৩১ মে, ২০২৩ ২১:৫৫
ছবি: সংগৃহীত
নরসিংদীতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবীর খোকনের বাসভবনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার (৩১ মে) বিকেল ৫টার দিকে সদর উপজেলার চিনিশপুরে খায়রুল কবীর খোকনের বাসভবনে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বাড়িটি নরসিংদী জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান আনসারী আগুনের ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, আজ বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ওই বাড়িতে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে একদল দুর্বৃত্ত। তারা ভেতরে ঢোকার পর সবগুলো কক্ষের জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। পরে সবগুলো কক্ষেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভায়।
নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. রায়হান বলেন, ‘বিকেল পাঁচটার দিকে দুর্বৃত্তরা ওই ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর পেয়ে ৫টা ২০ মিনিটে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ১০ মিনিট চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পাঁচটা ৪০ মিনিটে অগ্নিনির্বাপণ কাজ শেষ করে আমরা ফিরে আসি।’
পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের ধারণা, জেলা ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় গুলিতে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
নরসিংদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুনুর রশীদ জানান, কে বা কারা এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মিছিলে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে এই অগ্নিকাণ্ড কি না, তা তদন্ত শেষে বলা যাবে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা শহরের জেলখানা মোড়ে দুর্বৃত্তের হামলায় জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাদিকুর রহমান ও তার কর্মী আশরাফুল হক গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ছাদিকুরের মৃত্যু হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে মারা যান আশরাফুল।
গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২৬ জানুয়ারি পদবঞ্চিত নেতাদের ২০-২৫ জন সমর্থক জেলা বিএনপির ওই বাড়িতে বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার, ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেন। ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের জানালা ও সিঁড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন। ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ওই স্থানেই খায়রুল কবিরের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তারা।
ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন পদবঞ্চিতরা। ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবপুরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে খায়রুল কবিরের গাড়িবহরে গুলি ও ককটেল হামলার ঘটনাও ঘটে। ৫ এপ্রিল কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। সর্বশেষ ২০ মে আবার ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের কাচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপরই গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পদবঞ্চিত নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় দুর্বৃত্তের গুলিতে দুজন নিহত হন।
আপনার মন্তব্য