সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ মে, ২০২৩ ২২:২৫

যারা ভোট ডাকাতি করেছিল তারা এখন ভোটের অধিকারের কথা বলে: প্রধানমন্ত্রী

ছবি: ফোকাস বাংলা

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা ভোট ডাকাতি করেছিল তারাই এখন ভোটের অধিকারের কথা বলে। যাদের জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে, তাদের কাছ থেকে শুনতে হয় এসব কথা! মাঠের কথা মাঠে থাকবে, আমরা জনতার সঙ্গে থাকব। জনতার পাশে থাকব। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করব, জনগণের জন্য কাজ করব।’

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের এই দিন দেশে ফিরে আসেন।

জনগণের আস্থাই আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে তাদের ভোটের মাধ্যমেই তো আমরা সরকারে এসেছি। তাদের বিশ্বাস-আস্থাটাই আমাদের একমাত্র শক্তি। আর কোনো শক্তি নেই। বাংলাদেশের জনগণই আওয়ামী লীগের একমাত্র বন্ধু।’

আওয়ামী লীগ দেশের নির্বাচনী পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা এনেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্র নিয়ে অনেকে কথা বলে, ভোটের অধিকার নিয়ে কথা বলে। ’৭৫ সালের পর থেকে ভোট চুরি, ভোট কারচুপি, ভোট নিয়ে খেলা, মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা। আওয়ামী লীগেরই নানা পদক্ষেপের ফলে আজ বিভিন্ন সংস্কার করে নির্বাচন পদ্ধতিটাকে গণমুখী করা হয়েছে, ভোট সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এই স্লোগান দিয়ে, মানুষকে যে ভোট সম্পর্কে সচেতন করা, এটা তো আওয়ামী লীগই করেছে। এটা তো আর কারও না। তারপর নির্বাচন কমিশন করার জন্য আইন করে দেয়া হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে ভুয়া ভোট দিয়ে ভোটার তালিকা হতো, সেখানে ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, নির্বাচনী পদ্ধতিকে যতটুকু সংস্কার করে নিয়ে আসা বা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন, এগুলো তো আওয়ামী লীগেরই করে দেয়া। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স সবই করে দিয়েছি আমরা। তার পরও কেউ আমাদের ছবক দিতে আসে গণতন্ত্রের, নির্বাচনের।’

বাংলাদেশের অর্জনসমূহ নস্যাৎ করতে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে যেন আমাদের অর্জনগুলো নস্যাৎ হয়।’

জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগই একমাত্র দল বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে, বাকিরা লুটেরার দল। তারা এদেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে না। সে কথা মাথায় রেখে ওই সন্ত্রাসের দল, খুনির দল, ওই যুদ্ধাপরাধীদের দল- যেন আর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেদিকে সবাইকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানাই।’

দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করার নির্দেশনা দিয়ে নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়নের গতি যাতে ত্বরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন, জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবে, এটিই আমাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা। কাজেই জাতির পিতার যে স্বপ্ন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি, জাতির পিতার সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা পুনরুল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে শুধু উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ না, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে সেটাও আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘সততা থাকলে পরে, আর উদ্দেশ্যটা যদি সৎ হয়, তাহলে যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্য আনা যায়। এই কথাটা সবসময় মনে রাখি। লক্ষ্য একটাই, দেশের মানুষের জীবনটা উন্নত করে দেওয়া। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেওয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। সেই হাসি ফোটানো একমাত্র কর্তব্য। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।’

টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, এটাকে ধরে রেখে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে চলতে হবে। ধন-সম্পদ কারো চিরদিন থাকে না। আর মরলেও মাটির নিচে কেউ কিছু সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু বেশি করলে বদনামটা নিয়ে যেতে হয়।’

মানুষের কল্যাণে কাজ করার তৃপ্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ যখন একজন ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর দিই, তাদের মুখের হাসি আর চোখের পানি যখন একাকার হয়ে যায়, আমি মনে করি এর চেয়ে বড় পাওয়া এবং সার্থকতা আর কিছু নেই।’

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার দিনের কথা স্মৃতিচারণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এ সময় তাকে আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেদিন ফিরে এসেছিলাম, পেয়েছিলাম এদেশের জনগণকে আর আমার আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে। সেদিন থেকে আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের জনগণ, তারাই তো আমার পরিবার।’

গণভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত