যু।’

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘এই সরকারের শক্তি আছে, অনেক ক্ষমতা আছে। তাদের হাতে পুলিশ বাহিনী আছে, তাদের হাতে আমলারা আছে। এত কিছু থেকেও লাভ নেই। এর চেয়ে বড় শক্তি হল তারা তার চেয়েও নির্লজ্জ। কেউ হাঁচি দিলেও তারা থামাতে চায়।’

তিনি বলে, ‘এভাবে এই সরকারকে লজ্জা দেয়া যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে এখন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই নিপীড়ক সরকার আছে বলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আছে। এটি বাতিলের দাবিতে প্রকাশ্যে সবাইকে রাস্তায় নামা ছাড়া উপায় নেই।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এই সরকারের কিসের এত ভয়? ভাবমূর্তির ভয়? ভোটারবিহীন নির্বাচন করে, তখন ভাবমূর্তি কোথায় থাকে?’

তিনি বলেন, ‘এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী। সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করতে হলে এই আইন বাতিল করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য ডিজিটাল বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নতুন আইন করতে হবে।’

নাগরিক সমাজের সভা ও পদযাত্রায় অংশ নেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমগীতের সংগঠক বিথী ঘোষ, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি হয়ে জামিনে মুক্ত রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল আলম ভূঁইয়া, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতারা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত