সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ মার্চ, ২০২১ ১১:৪৪

শিশুর ১০ বছরের বেশি সাজা নয় : হাই কোর্ট

শিশুর অপরাধ যাই হোক না কেন তাকে ১০ বছরের বেশি সাজা দেওয়া যাবে না বলে এক রায়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাই কোর্ট। বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দস ও বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন সমন্বয়ে হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে দেওয়া রায়ে এমন সিদ্ধান্ত আসে।

২০১৯ সালের ২৮ আগস্টে দেওয়া সে রায়ের ৬৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। ‘মো. আনিস মিয়া বনাম রাষ্ট্র’ নামের এ মামলায় আইনজীবী ছিলেন এস এম শাহজাহান ও আবু হানিফ।

একটি হত্যা মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও ১৯৭৪ সালের শিশু আইনে ২০১১ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এবং শিশু আদালতের রায়ে এক শিশুকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়। অন্য কয়েকজন আসামিকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে শিশুটির পক্ষে হাই কোর্টে আপিল করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশের অনুমোদনের আবেদন) ও শিশুটির আপিল হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

মামলায় দেখা যায় যে, ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া শিশুটির স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায়। তখন এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের যৌক্তিকতা এবং শিশু আদালতের এখতিয়ারসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনগত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন। তিন সদস্যের বেঞ্চের রায়ে আনিসের সাজা বাতিল করা হয়।

আদালতে মো. আনিস মিয়ার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এস এম শাহজাহান ও মো. আবু হানিফ। এ মামলায় এমিকাস কিউরি হিসেবে আদালতে মতামত দিয়েছিলেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এম আই ফারুকী ও শাহদীন মালিক।

রায়ে বলা হয়, শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ কিশোর বিচার ব্যবস্থার ধারণার পরিপন্থী। নিউরোসায়েন্স এবং মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা অনুযায়ী শিশুরা তাদের কর্মকাণ্ডের পরিণতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন নয়। শিশুরা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। শিশুরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পরিণতি সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখে না বলে রায়ে বলা হয়। বস্তুত মস্তিষ্কের যে অংশ আবেগ ও যৌক্তিকতা নিয়ন্ত্রণ করে, শিশু অবস্থায় মস্তিষ্কের সে অংশ পরিপক্ব হয় না।

রায়ে বলা হয়, কিশোরের বিচার (জুভেনাইল জাস্টিস) ব্যবস্থায় কোনো শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সাক্ষ্য মূল্য নেই। আর এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিকে সাজা দেওয়ার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, স্পর্শকাতর মামলায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংঘাতে জড়ানো শিশুর মা-বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তার আর মানসিক ভারসাম্য থাকে না। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে তারা অপরাধের দায় নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নেয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়ার প্রলোভনে শিশু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়ে যায়। আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুর বিচারের এখতিয়ার শিশু আদালতের।

রায়ে বলা হয়, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল কোনোভাবে শিশু আদালতের এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারে না। অভিযুক্ত শিশুর অপরাধ যাই হোক না কেন তাকে ১০ বছরের বেশি সাজা দেওয়া যাবে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত